ঢাকা: দু’বেলা অন্ন জোগাতে হিমশিম খায় যেসব শ্রমিকরা তাদের পক্ষে আইনের বিধিমালা বোঝা সম্ভব না হলেও সেই আইনের মারপেঁচেই ওভারটাইম আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দেশের প্রায় ১৬ লাখ পোশাক শ্রমিক।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের শ্রম আইনের ১০৮ ধারা অনুযায়ি দিনে ৮ ঘন্টার বেশি ও মাসে ২০৮ ঘন্টার বেশি কাজ করলে দ্বিগুন হারে ওভারটাইম পাবেন শ্রমিকরা।
তবে চলতি বছরে জানুয়ারির শেষের দিকে শ্রম মন্ত্রণালয় কতৃক প্রজ্ঞাপন জারি করা হয় যে শ্রম আইনের ১০৮ ধারার উপধারা ২’ এর পিস রেটে কর্মরত শ্রমিকদের জন্য এই ধারা রোহিত করা হল। এর ফলে দেশের ১৬ লাখ পিস রেটে কর্মরত শ্রমিক আর ওভারটাই আইনগতভাবেই পাবে না। শুধু তাই না শ্রমিকদের দিয়ে যতো ঘণ্টা ইচ্ছা কাজ করিয়ে নিতে পারবে মালিকপক্ষ।
কিন্তু শ্রম আইন অনুযায়ী কোনো শ্রমিক ওভারটাইম করলেও সব মিলিয়ে সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টার বেশি কাজ করানো যাবে না। মাসে কোনো শ্রমিককে মোট ২৪০ ঘন্টার বেশি কাজ করানো হলে তা শ্রম আইন অনুযায়ি রীতিমতো আইন লঙ্ঘনের শামিল বলে জানা যায় শ্রমিক সংগঠনগুলোর সূত্রে।
মালিকদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই এই আইন রোহিত করে শ্রমিকদের ওভার টাইম থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন এর সভাপতি অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, শ্রমিকরা বরারবই এ শিল্পকে ভালবেসেই কাজ করেন। আর তাই পিস রেটে কর্মরত শ্রমিকদের মালিকরা ওভারটাইম দিতে গড়িমসি করছিল দেখে শ্রমিকরা বলেছিলো পুরো দ্বিগুন ওভারটাইম না দিলেও নির্দিষ্ট কোনো একটি গড় হারে ওভারটাইম দেয়া হোক। শ্রমিকরা সমঝোতায় আসতে চাইলেও মালিকপক্ষ থেকে কোনো সমঝোতায় আসা হয়নি।
অন্যদিকে পিসরেটের শ্রমিকদের ওভারটাইমের কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন গার্মেণ্টস মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এর নেতৃবৃন্দ।
বিজিএমইএ এর সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজীম বাংলানিউজকে বলেন, যারা পিস রেটে কাজ করেন তাদেরতো এমনিতেই আয় বেশি। তাছাড়া যা উৎপাদন করবে তারাই টাকা পাবে। এখানে আবার ওভারটাইম এর কি আছে।
ওভারটাইম থেকে বঞ্চিত শ্রমিকরা এখন ভেতরে ভেতরে ক্ষোভে ফুঁসছেন বলে জানায় শ্রমিকরা। আর এতে যদি তারা আবার পথে নেমে আসেন তাতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
ইতোমধ্যেই শ্রম আইন এর ১০৮ ধারার উপধারা ২ রোহিত করায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রয়োজনে শ্রমিকরা শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন এ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান ইসমাইল।
মামলা করার বিষয়ে তিনি বলেন, শ্রমিকরা কখনোই কোনো অশান্তি চায় না। তাই এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবেই প্রতিবাদ করে আসছে। কিন্তু এতে তেমন কোনো ফলই পাওয়া যাচ্ছে না। এখন শ্রমিকরা মামলার কথা চিন্তা করছেন। আর কিছুদিন পরিস্থিতি দেখে শ্রম মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি।
রানা প্লাজা ধ্বসে সহস্রাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার পরই গত বছর শ্রম পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর দাবিতে। আর আন্দোলনের ফলস্বরূপ ২০১৩ সালের নভেম্বর মাসে ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার ৩০০ টাকা করা হয়। বেড়ে যায় মালিকদের ব্যয়। নতুন ন্যূনতম মজুরি ঘোষণার পর থেকেই ব্যয় কমানোর জন্য মালিকপক্ষ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে ।