পারমিট আছে, বাস নেই!

0

BRTCআজিমপুর থেকে মতিঝিলে যাওয়ার কোনো বাস নেই। তাই প্রতিদিন এই পথে চলাচলকারী যাত্রীদের যেমন বাড়তি খরচ হচ্ছে তেমনি ব্যয় হচ্ছে বাড়তি সময়। বেশকিছু বাসের এই দিকের রুট পারমিট দেয়া থাকলেও তা মানছেন না বাসমালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা। ফলে, যাত্রী বিড়ম্বনা বেড়েই চলেছে। আর এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পরিবহন বিষয়ক সরকারি কমিটিতে যাত্রীদের কোনো প্রতিনিধি না থাকাকেই প্রধান বাধা বলে মনে করছেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
জানা গেছে, আজিমপুর মোড় হয়ে শাহবাগ, কাঁটাবন, মৎস্য ভবন, প্রেসক্লাব, পল্টন, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল হয়ে সদরঘাট এবং ধুপখোলা এই রুটে আগে বেশকিছু বাস চলাচল করত। কিন্তু এখন বাস মালিকরা ইচ্ছামত এই বাসগুলোর রুট পরিবর্তন করে ফেলেছেন ফলে এই রুটে এখন কোনো বাস চলাচল করে না বললেই চলে। এই রুটে বাস বন্ধ করে মানুষ পরিবহনের অনুপযোগী বেশকিছু লেগুনা সার্ভিস চালু করেছেন কতিপয় ব্যবসায়ী। এই রুটে যেমন চলছে না কোনো পাবলিক পরিবহন, সেই সঙ্গে বিআরটিসির কোনো দোতলা বাস।
ঢাকা মেট্রোপলিটন রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির অনুমোদিত বাস রুটের তালিকা ধরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিকল্প পরিবহনের ৪৮টি বাস পল্লবী (মিরপুর-১২) হতে নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড পর্যন্ত চলার জন্য নির্ধারিত। এগুলোর স্টপেজ বৈকালী হোটেল, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০ গোলচক্কর, মিরপুর-১, নীলক্ষেত, আজিমপুর, পলাশী, কাঁটাবন, যাত্রাবাড়ী। কিন্তু বর্তমানে বাসগুলো পলাশী পর্যন্ত যাতায়াত করলেও কাঁটাবন হয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত চলাচল করে না। আশীর্বাদ পরিবহন (প্রা.) লিমিটেডের ২০টি বাস পল্লবী (দুয়ারীপাড়া) থেকে গুলিস্তান রুটে চলার কথা। যার স্টপেজ: মিরপুর-৬, মিরপুর-১ কল্যাণপুর, আসাদগেট, শুক্রাবাদ, বুয়েট, বঙ্গবাজার। কিন্তু এই বাসটি বর্তমানে আজিমপুর এতিমখানা পর্যন্ত চলাচল করছে। বুয়েট হয়ে বঙ্গবাজার যায় না।
বিভিন্ন মালিকের মালিকানায় সাবেক ৭ নম্বর বাসটি গাবতলী থেকে ভিক্টোরিয়া পার্ক রুটের জন্য নির্ধারিত। যার স্টপেজ: আসাদগেট, নিউমার্কেট, আজিমপুর, পলাশী মোড়, চানখাঁরপুল। কিন্তু এই বাসটি বর্তমানে গাবতলী থেকে সাইন্সল্যাবরেটরি, শাহবাগ হয়ে ভিক্টোরিয়া পার্ক পর্যন্ত চলাচল করছে। মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর থেকেই এই বাসটি আর আজিমপুর, পলাশী মোড়, চানখাঁরপুল হয়ে ভিক্টোরিয়া পার্কে যায় না।
মাই লাইন লিমিটেডের ৪৯টি বাস ভাষানটেক থেকে খিলগাঁও তালতলা রুটে চলার কথা। কিন্তু বাসটি সাইন্স ল্যাবরেটরি, শাহবাগ হয়ে চলাচল করছে। নিউমাকের্ট, নীলক্ষেত, কাঁটাবন রুটে চলাচল করছে না। একই অবস্থা মেট্রোপলিটন বাস সার্ভিসের বাসগুলোর। এগুলোও শ্যামলী থেকে কমলাপুর যেতে আজিমপুরের বদলে সাইন্স ল্যাবরেটরি রুট ব্যবহার করছে। সাবেক ১৩ নম্বর বাসের রুট পোস্তগোলা থেকে আজিমপুর। এক সময় এই বাসটি মোহাম্মদপুর-আজিমপুর হয়ে ধুপখোলা গেলেও এখন এটি নাম বদলে মোহাম্মদপুর- আজিমপুর যাতায়াত করছে। বিভিন্ন মালিকের তত্ত্বাবধানে