[ads1]গো ব্রডব্যান্ড নিয়ে মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট কেলেঙ্কারির ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটিকে শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছে বিটিআরসি। বুধবার বিটিআরসির সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর এসএম গোলাম সরোয়ার স্বাক্ষরিত চিঠি গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী বরাবর পাঠানো হয়েছে। টেলিকম আইন ভঙ্গ করে ‘গো ব্রডব্যান্ড’ সেবাটি অবৈধভাবে সোনালী ব্যাংকের ৫৫১টি শাখায় কেন দেওয়া হয়েছে চিঠিতে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। রেগুলেটরের কমিশন বৈঠকে এই নেটওয়ার্কটিকে দেশের ইতিহাসের ‘সবচেয়ে বড় অবৈধ টেলিকম নেটওয়ার্ক’ বলে অভিহিত করা হয়। এর আগে গো ব্রডব্যান্ড সার্ভিস কিছু ব্যাংকে ফাইবার অপটিক সংযোগ প্রদান করছে এই মর্মে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি) গত ২৮ ফেব্রুয়ারি লিখিতভাবে রেগুলেটরের কাছে অভিযোগ করার পরই বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। আইএসপিএবি সভাপতি এম এ হাকিম রেগুলেটরের কাছে বিষয়টির তদন্ত করার অনুরোধ করে এক চিঠিতে লেখেন, ‘আমরা জেনেছি যে, তারা ফাইবার অপটিক কানেকশনের মাধ্যমে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানের জন্য সোনালী ব্যাংকের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যা রীতিমত বেআইনী।’ এর প্রেক্ষিতে গত ৩০ মার্চ এক চিঠিতে বিটিআরসি এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গ্রামীণফোনকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। এরপর আরও এক দফা সময় দেওয়া হয় তাদের।[ads2]
দুই দফায় গ্রামীণফোন উত্তর দিলেও বিটিআরসি উত্তরে সন্তুষ্ট হতে পারেনি এবং ৪ জুন কমিশন এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বিটিআরসি জানায়, ব্যাংকের অনলাইন লেনদেন সহজতর করার জন্য গ্রামীণফোন একটি ফাইবার অপটিক কানেক্টিভিটি প্রতিষ্ঠা করেছে যা মোবাইল অপারেটর লাইসেন্স নীতিমালা বিরুদ্ধ। মোবাইল অপারেটরগুলো শুধুমাত্র মোবাইল ডিভাইস এবং মডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করতে পারবে। দুই দফায় ব্যাখ্যা গ্রহণের পর ২২ জুন বিটিআরসি লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করায় গ্রামীণফোনের সাথে সোনালী ব্যাংকের মধ্যকার ইন্টারনেট সার্ভিস ও ট্রান্সমিশন সেবার চুক্তি বাতিল করে। বিটিআরসির কমিশন মিটিংয়ের সিদ্ধানুসারে ‘লাইসেন্সের শর্ত ও টেলিযোগাযোগ আইন ভঙ্গ করে ফাইবার অপটিক্সের মাধ্যমে ফিক্সড সংযোগ প্রদান করে সোনালী ব্যাংক লিমিটেডকে ইন্টারনেট সার্ভিস ও ট্রান্সমিশণ সেবা প্রদান করার জন্য গ্রামীণফোন ও সোনালী ব্যাংকের মধ্যকার সম্পাদিত চুক্তিটি অনতিবিলম্বে বাতিল করার নির্দেশ প্রদানের সিদ্ধান্ত গৃহিত হলো।” এ সিদ্ধান্তের পর এ চুক্তির আর কোনো বৈধতা থাকে না জানিয়েছেন বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ বলেন, ‘লাইসেন্সের শর্ত ভঙ্গ করার জন্য ৩০ দিন সময় দিয়ে শো কজও ইস্যু করা হবে।’ তবে শোকজটি পাঠানো হয়েছে ২৫ দিন পর। টেলিকম আইন ২০০১ (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুনারে এ জন্য গ্রামীনফোনকে ৩ শত কোটি টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে বিটিআরসি। বিটিআরসি বলছে, কমিশনের তথ্যাদি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে অপারেটরটি গো ব্রডব্যান্ডের জন্য কমিশন থেকে কোনো রকমের অনুমতি ছাড়াই ২০১২ সাল থেকে ব্যবসা করে গেছে।[ads2]
