রাজধানীর মধ্যবাড্ডার নিজ বাসায় দুর্বৃত্তদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মুহম্মদ খিজির খান (৬৫)। গতকাল সোমবার রাতে গোদারাঘাটের জ-১০/১ বাড়ির তৃতীয় তলার ফ্যাটে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে খুনিরা তার স্ত্রী ও সন্তানদের অস্ত্রের মুখে ফ্যাটে জিম্মি করে বেঁধে ফেলে। খবর পেয়ে পুলিশ তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, খিজির খান তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ওই বাসায় বসবাস করতেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৭টার মধ্যে সাত-আটজন যুবক বাড়ি ভাড়া নেয়ার কথা বলে ওই বাড়িতে প্রবেশ করে। এরপর দুই ভাগে ভাগ হয়ে একদল পরিবারের সদস্যদের তৃতীয় তলার একটি কক্ষে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। আর আরেক দল তাকে প্রথমে সালাম দেয়। এরপর কেমন আছেন আংকেল, কী খবর ইত্যাদি তার কাছে জানতে চায়। একপর্যায়ে তারা মুহূর্তে তার হাত পা বেঁধে ফেলে। একজন মুখ চেপে ধরে। পরে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে ধারালো ছোরা দিয়ে তাকে গলা কেটে হত্যা করে নির্বিঘেœ পালিয়ে যায়। পরিবারের সদস্যদের ডাক চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ওই বাড়িতে ছুটে যায়। তারা দেখতে পায় খিজির খানের নিথর দেহ মাটিতে পড়ে আছে। খবর পেয়ে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান। এ সময় র্যাব, ডিবি সিআইডির ক্রাইম সিন ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও সেখানে ছুটে যান। খবর পেয়ে গণমাধ্যমের কর্মীরা সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলেও ওই সময় বাড়িতে কাউকে পুলিশ প্রবেশ করতে দেয়নি।
ঘটনাস্থল থেকে প্রত্যক্ষদর্শী আজাদ নয়া দিগন্তকে বলেন, তিনি স্ত্রী সন্তান নিয়ে ওই বাড়িতে থাকতেন। ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় রহমতিয়া খানকা শরিফের ঢাকা অফিস রয়েছে। সেটির তিনি প্রধান ছিলেন। প্রতি বৃহস্পতিবার ওই খানকা শরিফে জিকির, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হতো। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে তার ভক্তরা এসে জমায়েত হতো। প্রতি সপ্তাহেই খানার আয়োজন করা হতো। এলাকার গরিব মানুষেরা সেখানে খাওয়া-দাওয়া করতে যেতেন। তিনি ঘটনার ব্যাপারে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে সাত-আটজন লোক ওই বাসায় প্রবেশ করে। তখনো এলাকার লোকজন কিছুই বুঝতে পারেনি। এরপর যখন তারা বের হয়ে যায় এর পরই বাড়ি থেকে লোকজনের চিৎকার শোনা যায়। এ সময় আশপাশের দোকানদারসহ অন্যরা ছুটে গিয়ে দেখতে পায় খিজির খানের গলাকাটা লাশ পড়ে আছে। প্রতিবেশীদের ধারণা খুনিরা ভক্তবেশে এসে পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করে থাকতে পারে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায় বলেন, খিজির খানের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে তিনি জেনেছেন, ছয়-সাতজন ব্যক্তি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
কৃষ্ণপদ রায় বলেন, খিজির তরিকাপন্থী ছিলেন। বাসার তৃতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। দোতলায় ছিল তার ‘খানকাহ শরিফ’। এ খানকাহ শরিফের পীর ছিলেন তিনি। দুর্বৃত্তরা প্রথমে বাসার তৃতীয় তলায় উঠে খিজির খানের সাথে কথা বলে। তিনি তাদের দোতলায় যেতে বলেন। এর একটু পর তিনি তৃতীয় তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় নামলে দুর্বৃত্তদের একটি দল প্রথমে তিন তলায় উঠে তার পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে ফেলে। তারা তার স্ত্রী ও ছেলের বউসহ পরিবারের সব সদস্যদের হাত-পা বেঁধে ফেলে। অন্য একটি দল দোতলার খানকাহ শরিফের তিনজন গৃহকর্মীর হাত-পা ও চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর তারা খিজির খানকে খানকাহ শরিফে গলা কেটে হত্যা করে। এলাকাবাসীর ধারণা ভক্ত সেজে দুর্বৃত্তরা তাকে পরিকল্পিতভাবে খুন করে থাকতে পারে।
নিহত খিজির খান কুষ্টিয়া জেলা সমিতির সভাপতি ছিলেন। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে চীনে থাকেন। বড় মেয়ে থাকেন শ্বশুরবাড়িতে। আর ছোট ছেলে ও মেয়ে থাকতেন বাসায়।
গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
গতরাতে বাড্ডা থানার ওসি এম এ জলীল নয়া দিগন্তকে বলেন, এখন পর্যন্ত হত্যার কারণ জানতে পারিনি। কোনো গ্রেফতারও নেই। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এখনো এ ব্যাপারে কিছু বলার সময় আসেনি। আমরা এখন বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।
Next Post