আরিফুল হক
ফরাসী লেখক এলবার্ট ক্যামু তাঁর এক লেখায় বলেছিলেন ‘জীবন্ত মানুষকেও (চিন্তাশীল) দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করে ঐতিহাসিক বস্তুতে পরিনত করা যায়। এমনকি তারা স্বেচ্ছায় এমন দাসত্ব স্বীকার করে। বিশেষ করে নিজেদের আরাম আয়েসের কথা ভেবে তারা এমন কথাও বলে যে, প্রতিরোধের চেয়ে সহযোগিতা ভাল এবং এই কথা বলে ক্ষমতাবানদের লুটপাটের দৌড়ে যোগ দেয়’।
বর্তমান আওয়ালীগ শাসনে বাংলাদেশের চিন্তাশীল নামে পরিচিত মানুষগুলোর দিকে তাকালে যেন এলবার্ট ক্যামুর এই কথার প্রতিধ্বনি শুনতে পাই। সোনার দেশটা ছারখার হয়ে গেল, বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়লো, তবু এই তথাকথিত ‘জীবন্ত’ প্রানীগুলির কন্ঠে উদ্দাম অদ্ভূত স্বরে উন্নয়নের গীত ধ্বনিত হচ্ছে।
বলতে চাইছিলাম ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ সালের ঐতিহাসিক মোড়ের কথা। যা নাহলে, বা না ঘটলে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যেত। বাংলাদেশ নামে কোন স্বাধীন দেশ আজ থাকত কিনা সন্দেহ।
৭ নভেম্বর ১৯৭৫ এর ইতিহাসের প্রেক্ষাপট জানতে হলে আমাদের (১) আসমুদ্র হিমাচল ভারতবর্ষে মুসলমানদের ৮০০ বছরের শাসনের ইতিহাস জানতে হবে। (২) ইঙ্গ-হিন্দু চক্রান্তে মুসলমান শাসন নস্যাৎ করে ২০০ বছরের জন্য ভারতের স্বাধীনতা ব্রিটিশ বেনিয়াদের হাতে তুলে দেওয়ার ইতিহাস জানতে হবে। (৩) রাজ্যহারা মুসলমানদের উপর ব্রিটিশের শোষন নির্যাতন, এবং লুন্ঠনের ইতিহাস জানতে হবে। (৪) লুন্ঠনকারি ব্রিটিশ এবং তাদের সহযোগী পদলেহী রাজা জমিদারদের বিরূদ্ধে, ২০০ বছর ধরে, স্বাধীনতা পুনঃউদ্ধারের জন্য মুসলমানদের যুদ্ধ সংগ্রামের ইতিহাস জানতে হবে। (৫) ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা, হিন্দু নেতাদের চক্রান্ত, অতঃপর ভারতের দুই প্রান্তে, মুসলমানদের দূর্গ হিসাবে পাকিস্তান রাষ্ট্র গড়ে ওঠার ইতিহাস জানতে হবে। (৬) একই ধারাবাহিকতায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের অভ্যূদয় এবং ততঃপরবর্তি ঘটনার সত্য ইতিহাস জানতে হবে। শাসকশ্রেনী যা মুছে ফেলার চেষ্টা দেশের জন্মলগ্ন থেকেই করে আসছে।
সেজন্যই বলছিলাম ১৯৭৫ সালের ৭নভেম্বরের ইতিহাস বাংলাদেশের যুগান্তকারি ইতিহাস। এনিয়ে একটা দীর্ঘ ইতিহাস লেখা যেতে পারে।
আমরা সকলেই জানি, ৯মাস যুদ্ধের পর বাংলাদেশে স্বাধীনতার অভ্যূদয় ঘটেছিল। যুদ্ধ করেছিল সেনাসদস্য, বিডিআর, পুলিশ, আনসার, ছাত্র এবং দেশের আপামর খেটেখাওয়া মানুষ।
৯মাস যুদ্ধ চলল। লাখো লাশের স্তুপে পা ফেলে স্বাধীনতা এল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মুক্তি এলনা। শুরু হল নতুন ষড়যন্ত্র, নতুন চক্রান্ত।
এতদিন যারা সরল সাধারন মানুষের হাতে সুন্দরীকাঠের লাঠি ধরিয়ে দিয়ে মার্চপাস্ট করাচ্ছিলেন, আর ‘ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল’ বলে হুঙ্কার দিচ্ছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বলে মিথ্যা গলা-ফোলাচ্ছিলেন, এবং তলেতলে প্রধান মন্ত্রীর গদিতে বসার জন্য শত্রু পক্ষের সাথে মিটিং করে তাদের সেনাবল অস্ত্রবল বাড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছিলেন।
প্রকৃত সংগ্রাম ও প্রতিরোধের দিন যখন এল। যেদিন শহরে বন্দরে আগুনের দাবালন জ্বলে উঠল। লাখো লাখো নিরীহ সাধারন মানুষ, গুলির আঘাতে কুকুর বিড়ালের মত রাস্তায় বাজারে ঘরে মরে পড়ে থাকল। তখন ভূয়া সংগ্রামী নেতারা গেঞ্জি গায়ে লুঙ্গী পরে দৌড় দিলেন আগে থেকে ঠিক করে রাখা ভারতের আশ্রয়ে। মূল নেতা শত্রু শিবিরের নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেলেন। দেশ জ্বলতে লাগল কামানের গোলায়।
