চিন্তিত বিএনপি-জামায়াত জোট

0

bnp-jamat550-e1407701085931ওয়ান নিউজ বিডি ডেস্ক  : ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার ‘প্রদর্শনীতে’ চিন্তিত বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।

নির্বাচনি প্রচারকালে সারাদেশের নেতা-কর্মীদের একটি বড়ো অংশ প্রচারণায় অংশ নিলেও ভোটের দিনে মাঠে টিকতে না পারাটা ছিল কল্পনার বাইরে। এই সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে ভবিষ্যতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে কতটা সফল হওয়া যাবে তা ভাবিয়ে তুলেছে।

নির্বাচনে নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার প্রদর্শনীর বাইরে অবশ্য রাজনৈতিক লাভ দেখছেন বিএনপির নেতারা। তারা বলছেন, এ নির্বাচনের ফলে নিজেদের প্রধান দাবি নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি ‘পাকাপোক্ত’ হয়েছে। ভোটকেন্দ্র দখল, জালভোট, বিএনপির ভোট বর্জনের পরও তিন সিটিতেই বিএনপি-সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ভোট পেয়েছেন।

বিএনপিনেতারা মনে করছেন, সাহস করে ভোটের মাঠে টিকে থাকলে তাদেরই জয় হতো। যেমনটা হয়েছে অতীতের ৫ সিটি করপোরেশনে।

বিএনপির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিগত সোয়া ছয় বছর আওয়ামী লীগ এবং এর আগের দুবছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কারণে এমনিতেই নানা মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত বিএনপি। এর সঙ্গে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে এবং গত ৯২ দিনের অবরোধ-হরতাল সফল করতে গিয়ে হামলা-মামলায় এলাকাছাড়া বিএনপিকর্মীরা। নির্বাচনে এদের অংশগ্রহণ উল্লেখযোগ্য থাকলেও ভোটগ্রহণের দিনে তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ঢাকাতে এমনিতেই পাড়া-মহল্লায় বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের চিহ্নিত করে অভিযান চালানো হয়েছে। নির্বাচনের কারণে এ ক্ষেত্রে কিছুটা শিথিলতা থাকলেও তার সুযোগ পুরোপুরি নিতে পারেনি বিএনপি-জামায়াত। ভোটের প্রচারকালে বেশকজন কাউন্সিলর প্রার্থী ও নেতা-কর্মী গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটলেও জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মী এ সময় গ্রেপ্তার হয়নি।

সিটি নির্বাচনে জামায়াতের কাছ থেকে যেমনটা সহযোগিতা আশা করছিল বিএনপি তাও পাওয়া যায়নি। এছাড়া জোটভুক্ত অন্য দলগুলোর রাজপথে কোনো অবস্থান নেই বললেই চলে।

ফলে নির্বাচনে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থার উন্মক্ত প্রদর্শনীর সঙ্গে জোটসঙ্গীদের শক্তিহীনতারও একটি প্রদর্শনী হয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক নেতা বলেছেন, ভোটের আগে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভোটকেন্দ্রে পাহারা বসাতে এবং গণনা শেষে ফলাফল বুঝে নিয়ে কেন্দ্র ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

কিন্তু ভোটের দিনে অধিকাংশ কেন্দ্রেই বিএনপি-জামায়াতের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা-কর্মীরা যাননি। ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার চেয়ে তারা নিজেদের পীঠ বাঁচাতেই ব্যস্ত ছিলেন। ভোটের দিনে দুপুর নাগাদ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরেই নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ায় বিএনপি।

নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে দলের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, দুপুর নাগাদ ভোট বর্জন না করে আরও কিছুটা সময় পরে বিকাল ৩টার দিকে ভোট বর্জন করলে ভালো হতো। তাতে আরও কিছুসংখ্যক ভোটার ভোটকেন্দ্রে যেতে পারতো।

নির্বাচনে প্রাপ্ত ভোটের বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছেন না বিএনপির নেতারাও। তারা মনে করেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তিন সিটিতেই তারা জয়ী হতেন কিন্তু যে পরিমাণ ভোট তারা পেয়েছেন বলে দেখানো হচ্ছে তা সঠিক নয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহাবুবুর রহমান বলেছেন, বিএনপির যে বিপুল জনসমর্থন আছে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তা অবশ্যই প্রমাণিত হতো। আর এ কারণে বর্জনের পরও এত বেশিসংখ্যক ভোট আমরা পেয়েছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আগের ৫ সিটি করপোরেশনের মতো এ তিন সিটি করপোরেশনেও আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হতো।

বিএনপি-জামায়াতের টানা আন্দোলনের মধ্যে তিন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন ঘোষণা করে সরকার। যাতে প্রথমে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার কথা বললেও পরে আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি-জামায়াত। নির্বাচনে ফলাফল যা-ই হোক তা জোটের জন্য ভালো হবে এমন এক ধারণা থেকেই নির্বাচনে অংশ নেয় তারা।

নির্বাচনে এ উদ্দেশ্য সফল হয়েছে বলেই মনে করে বিএনপি। মাহাবুবুর রহমান বলেন, নির্বাচনে আমরা হারিনি। সরকার যে কাজ করেছে তার জন্য সবাই তাদের নিন্দা করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আমাদের জয় হতো।

ভোটগ্রহণের দিনে বিএনপি-জামায়াত জোটকর্মীদের পলায়নপর মানসিকতা হতাশ করেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। দলীয় নেত্রীর নির্দেশনা মেনে সবাই ভোটকেন্দ্রে গেলে নির্বাচনের ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো। মূলত বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের অনুপস্থিতিতে সরকার একতরফাভাবে ভোট সম্পন্ন করেছে। বিএনপির নেতারা মনে করেন, এতে তাদের কর্মীরা মাঠে গিয়ে নিগৃহীত হলে এর ভিন্ন একটি ‘ইম্প্যাক্ট’ ছিল। তবে মাহাবুবুর রহমান মনে করেন, সরকারের এমন দমন-নিপীড়নের কাছে তাদের কর্মীরা অসহায় ছিল।

ভবিষ্যৎ আন্দোলনে এর প্রভাব পড়বে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটা সময় এলে বোঝা যাবে’।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More