সবুজ সিএনজি অটোরিকশার আবারো হলুদ রোগ

0

CNGসবুজ সিএনজিচালিত অটোরিকশার আবার হলুদ রোগ দেখা দিয়েছে। ঢাকার রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না। নৈরাজ্য বন্ধ করতে কয়েক মাস আগে সরকার ভাড়া বৃদ্ধি করে। চালক-মালিকদের চাহিদা মেনে এ ভাড়া বৃদ্ধির হার ছিল ৬২ শতাংশ। এতে মাত্র কয়েক সপ্তাহ তারা নির্ধারিত ভাড়া মেনে রাজধানীতে চলাচল করে। এখন আবার পুরনো রোগে তাদের পেয়ে বসেছে। চালকরা চুক্তিতে যেতে যাত্রীদের বাধ্য করছেন। মিটারে গেলেও বকশিশ দাবি করছেন ৮১ শতাংশ। যাত্রীর পছন্দের গন্তব্যে যেতে রাজি হচ্ছেন না ৭৩ শতাংশ চালক। রাজধানীর গণপরিবহনের এই চিত্র উঠে এসেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমীক্ষায়।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু কিছু চালক মিটারে যাত্রী বহন করেন। তবে তাদের ৮১ শতাংশই যাত্রীদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বকশিশ আদায় করেন। এ ছাড়া ৩৮ শতাংশ অটোরিকশায় মিটার নেই। এগুলো ‘ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট’ ও ‘ঢাকা জেলায় চলাচল করবে’ শর্তে নিবন্ধন নেয়া। ২০ থেকে ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত রাজধানীর ১৯টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ১ হাজার ৯৩টি অটোরিকশার যাত্রীসেবা পর্যবেক্ষণ করে এ সমীক্ষা তৈরি করে সংগঠনটি। এ সময় ১ হাজার ১৬০ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন তারা। সম্প্রতি যাত্রী কল্যাণ সমিতি তাদের সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। মালিক-চালকদের মনোপূত ভাড়া কার্যকরের পরও ‘কেমন চলছে অটোরিকশা?’ শিরোনামে সমিতির গণপরিবহনে ভাড়া-নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপকমিটির সদস্যরা এই সমীক্ষা চালান।
অভিযোগ প্রসঙ্গে সিএনজি চালকরা তাদের পুরনো যুক্তিই তুলে ধরেছেন। তারা দাবি করেছেন, তীব্র যানজট, গ্যাস স্টেশনের লম্বা লাইন ও মালিকদের জমা খরচ ওঠাতেই তারা বকশিশ দাবি করে থাকেন।
আবদুর রশিদ হাওলাদার গত ৮ বছর ধরে অটোরিকশা চালান। তিনি জানান, পাঁচ সদস্যের পরিবার নিয়ে তার সংসার। মাসে ন্যূনতম খরচ ৩০ হাজার টাকার। এ টাকা সিএনজি চালিয়ে আয় করা সম্ভব নয়। তাই যাত্রীদের কাছে তাদের বকশিশ চাইতে হয়। তবে তারা কারোর কাছ থেকে জোর করে বকশিশ আদায় করেন না বলে তিনি দাবি করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এ প্রসঙ্গ বলেন, বকশিশ চাওয়ার বিষয়টি আমাদের কেউ এখনো অভিযোগ আকারে জানায়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। তবে আমাদের কাছে অভিযোগ আসছে সিএনজি অটোরিকশা মিটারের নির্ধারিত ভাড়ায় যেতে চায় না। এ ব্যাপারে আমরা একাধিক অভিযোগ পেয়েছি এবং চালকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।
সমীক্ষা প্রতিবেদনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়, নিম্ন ও মধ্যবিত্তের বাহন হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসে নামমাত্র খরচে পরিচালিত হচ্ছে অটোরিকশা। এরপরও মালিক, চালক ও সরকার মিলে যাত্রী স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে গত বছর ১ নভেম্বর থেকে এক লাফে এর ভাড়া ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এ সময় মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতারা বলেছিলেন, অটোরিকশার দৈনিক জমা ও ভাড়া তাদের মনোপূত হয়েছে। কয়েক দিন মোটামুটি ভালো চললেও এই খাতে আবার নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য ভাড়া বৃদ্ধির আগেও চালক-মালিকরা সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে অটোরিকশা চালাননি।
এ বিষয়ে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, উড়ালসড়কের টোল ও বিভিন্ন মোড়ে শ্রমিক ইউনিয়নের বা অন্য নানা ছুতোয় যে চাঁদা আদায় করা হয়, তাও যাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে। মালিক-চালকদের এই নৈরাজ্য বন্ধ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এই নৈরাজ্য বন্ধে ট্রাফিক পুলিশ ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষকে (বিআরটিএ) একসঙ্গে অভিযান শুরু করতে হবে। প্রতিটি অটোরিকশা নির্ধারিত ভাড়া ও অভিযোগ করার ফোন নম্বর-সংবলিত নোটিশ টাঙানো বাধ্যতামূলক করতে হবে। এটাও নিশ্চিত করতে হবে, যাত্রী অভিযোগ করার পর এর প্রতিকার পাওয়া যাবে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির সদস্যরা যেসব এলাকায় পর্যবেক্ষণ করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে সদরঘাট, গুলিস্তান, প্রেসক্লাব, পল্টন, কাকরাইল, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, খিলগাঁও চৌরাস্তা, ফকিরাপুল, ফার্মগেট, মালিবাগ, মিরপুর-১০, ধানমণ্ডি, এলিফ্যান্ট রোড, শাহবাগ, বিমানবন্দর ও মহাখালী এলাকা। তাদের পর্যবেক্ষণের সময় ছিল সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত। উল্লিখিত এলাকাগুলোতে বিআরটিএ বা অন্য সরকারি সংস্থার তৎপরতা দেখা যায়নি। এ সময় যাত্রীরা অভিযোগ করেন, রাত নয়টার পর এবং সকাল আটটার আগে মিটার অনুসারে অটোরিকশায় চড়া যায় না।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, এর আগে গত বছর ১ ও ২ নভেম্বর একইভাবে রাজধানীর পল্টন, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, গুলিস্তান, মতিঝিল, ফার্মগেট, মহাখালী, মিরপুর, উত্তরা, যাত্রাবাড়ী, কমলাপুর রেলস্টেশন, সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এলাকায় অটোরিকশার চলাচল পর্যবেক্ষণ করে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সে সময় ২২৫টি অটোরিকশার চালক ও ২৪৭ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেন পর্যবেক্ষণকারীরা। এতে দেখা যায়, ১৯৮টি অটোরিকশার চালক মিটারে যাত্রী বহন করেছিলেন। বাকি ২৭টির ১০টিতে মিটার ছিল না। ১৭টিতে চালক কিংবা যাত্রীর ইচ্ছায় চুক্তিতে চলাচল করেছে। সে হিসেবে নভেম্বরের তুলনায় অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More