সায়েদাবাদ থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধে সীমাহীন জনদুর্ভোগ

0
1466530481[ads1]পরিবহন শ্রমিকদের দুই পক্ষের সংঘর্ষের জেরে ১০ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর রাজধানীর সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল আবারো শুরু হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে সাময়িক মীমাংসার পর বিভিন্ন গন্তব্যে বাস চলাচল শুরু হয় গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে। পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, বিকেল ৪টার দিকে টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে বাস ছেড়ে যাওয়া শুরু করেছে। যে কোনো ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঝামেলা এড়াতে টার্মিনাল এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে দুই পক্ষের সংঘর্ষের জের ধরে সকাল ৬টা থেকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে ধর্মঘট শুরু করেন পরিবহন শ্রমিকরা। বিভিন্ন জেলা থেকেও সায়েদাবাদের উদ্দেশ্যে কোনো বাস ছাড়েনি। এতে হাজার হাজার যাত্রী চরম ভোগান্তিতে পড়েন। রাজধানী ঢাকার কর্মমুখী মানুষরা সঠিক সময়ে কর্মস্থলে যেতে পারেননি। বাড়তি টাকা দিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও পায়ে হেঁটে কর্মস্থলে গেছেন। পরিবহন শ্রমিকেরা চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও চাঁদপুরগামী বাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন। গুলিস্তান ও সায়েদাবাদ থেকে নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জসহ রাজধানীর আশপাশের কয়েকটি জেলায় চলাচলরত আন্তঃজেলার বাসও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সোমবার দুপুর থেকে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হলেও গতকাল মঙ্গলবার ভোরে এ সব এলাকা দিয়ে বাস চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন পরিবহন শ্রমিকরা। ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত সায়েদাবাদে কয়েকশ যাত্রীকে নিরুপায় বসে থাকতে দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি এবং ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-কুমিল্লা, ঢাকা-নোয়াখালী রুটের বাস বন্ধ থাকায় কার্যত এসব জেলার সঙ্গে রাজধানীর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। [ads1]
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সমর্থিত ঢাকা জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন ও সরকারি দলের সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লা সমর্থিত ঢাকা আন্তঃজেলা শ্রমিক সংগঠনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন কার্যালয়ের দখলদারি নিয়ে বিরোধিতা চলে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে কার্যালয়টি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের দখলে ছিল। গত রোববার সন্ধ্যার পর এটি দখল করেন ঢাকা জেলা শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিকেরা। এ কারণে সোমবার দুই পক্ষের সংঘর্ষের জের ধরে বেলা পৌনে ১টার দিকে মেয়র হানিফ উড়াল সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। বিভিন্ন বাস কোম্পানির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট রুটের দুদিক দিয়েই বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোনো তথ্য দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ ব্যাপারে ঢাকা-কুমিল্লা রুটের বাস রয়েল কোচের কর্মকর্তা     আফজাল হোসেন বলেন, ‘দুটি শ্রমিক সংগঠনের কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এটি কোনো বাস কোম্পানির সমস্যা নয়। অবরোধ বা ধর্মঘটও নয়। ওই সংগঠনগুলোর কারণে আমাদের বাস চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’ সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গুলিস্তানে একটি কার্যালয়ের দখল নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের দ্বন্দ্বে এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সায়েদাবাদ ও হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে গুলিস্তানে কোনো বাস প্রবেশ করেনি। আবার এখান থেকে কোন পরিবহন যেতে দেয়নি শ্রমিকদের একটি গ্রুপ। এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আনিসুর রহমান জানান, শ্রমিকদের মারামারির জেরে সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করছে না।
সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী জানান, বঙ্গভবনের পূর্বদিকে শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়টি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নিয়ন্ত্রণে ছিল। রোববার রাতে ঢাকা জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন তা দখলে নিতে গেলে বিবাদ শুরু হয়। তিনি জানান, আগে কার্যালয়টি নিয়ন্ত্রণ করতো শ্রমিক নেতা করম আলী গ্রুপ। হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এখন সফর আলী ও রহিম মুন্সি গংরা কার্যালয়টি দখলে নিতে গেলে এই দ্বন্দ্বের শুরু হয়। দোয়েল পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গুলজার হোসেন ভূইয়া জানান, উভয়পক্ষে দু’দফা বৈঠক হলেও কোনো সমঝোতা হয়নি। এরপর মঙ্গলবার সকালে সায়েদাবাদ ও গুলিস্তান থেকে দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় করম আলীর সমর্থক শ্রমিকেরা। তারা মঙ্গলবার সকাল থেকে গুলিস্তান ও সায়েদাবাদ টার্মিনালে অবস্থান নিয়ে বাস চলাচলে বাধা দিচ্ছে। গুলজার হোসেন দাবি করেন, করম আলী গ্রুপের শ্রমিকরা যানবাহন ভাঙচুর ও শ্রমিকদের লাঠিপেটা করছে। এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শক্ত কোনো ভূমিকা নিচ্ছে না। ফলে গোটা রাজধানীতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত রোববার রাতে গুলিস্তানে পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের একটি কার্যালয় দখলে নেয় ঢাকা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন। তবে ওই কার্যালয়টি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের দাবি করে তারা পাল্টা দখলের চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে সোমবার সকালে দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার অবরোধ করে রাখে। ৩ ঘণ্টা পর পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে আকস্মিকভাবে নতুন করে ধর্মঘট শুরু করেন শ্রমিকরা। পূর্ব ঘোষণা ছাড়া এমন ধর্মঘটের মধ্যে যাত্রীরা টার্মিনালে গিয়ে বিপাকে পড়েন। কয়েকটি জেলায় বিআরটিসির কিছু বাস ছেড়ে গেলেও এসব বাসেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন শ্রমিকরা। দিনভরই সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে দুই পক্ষের শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছিল। পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, সোমবার রাতে দুই পক্ষের শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। দুই পক্ষই কার্যালয়টি নিজেদের বলে দাবি করায় এর কোনো সুরহা হয়নি। এদিকে দুপুরে নির্ধারিত বৈঠক হলেও কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। এরপরই বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ নয়ন নিজেদের কার্যালয় ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত ধর্মঘটের ঘোষণা দেন।[ads2]

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More