কুষ্টিয়ায় ছাত্রলীগের সেক্রেটারিকে গণপিটুনি, বিচার না পেলে আত্মহত্যার হুমকি

0

আধিপত্য বিস্তার ও কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জের ধরে কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন। গণপিটুনিতে শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ রক্তাক্ত জখম হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পৌর এলাকার পিটিআই সড়কের একটি বাড়িতে শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জকে আটক করে পুলিশের উপস্থিতিতেই প্রতিপক্ষের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা গণপিটুনি দেয়। পরে পুলিশের গাড়িতে তাকে চিকিৎসার জন্য ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসা না নিয়ে খালি গায়ে কয়েকজন কর্মীকে সাথে নিয়ে পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর মুর‌্যালে যান ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক।

এসময় তার সারা মুখ রক্তাক্ত ছিল এবং কপাল দিয়ে রক্ত ঝড়ছিল। এ ঘটনার পর রক্তাক্ত অবস্থায় হাসপাতাল থেকে ফেসবুক লাইভে এসে হামলার শিকার ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ তাঁর ওপর বর্বরোচিত এই হামলার ঘটনায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিচার দাবি করেন এবং এই হামলার বিচার না পেলে তার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না বলে জানান।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েক মাস ধরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা, কুষ্টিয়া শহর ও সরকারি কলেজসহ ছাত্রলীগের ৫টি ইউনিটের কমিটি গঠন নিয়ে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এর আগেও হামলা ও মামলার ঘটনা ঘটেছে। দুই সপ্তাহ আগেও শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। সে সময় তিনি পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এবং যে বাড়িতে তিনি হামলার শিকার হয়েছেন সেই বাড়ির লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দুপুরের দিকে শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ খাওয়ার জন্য পিটিআই রোডস্থ তাঁর খালার বাসায় যান। খাওয়া-দাওয়া শেষে তিনি ওই বাসায় অবস্থান করছিলেন। এ সময় শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক হাসিব কোরাইশি, জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্তর, ছাত্রলীগ নেতা অভি, সজল, সজিবসহ তাদের প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন কর্মী ওই বাসায় গিয়ে চ্যালেঞ্জের খোঁজ করতে থাকে। এ সময় চ্যালেঞ্জ বাসার টয়লেটের ফলস ছাদে গিয়ে আশ্রয় নিলে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সেখানে উঠে টেনে হিঁচড়ে তাকে নিচে নামিয়ে আনেন। এরপর ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠি ও রড দিয়ে পেটাতে পেটাতে সামনের সড়কে নিয়ে আসে। এ সময় তারা নানা রকম স্লোগান দিতে থাকেন।

পিটিআই রোডে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপির বাসার সামনে নিয়ে এসেও পুলিশের সামনেই তাকে জুতা-স্যান্ডেল দিয়ে মারপিট করে ছাত্রলীগের বিক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মীরা। এমনকি পুলিশ ভ্যানে তোলার পরও তাকে মারপিট করা হয়। এ সময় পুলিশকে নিরব ভূমিকায় দেখা গেছে। ঘটনার সময় জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবি ছাত্রলীগ কর্মীদের নিবৃত করতে দেখা যায়। পরে চ্যালেঞ্জকে উদ্ধার করে পুলিশ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে।

হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য চ্যালেঞ্জকে নেওয়া হলে চিকিৎসা না নিয়েই তিনি চলে আসেন। এ সময় তার মাথা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অন্তর জানান, পিটিআই রোডের একটি বাড়িতে মেয়ে নিয়ে অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকাবস্থায় স্থানীয় জনতা হাফিজকে আটক করে এবং গণধোলাই দেয়। ওই বাড়ির মালিক এক নারী বলেন, চ্যালেঞ্জ আমাদের আত্মীয়। দুপুরের দিকে তিনি আমাদের বাড়িতে আসেন। খাওয়া-দাওয়ার পর বাড়িতে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় বাইরে থেকে ছাত্রলীগের অনেক ছেলে-পেলে লাঠি সোটা হাতে বাসার মধ্যে ঢুকে পড়ে। পরে টয়লেটের ফলস ছাদে পালানো অবস্থায় তাকে মারতে মারতে নিয়ে যায়।

গুরুতর আহত শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ বলেন, কমিটি গঠন নিয়ে মূলত বিরোধ তৈরি হয়েছে। আমি ঢাকায় ছিলাম। কয়েকদিন আগে কুষ্টিয়া এসেছি। দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ অজয় সুরেকার অফিসে দেখা করতে যাই। সেখান থেকে বের হলে কয়েকজন যুবক আমাকে রেকি করতে থাকে। সেখান থেকে পিটিআই রোডে আমার খালার বাসায় যাই। সেখানে গিয়ে আক্রমণ করে জেলা ও শহর ছাত্রলীগের কতিপয় নেতা-কর্মী। আমার কি দোষ? আমি জামায়াত-ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি এটা কি আমার দোষ? তারা আমাকে বেদম মেরেছে। দল ক্ষমতায় থাকতে এই প্রতিদান পেলাম। আমি আমার নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ ভাইয়ের কাছে বিচার দিয়েছি। করোনাকালিন আমি ও আমার ছেলেরা মানুষের জন্য কাজ করে দলের কাছ থেকে এই প্রতিদান পেলাম। আমি বিচার চাই, বিচার চাই।

চ্যালেঞ্জ অভিযোগ করে বলেন, কমিটি নিয়ে নোংরামি চলছে, তারা পরিকল্পিতভাবে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশে এই হামলা চালিয়েছে। চাকু দিয়ে আমাকে জবাই করতে চায় তারা। তারা বলে, ‘তোর কোন বাপ বাঁচাতে পারবে না? জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারন সম্পাদক আজগর আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাজু ও অজয় সুরেকা বাপ তোকে বাঁচাতে পারবে না।’

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান অনিক বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে ঘটনার বিস্তারিত কোন কিছু এখনো জানি না।

জেলা আওয়ামী লীগ সাধারন সম্পাদক আজগর আলীর সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা। গুটি কয়েক নেতা তাদের ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য প্রকশ্যে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের ওপর হামলা চালিয়েছে। এটা অবশ্যই দু:খজনক। কারা দলের মধ্যে ঢুকে এ সমস্ত কাজ করছে তাদের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন খাঁন জানান, ছাত্রলীগ নেতা শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ শহরের পিটিআই রোডস্থ একটি বাড়িতে গিয়েছিলেন। এ সময় স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে ওই বাড়িতে ঢুকে হাফিজের ওপর হামলা করে। পরে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাকে উদ্ধার করে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হবে না।

প্রসঙ্গত, এর আগেও শেখ হাফিজ চ্যালেঞ্জ’র বিরুদ্ধে জেলা ছাত্রলীগের এক নারী নেত্রীকে কুপ্রস্তাব দেওয়াসহ উত্যক্ত করার অভিযোগ এনে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন এবং সংবাদ সম্মেলন করে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেছিলেন। এ ঘটনা সে সময় কুষ্টিয়াসহ দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়।

বিডি প্রতিদিন

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More