দীর্ঘদিন পর বিএনপির মূল্যায়নের তালিকায় আসছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলখ্যাত বরিশাল বিভাগের নেতাকর্মীরা। দলের আসন্ন ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে এ বিভাগের অনেক নেতার পদায়নসহ নতুন করে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছেন বলে ব্যাপক গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে অন্তত তিন নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান, যুগ্ম মহাসচিব পদেও নেতাদের পদায়ন হচ্ছে। সম্পাদকীয় পদে নতুন করে আসছেন নির্বাহী কমিটির সদস্যরা। আবার বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের ব্যানার থেকেও এবার কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন অনেক নতুন মুখ।
এসব বিষয়ে বিএনপির সূত্র জানায়, বিগত দিনে বিএনপিতে একটি জেলার প্রাধান্য ছিল। এজন্য দলকে ওই জেলার সমিতি বলে অনেকে কটাক্ষ করতেন। কিন্তু এবার সেই অপবাদ থেকে দূরে সরে গিয়ে মূল্যায়নের তালিকায় নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারবেন বলেই প্রত্যাশা বরিশাল বিভাগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের।
তারা জানান, বৃহত্তর বরিশাল বিভাগ থেকে বিএনপির নেতৃত্বদানের মতো অনেক যোগ্য নেতা থাকলেও তাদেরকে কেন্দ্রীয়ভাবে মূল্যায়িত করা হয়নি। ফলে এলাকায় দলের প্রসার ঘটাতে কার্যকরী ভূমিকাও রাখতে পারতেন না তারা। এবার আসন্ন কাউন্সিলে যোগ্য নেতাদের কেন্দ্রীয়ভাবে মূল্যায়ন করা হবে বলে তারা আশাবাদী হয়ে উঠছেন।
বিএনপি দলীয় সূত্র জানায়, আসন্ন কাউন্সিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির কলেবর ১৯ সদস্য থেকে ২৩ সদস্যবিশিষ্ট করার পরিকল্পনা রয়েছে। আবার আগের সদস্যদের মধ্যে অনেকে মারা গেছেন, অনেকে বয়সের ভারে ভারাক্রান্ত আবার একজনের ফাঁসি হওয়াতে বেশ কয়েকটি পদ শূন্য রয়েছে। এসব শূন্যপদসহ নতুন পদে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, বীর বিক্রম ও সেলিমা রহমানকে পদায়ন করা হচ্ছে। আবার চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনকেও দলের এই নীতিনির্ধারণী ফোরামে নিয়ে আসা হচ্ছে। উল্লিখিত তিনজনের বাড়ি বরিশাল বিভাগে।
সূত্র জানায়, মেজর (অব) হাফিজউদ্দিনের সঙ্গে জিয়া পরিবারের সম্পর্ক স্বাধীনতা উত্তর। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আর দক্ষ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতেই তাকে এ পদায়ন দেয়া হচ্ছে। নারী কোটাসহ দেশবরেণ্য রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য হিসেবে বেগম সেলিমা রহমানের গ্রহণযোগ্যতা দলের সব পর্যায়ে সমানভাবে বিস্তৃত। জিয়া পরিবারের সঙ্গে তারও দীর্ঘদিনের পথ পরিক্রমা রয়েছে। তাই এবারো মূল্যায়নের তালিকায় রয়েছে এ সাংগঠনিক নেত্রীর নাম। বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে যখন অনেক দায়িত্বশীল নেতা আত্মগোপনে ছিলেন তখন নিজের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। মামলা-হামলায় বিপর্যস্ত দলের নেতাকর্মীদের আইনি সহযোগিতাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে তার সরব ভূমিকা ছিল। এসব কর্মের মূল্যায়নে এবার তাকে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরামের সদস্য করা হচ্ছে বলে সূত্র জানায়।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিশ্বস্ত নেতা হিসেবে পরিচিত বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র মজিবুর রহমান সারোয়ারকে এবার যথার্থ মূল্যায়নে দলের ভাইস চেয়ারম্যান করা হচ্ছে বলে বরিশাল নেতাকর্মীরা মনে করছেন। ওয়ান ইলেভেনের নির্যাতিত এবং মাঠপর্যায় থেকে উঠে আসা দক্ষ রাজনৈতিক নেতা হিসেবে বরিশাল বিভাগের জনপ্রিয় এ নেতাকে এবার কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান করা হচ্ছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।
এসব বিষয়ে বরিশালের নেতাকর্মীরা জানান, বিগত কাউন্সিলে মজিবুর রহমান সারোয়ারকে অবমূল্যায়িত করা হয়েছিল। তার অনেক জুনিয়রকে দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব করা হয়েছিল তখন। কিন্তু দলের প্রতি আনুগত্যশীল এ নেতা খালেদা জিয়ার আশীর্বাদ নিয়ে নিজের রাজনীতি করে গেছেন। এবার তার মূল্যায়ন করা হবে বলে দৃঢ় বিশ্বাস করছেন নেতাকর্মীরা। সূত্র জানায়, সারোয়ারকে পদায়ন করা হলে তার সাংগঠনিক পদে আসছেন নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম খান রাজন, সহসাংগঠনিক হিসেবে আসছেন নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হোসেন। বিগত দিনে এ বিভাগের আন্দোলন সংগ্রামে যার অবদান ছিল সর্বাগ্রে। এছাড়া দক্ষ সাংগঠনিক নেতা হিসেবে এলাকায় সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে তার।
যুগ্ম মহাসচিব পদে আসছেন এ বিভাগের অনেক উদীয়মান রাজনৈতিক নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম। ছাত্ররাজনীতি থেকে উঠে আসা এ নেতা ডাকসুর সাবেক এজিএস ছিলেন। বিগত দিনে রাজধানী ঢাকার আন্দোলনে রাজপথে অবস্থান নেয়ায় তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করে মারাত্মকভাবে আহত করে। চিকিৎসার জন্য তাকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত পেটের মধ্য হতে গুলি বের করা সম্ভব হয়নি। এরপরও দলের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। এছাড়া এই পদে যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও যুব বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও আসছেন বলে নিশ্চিত করেছে সূত্রটি।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সম্পাদকীয় পদে আসছেন সাবেক তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক জহিরুদ্দিন স্বপন। আবার নতুন চমক সৃষ্টি করতে পারেন চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বীর উত্তম, ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরিশাল মেয়র ও কেন্দ্রীয় মৎস্য বিষয়ক সম্পাদক আহসান হাবিব কামালসহ নির্বাহী কমিটির সদস্য ও বরিশাল জেলার নেত্রী অ্যাডভোকেট বিলকিস আক্তার জাহান শিরীন, জিবা খান, আলহাজ রফিকুল ইসলাম মাহতাব, শরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু, আকন কুদ্দুসুর রহমান প্রমুখ নেতা। এছাড়া নতুন করে নির্বাহী কমিটির সদস্য হচ্ছেন অন্তত এক ডজন নেতা। তারা বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন বিগত দিনে। এর মধ্যে সাবেক ছাত্রনেতা মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়নসহ শ্রমিক নেতা মাহবুব আলম বাদল ছাড়াও অনেক নেতা রয়েছেন এ তালিকায়।
Prev Post
Next Post