সাবধান! রাস্তা ঘাটে মায়া কান্নার ফাঁদ পেতে চলছে অভিনব প্রতারণা

0

144609_1রাত প্রায় সাড়ে ১০টা। যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে একটা জটলা দেখে এগিয়ে গেলাম। জটলার মাঝখানে একটা বাচ্চা মেয়ে কাঁদছে। খুব মায়াবি কান্না। হাতে দুইটা পত্রিকা। সবাই জানার চেষ্টা করছে কান্নার কারণ। কান্নার কারণে সে কথাই বলতে পারছে না। শেষে অনেক কষ্টে জানা গেলো, সে পেপার বিক্রি করে। আজকে ওই পেপার বিক্রির টাকা হারিয়ে ফেলেছে। ৯শ টাকা! তার কাছে অনেক কিছু। আজকে টাকা জমা দিতে না পারলে তার খবর আছে।

একজন তাকে বলছে, ‘বাসায় চলে যাও, আরও রাত হলে তুমি বিপদে পড়বা।’ কিন্তু সে যাবে না। টাকা না নিয়ে গেলে আজ মাইর খাবে নাকি।

জিজ্ঞেস করলাম কে মারবে? বললো ‘পত্রিকার এজেন্ট।’ আমি অফিসের কার্ড বের করে ওর হাতে দিয়ে বললাম, উনাকে এই কার্ডের নাম্বারে ফোন দিতে বলবা। আর বলবা পুরো ৯শ টাকা আমি দিবো। তোমাকে যেনো না মারে। এখন বাসায় যাও।

একজন আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আপনি কী করেন? আসলেই কি টাকা দিবেন? বললাম, ‘জী, দিবো। আমি পত্রিকাতেই জব করি। ওকে কার্ড দিয়ে বাসায় পাঠান। টাকাটা আমি ওর পত্রিকার এজেন্টের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে দিবো।’

উনি অনেক চেষ্টা করেও পারলেন না। সে কার্ড নিবে না। কান্নাও থামাবে না। বাসায়ও যাবে না!! সবাই বলছে, ‘তুমি বাসায় যাও, উনি তোমার টাকা দিবে।’ কিন্তু সে নগদ টাকা ছাড়া যাবে না! ব্যাপারটা রহস্যময় হয়ে গেলো। এদিকে সে কেঁদেই যাচ্ছে হাউমাউ করে। হাজার গলেও বাচ্চা একটা মেয়ে। কাঁদতে দেখলেই খারাপ লাগে। কী করবো বুঝতে পারছি না। আবার রেখেও যেতে পারছি না।

ঠিক তখন একজন লোক ভীড় ঠেলে ভেতরে আসলো। মেয়েটাকে দেখেই সে জ্যোতিষির মতো বলে যাচ্ছে, ‘ও এই মাইয়া!!! ওর পত্রিকার টাকা হারাইছে না? ৯শ টাকা তো? কয়দিন পর পর এই মাইয়ার পত্রিকা বেচার ৯শ টাকা হারায়। আর এই মার্কেটের সামনে বইসা কান্না কাটি করে!!’

কথা শুনে আমরা তো টাসকি! সবাই এখন উনার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ওই লোককে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই আপনি কে? তিনি বললেন, ‘ভাই আমি যমুনা ফিউচার পার্কের সিকিউরিটি গার্ড, এই মাইয়ারে কয়েকবার দেখছি এই কাম করতে!!’

ব্যস, মেয়েটার কান্না থেমে গেলো। তারপর চুপচাপ বসে আছে। এখন কোনো কথাই বলছে না। আমি সবাইকে বললাম, ভাই আপনারা বাসায় চলে যান। ওকে নিয়ে চিন্তা করার কোনো প্রয়োজন নাই। কারণ, আশেপাশেই ওর লোক আছে। টাকাটা পেয়ে গেলেই তিনি এসে ওকে নিয়ে যাবেন।

সবাই আস্তে আস্তে চলে গেলো। হয়তো বা সে আবার কান্না শুরু করবে। নতুন করে আবার একটা জটলা বাঁধবে। কেউ হয়তো মায়া করে তার হাতেই ৯শ টাকা দিয়ে দিবে।

কিন্তু একটা বিষয় আমাদের খেয়াল রাখা উচিৎ, কেউ যদি রাস্তায় এভাবে মোটামোটি বড় অংকের হেল্প চায়, আর আপনি যদি টাকা দিয়ে হেল্প করতে চান। তবে অবশ্যই টাকাটা তার হাতে দিবেন না। প্রয়োজনে টাকাটা যেখানে দেয় প্রয়োজন সেখানের ফোন নাম্বার নিয়ে যোগাযোগ করুন। সরাসরি ওখানে দিন।

মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার সঠিক ব্যবহার হোক। ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More