দূর্যোগপূর্ণ সেই অন্ধকারে আল্লাহর রহমতের দূত হিসাবে আলোর মশাল হাতে এগিয়ে এলেন এক অকুতভয় সৈনিক। শত্রুর বুকের উপর পা রেখেই গর্জে উঠলেন । “We Revolt’’ বলে ঘোষনা করলেন “স্বাধীনতা”।
“I Major Ziaur Rahman declare the indipendence of Bangladesh“ এটাই ছিল প্রকৃত এবং স্পষ্ট স্বাধীনতা ঘোষনা। যা শুনে বাংলাদেশের মানুষের বুকে বিদ্যুতের ঝলক বয়ে গেল। লাখো লাখো মানুষ মৃত্যুভয়কে জয় করে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ল।
৯মাস লক্ষপ্রানের বিনিময়ে এল স্বাধীনতা,তার সাথে ফেনার মত ভেসে এল নতুন ষড়যন্ত্র।
পলাতক নেতারা, যারা আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতের কোলে আশ্রয় নিয়েছিলেন, তারা আগে থকেই আগ্রাসী ভারতের সাথে এক দাসত্ব চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন। যার নাম ছিল “৭ দফা চুক্তি”। এই ৭দফা চুক্তির মর্মার্থ ছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে এর সর্বময় কর্তৃত্ব ভারতের হাতে তুলে দেয়া হবে। দেশ শুধু নামে মাত্র স্বাধীন থাকবে। কিছু মানুষ নামে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী হয়ে আরাম আয়েসে দিন কাটাতে পারবেন।
বাস্তবে হলোও তাই। সমগ্র জাতি যুদ্ধ করল। কিন্তু জাতীয় সরকার হলনা। পলাতক নেতারা দেশে ফিরে এসে ভারতের সাহায্যে সরকার গঠন করলেন। যার নাম ‘আওয়ামীলীগ সরকার’। যুক্তি দেখান হল এরা ছিল সংসদ সদস্য । তারা যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের Lagislator ছিল, যে রাষ্ট্রের এখন কোন অস্তিত্ব নেই। এ যুক্তি মানা হলনা ।
ক্ষমতায় বসেই, নির্বোধ,পদলেহী,ভারত অনুগত আওয়ামীলীগ সরকার ভারতের লুটপাটের জন্য বাংলাদেশের দুয়ার উন্মুক্ত করে দিল।
বাংলাদেশের জন্য মরনফাঁদ নামে পরিচিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধ চালু সহ ২৫ বছর চুক্তির নামে বাংলাদেশের সবকটা নদীর পানি কন্ট্রোলের ক্ষমতা ভারতের হাতে তুলে দিল। দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন করে স্বাধীন দেশের ২.৬৪ বর্গমাইল এলাকা বেরুবাড়ী কেটে ভারতকে উপঢৌকন দিল।
সদ্য স্বাধীন দেশ থেকে পাকিস্তানের ফেলে যাওয়া ট্যাংঙ্ক, কামান সহ সকল সমরাস্ত্র, মিল কারখানার যন্ত্রপাতি, মেশিন পার্টস, আর্মি যান বাহন, দামী প্রাইভেট গাড়ী,এমনকি বাথরুমের ফিটিং পর্য্যন্ত হাজার হাজার কোটি টাকার সামগ্রী দখলদার ভারতীয় বাহিনীকে লুটে নিয়ে যাওয়ার অধিকার দিল।
যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশে সাহায্য হিসাবে পাঠানো ত্রান সামগ্রীও ওরা লুটে নিয়ে গেল। বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিল প্রতিবাদ করায় তাকে কারারূদ্ধ করা হল।
আওয়ামীলীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান দেশটাকে পৈত্রিক লাখেরাজ সম্পত্তির মত ভেবে যা খুশি তাই করতে লাগলেন। ভাই, ভগ্নিপতি, ভাতিজা,ভাগ্নে পুত্রদের মাঝে সরকারি পদ বিলিবন্টন করে পারিবারিক সরকার কায়েম করলেন।
দেশের মানুষের প্রতিবাদের কোন পথই খোলা থাকলনা। প্রতিবাদ করলেই হয় গুম নয়তো খুন।
রক্ষীবাহিনী নামক এক ল’লেস বাহিনী সৃষ্টি করে ৩৭০০০হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা করা হল। যুদ্ধপরবর্তী অযোগ্য অধম আওয়ামীলীগের কুকর্মের কথা বলতে গেলে রাত ভোর হবে যাবে তবু শেষ হবেনা!
যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ হিসেবে বিদেশ থেকে ৫০লক্ষ স্টার্লিংপাউন্ড সাহায্য পেয়েছিল তৎকালীন বাংলাদেশ। যা দিয়ে দু’টো বাংলাদেশ নিজের পা য়ে দাঁড়াতে পারতো বলে বিশেষজ্ঞ মহলে বিশ্বাস। আওয়মীলীগের সরকার সব লুটপাট করে খেয়ে, এক কৃত্রিম দূর্ভিক্ষ সৃষ্টি করে ১০লক্ষ মানুষকে হত্যা করল। পুষ্টিহীনতায় মারা যায় ২লক্ষ। বিনা চিকিৎসায় মারা যায় ১লাখ। জেলখানায় মারা যায় ৯হাজার। আওয়ামী ক্যাডার ও রক্ষীবাহিনীর নির্যাতনে মারা যায় ২৭হাজার। পঙ্গু হয় ২৬০০, গুম-খুন হয় ১লাখ। পিটিয়ে মারা হয় ৭হাজার, গ্রেফতার নির্যাতনের শিকার ২ লাখ।
এছাড়া হাইজ্যাক, ছিনতাই,ব্যাংক লুট, চুরি, ডাকাতি, নারী ধর্ষন, কালোবাজারী, পাচার, বাড়ীঘর দখল, শিল্পপ্রতিষ্ঠান দখল,জমি দখল সহ আওয়ামী লীগের আরও বহু রক্তহীম করা অত্যাচারের সাথে যুক্ত হয় ভারতীয় লুন্ঠন।(জনতার মুখপত্র, নভেঃ ১৯৭৫)সূত্র অনুযায়ী ভারতীয়রা এদেশ থেকে ধান চাল গম লুটে নিয়ে যায় ৮০ লাখ টন। তখনকার বাজার মূল্যে এই লুণ্ঠিত ধান-চাল-গমের দাম ছিল ২১৬০ কোটি টাকা। পাট লুট করে ৫০লাখ বেল, যার তখনকার মূল্য ছিল ৪০০ কোটি টাকা। ত্রান সামগ্রী লুট করে ১৫০০ কোটি টাকার। যুদ্ধাস্ত্র, ইম্পোর্টেড যন্ত্রাংশ, ওষুধ, মাছ, গবাদি পশু, সোনা, রূপা, তামা, কাঁসা, পিতল প্রভৃতি লুট করে ১০০০ কোটি টাকার উপরে।
পাকিস্তান আমলে যে দেশটার অর্থনীতি মজবুত ভিতের উপর দাঁড়িয়েছিল এক রাতেই তা তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিনত হল।
খাবারের অভাবে জীর্নশীর্ন লাশ রাস্তাঘাটে পড়ে থাকতে দেখা গেল। ক্ষুধার জ্বালায় মানুষ বমি খেয়ে, ঘাস পাতা খেয়ে বাঁচার চেষ্টা করল। কাপড়ের অভাবে মা বোনেরা মাছধরার জাল জড়িয়ে লজ্জা নিবারনের চেষ্টা করছে এমন দৃশ্যও দেশি বিদেশী প্রত্রিকায় ছাপা হয়েছিল। এসবই ৭ই নভেম্বরের প্রেক্ষাপট।
তারপর এল ‘বাকশাল’। ‘এক নেতারএকদেশ-শেখ মুজিবের বাংলাদেশ’। চরম স্বৈরাচারি এক শাসন ব্যবস্থা, সরকার পরিবর্তনের কোন বৈধ পথই আর খোলা থাকলনা। দেশ নিস্ব রিক্ত। অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়েছে। বিদেশীরা সাহায্য দেয়া বন্ধ করে দিয়ে বললো যে ওটা Bottomless basket সাহায্য দিয়ে লাভ নেই । দেশজুড়ে শুধু কান্না আর হাহাকার। জালিম ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তির জন্য, ঘরে ঘরে মানুষ আল্লাহর কাছে মোনাজাত করতে লাগল। আজকের মানুষ ভুলে গেলেও এমনই পরিস্থিতি ছিল ৭ই নভেম্বরের প্রেক্ষাপট।