কমিশন হতে প্রাপ্ত তথ্যাদি অনুযায়ী, ২০১২ সালের ২০ জুন গ্রামীণফোন আইএসপি অগ্নি ও এডিএনের সাথ যে সেবার অনুমতি নিয়েছে তাতে বলা হয়েছিল, ‘কেবলমাত্র কো-অর্ডিনেশন সার্ভিস নামে এডিএন ও অগ্নি আইএসপি প্রতিষ্ঠানদের সারাদেশে গ্রামীণফোনের গ্রাহক্সেবা কেন্দ্র ব্যবহার করে ইনফাস্ট্রাকচার শেয়ারিং নীতিমালা অনুযায়ী ইন্টারনেট সেবা পৌছে দিতে একটি অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। উক্ত অনুমোদনে পরিষ্কারভাবে “ইনফাস্ট্রাকচার শেয়ারিং” নীতিমালার আলোকে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে এবং কেবলমাত্র এডিএন ও অগ্নি নামক আইএসপি প্রতিষ্ঠান কো-অর্ডিনেশনেটেড সেবা প্রদানের করতে পারবে বলে পরিষ্কারভাবে নির্দেশনাতে বলে দেয়া হয়।’ তবে গ্রামীনফোন সীমা অতিক্রম করে নিজেরাই ওয়াইম্যাক্স ও আইএসপি সেবা দিয়ে গেছে। বিটিআরসি বলছে, “সোনালী ব্যাংক লিঃ” নামক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সমগ্র বাংলাদেশের ব্রাঞ্চ অফিস সমূহে (মোট ৫৫১টি স্থানে) “গো ব্রডব্যান্ড” নামে কেবলমাত্র গ্রামীণফোন ট্রান্সমিশন সংযোগ প্রদান করেছে বলে কমিশনকে জিপি তালিকাসহ প্রদান করেছে বলে জানা যায়। ইহা ইনফ্রাস্ট্রাকচার নীতিমালা’র ৪.৭ ও ৪.৮ নং শর্ত অনুযায়ী সম্পূর্ণ অবৈধ। গ্রামীনফোন কমিশন বা নীতিমালাকে সম্পূর্ণ অমান্য করে কোন এনটিটিএন অপারেটরদের সম্পৃক্ত না করে বা কমিশনে তথ্য প্রদান না করে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবথেকে বড় অবৈধ নেটওয়ার্ক স্থাপন করে সোনালী ব্যাংকের ব্রাঞ্চসমূহ কানেক্ট করেছে এবং লাইসেন্স না থাকা শর্তেও আইএসপি ব্যবসা পরিচালনা করছে। গ্রামীণফোন একটি থ্রিজি লাইসেন্সি অপারেটর হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কোন প্রকার আইএসপি লাইসেন্স বর্তমানে নেই। সেক্ষেত্রে কোনভাবেই প্রতিষ্ঠানটি সোনালী ব্যাংক লিঃ বা অন্য কাউকে ইন্টারনেট সেবা (মোবাইল ডাটা সার্ভিস ব্যতিত) প্রদান করতে পারে না বা অনুরুপ সেবা দেবার কোন সুযোগ নেই। এছাড়া মন্ত্রণালয় কমিশন হতে প্রতিমাসে সকল আইএসপি গ্রাহক তথ্য নিয়ে থাকে যেখানে জিপি’র কোন তথ্য কমিশনে প্রদান করে না, এতে গো ব্রডব্যান্ডের কোন গ্রাহকের তথ্য কমিশনে বা মন্ত্রণালয়েও নেই।[ads1]
জানা গেছে, চুক্তি অনুযায়ী মোবাইল অপারেটরটি প্রত্যেক শাখা থেকে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা করে আয় করেছে। ৫৫১টি শাখা থেকে প্রতি মাসে আসছে ২৭ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। প্রাথমিক অবস্থায় চুক্তির মেয়াদ ৩ বছর করা হয়েছিল। বিটিআরসি বলছে, গো ব্রডব্যান্ড নিয়ে মূলত ৫টি বড় ধরণের অনিয়ম করেছে গ্রামীণফোন। প্রথমত গ্রামীণফোন ইনফ্রাস্ট্রাকচার শেয়ারিং গাইডলাইন অমান্য করেছে। গাইডলাইন অনুসারে তারা অনুমতি ছাড়া ইনফ্রাস্টকচার শেয়ার বা লিজ দিতে পারে না। দ্বিতীয়ত গ্রামীণফোন অন্য সব মোবাইলফোন অপারেটরের মতই কোন ওয়্যার কানেটিভিটি দিতে পারে না।
তৃতীয়ত, তারা ফাইবার কানেকটিভিটি দিচ্ছে, সেটি তারা করতে পারে না, কারণ ফাইবার কানেকটিভিটি দেয়ার একমাত্র অধিকার রয়েছে এনটিটিএন অপারেটরদের! চতুর্থত, তারা বিটিআরসি’র অনুমতি ছাড়াই সোনালী ব্যাংকের প্রায় ৭০০ শাখায় ওয়্যার টেকনলজি ইউজ করে ইন্টারনেট কানেকটিভিটি দিচ্ছে। এটাও তারা ওয়াইমেক্স গাইডলাইন অনুসারেই পারে না। পঞ্চমত, তারা ওয়াইমেক্স সার্ভিস দাতা প্রতিষ্ঠান কিউবি ও বাংলালায়নের মত মোডেম দিয়েও সেবা দিচ্ছে। এর জন্য তাদের কোনো লাইসেন্স নেই! ওয়াইমেক্স সেবা দেওয়ার জন্য কিউবি ও বাংলালায়ন ২১৫ কোটি টাকায় লাইসেন্স নিয়েছে, সেখানে গ্রামীণফোন এডিএন ও অগ্নির সাথে মিলে সেবাটি দিচ্ছে, যেখানে এডিএন এবং অগ্নির লাইসেন্স ফি ৫ লাখ টাকার নিচে! এ বিষয়ে জানতে গ্রামীণফোনের হেড অফ এক্সটারনাল কমিউনিকেশনস সৈয়দ তালাত কামালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিটিআরসি থেকে নোটিশ পেয়েছি এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।’ [ads2]