২০০৯ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলী তাকসিম এ খান-এর দুর্নীতির খবর থোড়াই তোয়াক্কা করেছে ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকার। এবার আমেরিকায় তাঁর ১৪টি বিলাসবহুল বাড়ির খবর নিয়ে রীতিমত তোলপাড় চলছে নেট দুনিয়ায়। দেশে দুর্নীতি করেছে। টাকা পাচার করেছে বিদেশে। গড়ে তুলেছে সম্পদের পাহাড়। শেখ পরিবারের আশীর্বাদ নিয়েই তাকসিম অবাধে দুর্নীতি চালিয়েছেন বলেও ওয়াসায় মুখে মুখে প্রচারিত রয়েছে। শেখ পরিবারের পছন্দেই অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে তাঁকে টানা ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে এ পদে বহাল রাখা হয়েছে।
সম্প্রতি আওয়ামী পত্রিকা গুলো লজ্জা ভেঙ্গে তাকসিমের দুর্নীতির খবর প্রকাশ করতে শুরু করেছে। আমেরিকায় ১৪ বাড়ির খবর প্রকাশের পর হাইকোর্টের আওয়ামী বিচারকরাও একটু নড়ে চড়ে বসছেন। তাঁর বাড়ির তথ্য জানাতে রুল জারি করেছে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের আওয়ামী বিচারকদ্বয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আমেরিকায় তাকসিমের ১৪টি বাড়ি কেনার তথ্যের বিষয়ে জানাতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক নজরুল ইসলাম তালুকদার ও খিজির হায়াত। যদিও দুর্নীতি দমন কমিশন ইতোমধ্যেই আওয়ামী দুর্নীতি প্রটেকশন কমিশন হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তাকসিম এ খানকে। এরপর থেকে বারবার চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে তাঁকে এ পদে বহাল রাখা হচ্ছে গত ১৪ বছর ধরে। অথচ, তিনি দেশে নয়, অফিস করেন আমেরিকা থেকে। আমেরিকা থেকে অফিস করা নিয়েও নেট দুনিয়ায় আলোচিত ওয়াসার এই এমডি। মাসিক ৬ লক্ষাধিক টাকার বেশি বেতন, বড় বড় প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে রয়েছেই।
যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে তাকসিমের কেনা ১৪ বাড়ির মূল্য হাজার কোটি টাকার বেশি। দেশ থেকে টাকা পাচার করে তিনি এসব বাড়ি কিনেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিপুল পরিমাণ পাচার করা টাকায় বাড়ি কেনায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তালিকায় সন্দেহভাজন হিসেবে তাকসিমের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রে পরিবার-পরিজন নিয়ে তাকসিম যে বাড়িতে থাকেন, সেটার ঠিকানা- ৫৩১, N Louise St. Unit 302, Glendale, CA 91206। এই বাড়ি তিনি কত টাকায় কিনেছেন, তা জানা যায়নি। এ ছাড়া ৪১৯, E Cypress Avenue Burbank, CA 91501- এ ঠিকানায় ২০১৭ সালে ১৯ লাখ ৭৬ হাজার ৮৮৯ ডলারে (সে সময়ের দরে আনুমানিক ১৭ কোটি টাকা) কেনা বাড়িটিতে রয়েছে ১৪টি বেডরুম ও ১৪টি বাথরুম। ৫১৮, Salem Street Glendale, CA 91203- এই ঠিকানায় ২০১৮ সালের আগস্টে ৪৩ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৪ ডলারে (আনুমানিক ৩৭ কোটি টাকা) কেনা বাড়িটিতে রয়েছে ছয়টি বেডরুম ও ছয়টি বাথরুম। 350 E 30th Street New York, ঘণ ১০০১৬-৮৩৮৬- এই ঠিকানায় ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ৬ কোটি ২৯ লাখ ৮০ হাজার ৬১৪ ডলারে (আনুমানিক ৫৩৫ কোটি টাকা) কেনা বাড়িটিতে রয়েছে ১০২টি বেডরুম ও ১০২টি বাথরুম। 3555 Kystone Avenue Los Angels, CA 90034- এই ঠিকানায় ২০১৯ সালের অক্টোবরে ৮২ লাখ ৭৫ হাজার ৯৮০ ডলারে (আনুমানিক ৭০ কোটি টাকা) কেনা বাড়িটিতে রয়েছে ১২টি বেডরুম ও ১২টি বাথরুম। বাড়িগুলো তাকসিন ভাড়া দিয়ে রেখেছেন।
দুদকের অভিযোগে কিছু বাড়ির সুনির্দিষ্ট ঠিকানা, ছবি, কোন বাড়ি কখন, কত টাকায় কেনা- তা উল্লেখ করা হয়েছে। তাকসিম সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (সিআইএ) ‘গভর্নমেন্ট ওয়াচ নোটিশ’-এর একটি কপি অভিযোগের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
সিআইএসহ যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (ডিওজে), ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই), দেশটির অন্যান্য সংস্থা ও ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল) তাকসিম এ খানের বিষয়ে কাজ করছে বলে ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ির বিষয়ে সম্প্রতি দুদকে অভিযোগ জমা দেয়া দুই ব্যক্তির একজন হলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি মো. সোহেল রানা। তিনি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানান।
দুদকে দেওয়া অভিযোগে বলা হয়, বিদেশি ঋণে করা ওয়াসার বড় বড় প্রকল্প থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করে তা হুন্ডিসহ বিভিন্ন উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন তাকসিম। পাচারের অর্থে দেশটির লস অ্যাঞ্জেলস, নিউইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরের অভিজাত এলাকায় নগদ ডলারে ১৪টি বিলাসবহুল বাড়ি কিনেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, তাকসিম যুক্তরাষ্ট্রেরও নাগরিক। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থায় তিনি ঢাকা ওয়াসার এমডি হিসেবে যোগ দেন। তাঁর পরিবারের সব সদস্য যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী। তাকসিমও প্রতিবছরে প্রায় তিন মাস যুক্তরাষ্ট্রে পরিবারের সঙ্গে অবস্থান করেন। একসময়ের ভাড়াটিয়া তাকসিম লস অ্যাঞ্জেলসের মতো অভিজাত শহরে বিলাসবহুল বাড়ি কেনেন। এ খবর ওই শহরের বাঙালি-পাড়ার মানুষের মুখে মুখে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে তাকসিমের বাড়ি-গাড়িসহ অঢেল সম্পদ থাকলেও দেশে তাঁর কোনো সম্পত্তি নেই। গুলশান-২ এর ৫৫ নম্বর সড়কে সরকারি বাসভবনে তিনি থাকেন না। তিনি থাকেন নয়াপল্টনে, শ্বশুরবাড়িতে।
amardesh