৭ই নভেম্বরের বিপ্লব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাস সবসময় এড়িয়ে চলতে দেখা যায়, তা হল ১৯৭৫ সালের ১৫আগস্টের ইতিহাস। স্পর্শকাতর বিষয় হিসাবে সত্য ইতিহাস উচ্চারন না করা বা বিকৃত করা ইতিহাসবিদদের জন্য অমার্জনীয় অপরাধ।
১৯৭৫ সালের যে সেনা অভ্যূত্থানের ঘটনাকে আজ এত বড় করে হত্যাকাণ্ড বলে দেখানোর প্রচার চলছে, সেদিন বাংলাদেশের জণগন এইদিনটাকেই বর্বর দুঃশাসন থেকে নাজাত দিবস হিসাবে গ্রহন করেছিল। কোন হত্যাকাণ্ডই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ সেদিন যেন মুক্তির নি:শ্বাস নিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতারাই কেউ কেউ স্বদেশী ফেরাউনের হাত থেকে মুক্তি দিবস হিসাবে উল্লেখ করেছিল। যে রক্ত ঝরানো নিয়ে আজ এত আহা উহু রব উঠছে, সেদিন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত কোথাও পাঁচজন মানুষেরও প্রতিবাদ মিছিল বের হয়নি। সবাই ধরে নিয়েছিলেন রক্তচোষা আওয়ামী বাকশালীদের সাড়ে তিন বছরের দুঃশাসনের সেটাই ছিল ল্যজিক্যাল পরিনতি। শিকাগো ডেইলী পত্রিকার (২৩-৬-৭৫) সংখ্যায় জো গ্যান্ডেলম্যান লিখলেন, ‘মুজিব বাংলাদেশের মনিব, এই প্রেক্ষপটে মুজিবকে সরানর একটিই মাত্র পথ খোলা ছিল তা হল তার উৎসাদন’। লন্ডনের গার্ডিয়ান পত্রিকার মিঃ মার্টিন উলাকট ১৯৭৫ সালের ১৬ আগষ্ট লিখলেন-‘মুজিবের মৃত্যুর জন্য মুজিব নিজেই দায়ী’।
১৫ আগষ্টের অভ্যূত্থানের সাথে জড়িত বিপ্লবীদের কাছে সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত ছিল রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামীলীগের এবং দলের প্রধান হিসাবে শেখ হাসিনার। কারণ, তার পিতা কর্তৃক দাফন কৃত আওয়ামীলীগ ১৫আগষ্টের অভ্যূত্থানের কৃপায় আবার দল হিসাবে ফিরে এসেছিল। যার ফলে হাসিনা দেশের প্রধানমন্ত্রীর মর্য্যাদা লাভ করেছেন।
ফিরে আসি ৭ নভেম্বরের কথায়। ১৫ আগষ্টের সেনা অভ্যূত্থান না ঘটলে ৭ নভেম্বরের বিপ্লব সাধিত হত কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ আছে। ৭নভেম্বরে সিপাহী জনতার বিল্পব, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রাণপুরুষ কারারুদ্ধ বীর সৈনিক জিয়াউর রহমানকে মুক্তকরে তাঁকে দেশের হাল ধরতে অনুরোধ করেছিল। অর্থাৎ ৭ নভেম্বরের বিপ্লব বাংলাদেশকে এক মহান, ক্যরিশম্যাটিক, চৌকষ রাষ্ট্রনায়ক উপহার দিয়েছিল।
৭নভেম্বর আমাদের লুন্ঠিত স্বাধীনতা ফিরিয়ে এনেছিল। ৭ নভেম্বর মানুষের গণতন্ত্রের অধিকার পুঃনপ্রতিষ্ঠিত করেছিল।
৭নভেম্বর, ভারতীয় নীল নকশায় পরিচালিত বাংলাদেশের সংখ্যাগুরু মানুষের বিলীন হয়ে যাওয়া জাতিসত্তা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সার্বভৌমত্ব, পুঃনপ্রতিষ্ঠা করেছিল। দেশ থেকে মাৎস্যন্যায় দূর করে ছিল। দেশে কৃষিবিপ্লব ঘটিয়ে দূর্ভিক্ষের দেশকে খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণ করেছিল।
