গভীর রাতে ছাত্রীনিবাসে ছাত্রলীগ নেতাদের হানা

0

rajshahi[ads1]পরীক্ষা চলছে। তাই মোবাইল ফোনে লাউড স্পিকারে গান শোনায় আপত্তি জানিয়েছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে রাজশাহী কলেজ ছাত্রীনিবাসের এক ছাত্রীকে বেদম মারধর করেছেন ছাত্রলীগের নেত্রীরা।

শুধু তা-ই নয়, এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ সাধারণ ছাত্রীদের শায়েস্তা করতে গভীর রাতে ওই ছাত্রীনিবাসে ঢোকেন ছাত্রলীগের দুই নেতা। তাঁরা ছাত্রীদের গালিগালাজ করেন। পরে ছাত্রীনিবাসের তত্ত্বাবধায়ক গিয়ে নেতাদের বের করে দেন। কৃতকর্মের জন্য ছাত্রলীগের এক নেত্রী প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলে সাধারণ ছাত্রীরা শান্ত হন। গত বৃহস্পতিবার রাতে এসব ঘটনা ঘটে।
ছাত্রীনিবাসের বেশ কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রীনিবাসের ২০১ নম্বর কক্ষে থাকেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সাবিনা আক্তার। বর্তমানে তাঁর পরীক্ষা চলছে। পাশেই ২০৭ নম্বর কক্ষে থাকেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেত্রী সাবানা খাতুন। সাবানা মুঠোফোনে লাউডস্পিকারে গান শোনেন। পরীক্ষার কারণে বুধবার রাতে এ নিয়ে সাবিনা আপত্তি জানালে সাবানা তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ হন। তিনি বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে ছাত্রলীগের বহিরাগত কয়েকজন নেত্রীকে নিয়ে এসে সাবিনাকে বেদম মারধর করেন। এতে তাঁর ডান হাতের তর্জনী গুরুতর জখম হয়। একপর্যায়ে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে নিচে তত্ত্বাবধায়কের কক্ষের সামনে নিয়ে যান ছাত্রলীগের নেত্রীরা।
এ ঘটনার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ছাত্রীনিবাসের ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষোভের মুখে সাবানা পালিয়ে যেতে পারেন, এই ভেবে তাঁর কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। সাবানা বিষয়টি ফোনে শিক্ষক ও ছাত্রলীগের নেতাদের জানান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিদ্যুৎ চলে যায়। এ সময় রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক উপসম্পাদক রাসিক দত্ত ও নির্বাহী কমিটির সদস্য মমিনুল ইসলাম দিনার প্রধান ফটকের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকেন। তখন রাত ১০টা। এ সময় রাসিকের হাতে লাঠি ছিল। রাসিক ও দিনার ছাত্রীনিবাসের কলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তত্ত্বাবধায়কের কক্ষের সামনে চলে আসেন। এ সময় তাঁরা ছাত্রীদের উদ্দেশে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। খবর পেয়ে শিক্ষকেরা গিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের বের করে দেন।[ads2]
এ ঘটনায় ছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁদের থামাতে শিক্ষক ও নগরের বোয়ালিয়া থানা-পুলিশের সদস্যরা ভেতরে ঢোকেন। তখন ছাত্রীরা তাঁদের কাছে দাবি করেন, সাবানাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে এবং ছাত্রীনিবাস থেকে তাঁকে বের করে দিতে হবে। এ নিয়ে ছাত্রীনিবাসের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল খালেক কয়েকজন শিক্ষক, পুলিশ ও ছাত্রীদের নিয়ে তাৎক্ষণিক বৈঠকে বসেন। রাত আড়াইটা পর্যন্ত চলে ওই বৈঠক। এরপর সাবানা প্রকাশ্যে তাঁর অপরাধের জন্য ক্ষমা চাইলে ছাত্রীরা শান্ত হন। তখন রাত প্রায় আড়াইটা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রীনিবাসের তত্ত্বাবধায়ক আবদুল খালেক গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রলীগের ছেলেরা একটা ভুল তথ্য পেয়ে ভেতরে ঢুকেছিল। তারা মনে করেছিল, তাদের সংগঠনের ছাত্রীকে মারধর করা হচ্ছে। আসলে সে রকম কোনো ঘটনাই ভেতরে ঘটেনি।’
তত্ত্বাবধায়কের দাবি, ছাত্রলীগের নেতা দিনার ও রাসিক বাইরের ফটক পার হয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু কলাপসিবল গেট পার হওয়ার আগেই তিনি ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক আনিসুজ্জামান তাঁদের বের করে দেন।
আবদুল খালেক বলেন, ক্ষমা চাওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হয়েছে। তবে সাবানা ছাত্রীনিবাসে থাকবেন কি না, এ বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কারণ, কলেজের অধ্যক্ষ ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফিরে না আসা পর্যন্ত তাঁরা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।
কাল শনিবার সাবিনার একটি পরীক্ষায় আছে। কিন্তু তিনি ভাঙা আঙুলে কীভাবে পরীক্ষা দেবেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে তত্ত্বাবধায়ক বলেন, ‘সাবিনার হাতের এক্স-রে হয়েছে। তাঁর আঙুল ভাঙেনি। আঘাত পেয়েছে। পরীক্ষা দিতে হয়তো একটু কষ্ট হবে, কিন্তু অন্য কাউকে দিয়ে লেখাতে হলে অনুমতির প্রয়োজন। এখন আর হাতে সে সময়ও নেই।’
আহত ছাত্রী সাবিনা বলেন, তিনি হাত দিয়ে কলম ধরতে পারছেন না। হাত এখনো ফুলে রয়েছে। অন্য কাউকে দিয়ে লেখানোর ব্যবস্থা না করলে তাঁর জন্য পরীক্ষা দেওয়া মুশকিল হবে।
এসব বিষয়ে ছাত্রলীগের নেতা রাসিক ও দিনারের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম বলেন, তিনি ঘটনার সময় রাজশাহীর বাইরে ছিলেন। রাসিক ও দিনারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দিতে বললে তিনি বলেন, তিনি তাঁদের ফোনে পাচ্ছেন না। তবে ঘটনা যদি সত্য হয়, তিনি বিষয়টি দলের নেতাদের জানাবেন।
বোয়ালিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম বাদশার দাবি, পুলিশ ছাত্রীনিবাসের ভেতরে গিয়ে বহিরাগত কাউকে পায়নি। কেউ গিয়ে থাকলে পুলিশ যাওয়ার আগেই বের হয়ে গেছে।[ads1]

সূত্রঃ প্রথম আলো

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More