সাবেক ৩১ (ই) নম্বরের ৮০টি বাস বরাদ্দ রয়েছে। যার রুট ফুলবাড়ীয়া (ঢাকা) থেকে মানিকগঞ্জ। যার স্টপেজ: চানখারপুল, আজিমপুর, আসাদগেট, টেকনিক্যাল, গাবতলী। এই রুটে কিছু বাস চলাচল করছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আজিমপুর-ঢাকেশ্বরী এলাকায় বেশ কিছু বাস রুট চালু রয়েছে। এর মধ্যে পল্লবী সুপার লোকাল সার্ভিস, সেফটি এন্টারপ্রাইজ (প্রা.) লি., বিহঙ্গ পরিবহন, মিরপুর সুপার লিংক লি., মেট্রোলিংক, মিরপুর পরিবহন সার্ভিসগুলো অন্যতম। তবে, দ্বীপ বাংলা পরিবহন লি. ও অনিক পরিবহন আজিমপুর-কুড়িল চালু থাকলেও এখন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
আজিমপুর-মতিঝিল রুটের যাত্রী ও একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এক সময় আমি আজিমপুর মোড় থেকে বাসে যাতায়াত করে পল্টনে আমার অফিসে যেতাম। কিন্তু এখন এই রুটে কোনো বাস না থাকায় আমাকে প্রতিদিন গুনতে হচ্ছে রিকশা ভাড়া। যা প্রায় ৫০-৬০ টাকা। এই বাড়তি খরচ আমাকে বিড়ম্বনায় ফেললেও আমার কিছুই করার নেই। কারণ যাত্রীদের অভিযোগ করার জন্য জায়গা নেই। অন্য এক যাত্রী জিয়াউল হক বলেন, আমি প্রায় ২০ বছর আজিমপুর থেকে পল্টনে যাতায়াত করি। আগে কখনো এই বিড়ম্বনায় পড়িনি। বেশ কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করছি এই রুটে বাস কমে যাচ্ছে। আগে এক সময় ৯ নম্বর, বিকল্প, মেঘলা, ১৩ নম্বর, ৭ নম্বর, মিডওয়ে- এই বাসগুলো দিয়ে পল্টন বা গুলিস্তান যাতায়াত করতে পারতাম। কর্তৃপক্ষ তুলে দিয়েছে নাকি নিজেরা সরিয়ে নিয়েছে বলতে পারব না। কিন্তু বাসগুলো না থাকায় ভীষণ কষ্ট করেই এই দিকে যাতায়াত করতে হয়। তবে, আজিমপুর থেকে মিরপুর রোডে যথেষ্ট বাস আছে কিন্তু অন্য দিকে কেন কোনো বাস থাকছে না বুঝলাম না।
নির্ধারিত রুটের জন্য বাস নির্ধারিত থাকলেও সেগুলো চলাচল না করা প্রসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মূলত কোনো রুটে কোনো পাবলিক পরিবহন চলবে তার রুট নির্ধারণ করে ঢাকা মহানগর আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি। পুলিশ কমিশনার, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) উপ-পরিচালক, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের প্রতিনিধিরা এ কমিটির সদস্য। এখানে যাত্রীদের পক্ষে কোনো সদস্য না থাকায় এ ধরনের পরিস্থিতির তৈরি হচ্ছে। এক সময় বিভিন্ন পক্ষের অনুরোধে আমাকে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষে কমিটিতে রাখা হলেও তা মালিক-শ্রমিকদের দাবির মুখে বাতিল করা হয়। যার কারণে এখন আর যাত্রীদের পক্ষে কথা বলার জন্য কেউ নেই।
তিনি বলেন, পরিবহন মালিকরা যাত্রীদের পছন্দের রুটে নয়, শুধু যে রুটে তাদের লাভ হবে সেই রুটেই যাত্রী পরিবহনের কাজটি করে। অনেক দিকে রুট আছে কিন্তু ওই রুটে যানবাহন চলে না। এই যে যাত্রীদের ভোগান্তি, নির্দিষ্ট রুটে বাস না চালানোর পেছনে যেমন যাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব না থাকার পাশাপাশি সরকারের নির্দিষ্ট সেক্টরের মনিটরিংয়ের অভাব দায়ী। আমরা যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে কথা বলে মালিক-শ্রমিকদের শত্রুতে পরিণত হচ্ছি। আমাদের কথা কেউ শুনছেও না যাত্রীদের কষ্টও লাঘব হচ্ছে না।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More