৭নভেম্বর ক্যরিশমাটিক নেতা জিয়াউর রহমানের মত রাষ্ট্র নায়কের আবির্ভাব ঘটেছিল। যিনি ১৯ দফা কর্মসূচীর মাধ্যমে, কৃষি, শিক্ষা,পরিবার পরিকল্পনা,বিদ্যুতায়ন, খনিজসম্পদ আহরনসহ এক মহাউন্নয়ন যজ্ঞে হাত দিলেন। লেজুড় সরকারের করা ২৫ বছরের গোলামীচুক্তি বহাল থাকা সত্বেও জিয়াউর রহমান এক আধুনিক সেনাবাহিনী গড়ে তুলে ছিলেন। জিয়াউর রহমানই ছিলেন ‘ফাদার অফ বংলাদেশ আর্মি’।
৭ই নভেম্বর, ভারতের দেয়া ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানে, বিসমিল্লাহহির রাহমা নিররাহিম সংযোজিত করেছিল। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ঘোষনা করেছিল। ভারত পোষ্য আওয়ামীলীগ ও তাদের তাবেদার কিছু পদলেহী ছাড়া সমস্ত বাংলাদেশী জনগনের কাছে ৭নভেম্বরের সিপাহী জনতার বিপ্লব অত্যন্ত তারপর্যপূর্ণ অধ্যায়। কারণ, সেদিনের বিপ্লবীদের মুখে ঘোষিত হয়েছিল যে তিনটি শ্লোগান। যেমন-
১) নারায়ে তাকবীর-আল্লাহুআকবর।
২) বাংলাদেশ – জিন্দাবাদ।
৩) রুশ-ভারতের দালাল-হুশিয়ার সাবধান!
এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শ্লোগানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের জাতীয় পরিচয়, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, এবং স্বাধীন আত্মপরিচয়ের নব স্ফূরণ ঘটেছিল। যে বাংলাদেশের মানুষ এতদিন ইসলাম উচ্ছেদের পর্ব সহ্য করে আসছিলেন তারা সেদিন কথা বলার অধিকার ফিরে পেয়েছিলেন।
সব শেষে বলতে হবে জিয়াউর রহমান ছিলেন অসমান্য দূরদর্শী একজন আন্তর্জাতিক মানের স্টেটসম্যান। তিনি ঘুমাতেন না। বলতেন ঘুমিয়ে পড়ার আগে আমাকে যোজন পথ পাড়ি দিতে হবে।
বাংলাদেশ মীরজাফরের দেশ, বেইমানের দেশ! আধিপত্যবাদীদের দোসররা জিয়াউর রহমানকে তার কাঙ্খিত যোজন পথ অতিক্রম করতে দেয়নি। ঘাতকের বুলেট এই মহান নেতাকে চিরতরে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছে।
আধিপত্যবাদীদের সেই বুলেট জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে তৃপ্ত হয়নি। আজও সেই অতৃপ্ত বুলেট তাড়াকরে ফিরছে প্রতিটি জাতীয়তাবাদীকে, প্রতিটা দেশ প্রেমিক নাগরিককে।
আজ অবশিষ্ট আছে কি জিয়াউর রহমানের মত কোন মহান দেশপ্রেমিক নেতা?
আবারো সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে ৭ নভেম্বরের মতই আরেকটি বিপ্লবের নেতৃত্ব দেওয়ার মত কোন নেতা আছে কি?
লেখক: বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বহু গ্রন্থের লেখক
উৎসঃ আমার দেশ