ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি ২০২২ সালের জন্য বিশ্বের ১০০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে স্থান পেয়েছেন বাংলাদেশের মেয়ে সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া। ময়মনসিংহের নান্দাইলে তার গ্রামের বাড়ি। কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি।
বিশ্বের রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, অ্যাক্টিভিজম ও অ্যাডভোকেসি, স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞান অঙ্গনের ১০০ নারী বিবিসির নতুন তালিকায় স্থান পেয়েছেন। এরমধ্যে অ্যাক্টিভিজম ও অ্যাডভোকেসি শাখায় আছে সানজিদা ইসলাম ছোঁয়ার নাম।
মনোনীত ১০০ নারীকে নিয়ে বিবিসি আজ (৬ ডিসেম্বর) একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বে যেসব দেশে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি, বাংলাদেশ সেগুলোর অন্যতম। তবে সানজিদা ইসলাম ছোঁয়া এই চিত্র পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন। তার নিজের মায়ের বিয়ে হয়েছিল অল্প বয়সে। কিন্তু একটি স্কুলের উপস্থাপনায় বাল্যবিয়ের নেতিবাচক প্রভাব দেখে অনুপ্রাণিত হন ছোঁয়া। এরপর এটি বন্ধে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। বাল্যবিয়ের ঘটনা কানে এলেই বন্ধু, শিক্ষক ও সহযোগীদের নিয়ে পুলিশকে জানাতে থাকেন ছোঁয়া। তারা নিজেদের ‘ঘাসফড়িং’ গ্রুপের সদস্য পরিচয় দেন।
প্রতিবেদনটিতে আরও উল্লেখ রয়েছে, ছোঁয়া এখনও ঘাসফড়িংয়ের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ঘাসফড়িং গ্রুপের নতুন সদস্যদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন তিনি। এ পর্যন্ত তারা ৫০টি বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ করেছেন বলে জানা গেছে।
বিবিসি ২০২২ সালের জন্য বিশ্বের ১০০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পাওয়ার খবরটি আজই পেয়েছেন ছোঁয়া। বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশনের সহকারী প্রযোজক তাসনিম খন্দকার তাকে এই সুখবর দেন। তখন কেমন লেগেছিল? ছোঁয়ার উত্তর, ‘আজ সকালেই খবরটি পেয়ে খুব ভালো লেগেছে। আমি এই সম্মান পেয়ে আনন্দিত।’
সানজিদা ইসলাম ছোঁয়ার বাবা আমিনুল ইসলাম চাকরিজীবী। মা লিজা আক্তার গৃহিণী। মেয়ের এমন অর্জনে তারা গর্বিত।
ছোঁয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি মনে করি অল্প বয়সে বিয়ে করা যেকোনও মেয়ের জন্য খাঁচায় বন্দি থাকা জীবনের মতো। ময়মনসিংহে আমার আশপাশে একসময় বছরে ৪০-৫০টির মতো বাল্যবিয়ের ঘটনার কথা জেনেছি। তবে এখন সেই সংখ্যা ২-৩টিতে নেমে এসেছে। বাল্যবিয়ে বন্ধে আমরা ঘাসফড়িং থেকে যেভাবে কাজ করে এসেছি, তাতে শতভাগ না হলেও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটাতে পেরেছি।’
বিবিসির মর্যাদাসম্পন্ন তালিকায় স্থান পেয়ে ছোঁয়া উল্লেখ করেন, ‘বাল্যবিয়ে রোধে বন্ধু ও শিক্ষকদের পাশাপাশি নান্দাইলের ইউএনও, সাংবাদিক, স্থানীয় সংগঠন ওয়ার্ল্ড ভিশনসহ সবাই আমাকে সবসময় শতভাগ সমর্থন দিয়েছে ও সহযোগিতা করেছে। এজন্য সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
এ নিয়ে দশমবারের মতো বিশ্বের ১০০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকা প্রকাশ করেছে বিবিসি। চলতি বছরের মনোনয়ন তালিকার জন্য যোগ্য নারীদের মনোনীত করতে আগে নির্বাচিত ১০০ জন নারীর মতামত নিয়েছে বিবিসি। তালিকায় ইরানে মাহসা আমিনি হত্যার প্রতিবাদে নারীদের সোচ্চার হওয়া এবং ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে নারীদের দৃঢ় মনোবলের পরিচয় দেওয়ার ভূমিকা প্রতিফলিত হয়েছে।
বিবিসির বিশ্বের ১০০ জন অনুপ্রেরণাদায়ী ও প্রভাবশালী নারীর তালিকায় আরও স্থান পেয়েছেন ভারতীয় অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, আমেরিকান পপতারকা বিলি আইলিশ, অভিনেত্রী সেলমা ব্লেয়ার, রুশ পপসম্রাজ্ঞী আলা পাগচেভা, ইউক্রেনের ফার্স্টলেডি ওলেনা জেলেনস্কা, ইরানি অভিনেত্রী জার আমির-ইব্রাহিমি, পর্বতারোহী এলনাজ রেকাবি, ভেনেজুয়েলার অ্যাথলেট জুলিমার রোহাস প্রমুখ।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন