জেনে নিন কে এই ‘প্রিন্স ড. মুসা বিন শমসের’ !

0

NulaMusaফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট এলাকার মদনগোপাল আঙ্গিনার মেয়ে কমলা ঘোষ। বাবা অমূল্য ঘোষ লবণ ব্যবসায়ী। সবে বিয়ে হয়েছে কমলার। বাবার বাড়ি বেড়াতে আসতে না আসতেই একাত্তরের পঁচিশে মার্চের কাল রাতে শুরু হয় দেশব্যাপী পাকি সৈন্যদের হত্যাযজ্ঞ, তাণ্ডব। ফরিদপুরেই আটকা পড়ে যায় কমলা। একদিন পাকি মেজর আকরাম কোরায়শী ও তিন পাকি সেনা সহযোগে মদনগোপাল আঙ্গিনায় ঢোকে নুলা মুসা। কমলাদের ঘরে কমলাকে নিয়ে আদিম উল্লাসে ফেটে পড়ে পাকি সেনারা। সেদিন কমলার কোন আর্তনাদই পাকি দুর্বৃত্তদের মন গলাতে পারেনি। রক্তাক্ত ও অজ্ঞান কমলা পড়ে থাকে ঘরের মেঝেয়।

এক কান দু’কান করে এ ঘটনা জেনে যায় কমলার স্বামী। কমলাকে গ্রহনে অস্বীকৃতি জানায় স্বামী। আর স্বামীর ঘর হয়নি কমলার। লোকলজ্জায় একা একাই দেশ ছেড়েছে কমলা। বিদেশ বিভূঁইয়ে এবাড়ি-ওবাড়ি কাজ করে নিজেকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে কমলা, বাঁচিয়ে রেখেছে একাত্তরের বীভৎস স্মৃতি।

ফরিদপুর শহরের মহিম স্কুল সংলগ্ন ধর্মশালা দেখাশোনা করতো কেষ্টমণ্ডল। কেষ্টমণ্ডলের চার মেয়ে-ননী, বেলী, সোহাগী ও লতা। নুলা মুসার তত্ত্বাবধানে এই বেলী ও ননী মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় পাকি সৈন্যদের মনোরঞ্জনে বাধ্য হয়েছে। পরে এই চার বোন ও তাদের মা মাখনবালার ঠাঁই হয়েছিল ফরিদপুরের পতিতাপল্লীতে। বয়স বেড়ে যাওয়ায় সে ব্যবসাও এখন নেই। চার বোন এখন গোয়ালচামটের এক নিভৃত স্থানে অতীত ঢেকে কাটাচ্ছে এক মানবেতর জীবন। শুধু কমলা, ননী, বেলী নয়, পাকি সেনাদের হাতে অর্ধশতাধিক বাঙ্গালী মা-বোনের সম্ভ্রম লুটের প্রধান অনুঘটক হিসেবে একাত্তরে কাজ করেছিল কুখ্যাত এই নুলা মুসা। একাত্তরে পাকি ‘দোস্ত’ সেই নুলা মুসাই এখন ঢাকার রহস্যে ঘেরা ধনাঢ্য ব্যবসায়ী, দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী পরিবারের নতুন আত্মীয়, স্বঘোষিত প্রিন্স, তথাকথিত ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রির অধীশ্বর মুসা-বিন-শমসের।

এখন তার নাম প্রিন্স ডঃ মুসা-বিন-শমসের হলেও সার্টিফিকেটে নাম এডিএম মুসা। মুসা-বিন-শমসের কিংবা এডিএম মুসা- কোন নামেই ফরিদপুরের মানুষ তাকে চেনে না। এক হাত খানিকটা বিকলাঙ্গ হওয়ায় তার ব্যাপক পরিচিতি ‘নুলা মুসা’ হিসেবেই। ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটের পুরনো বাসস্ট্যান্ড এলাকার তথাকথিত পীর ‘সাম্যবাদী তাপস শমসের বাঙ্গালী’ ওরফে শমসের মোল্লার তৃতীয় পুত্র এই নুলা মুসা। মুসা পরিবারের আদি নিবাস ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার ফুলসুতি ইউনিয়নের কাজীকান্দা-হিয়াবলদী গ্রামে। ১৯৬৮ সালে শহরের ঈশান স্কুল থেকে এসএসসি পাস করে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়েছিল মুসা। ১৯৮৬ সালে মুসার নামের আগে ‘ডক্টর’ সংযুক্ত হলেও রেকর্ডপত্রে নুলা মুসা ওরফে এডিএম মুসা ওরফে প্রিন্স ডঃ মুসা-বিন-শমসেরের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশের কোন প্রমাণ মেলেনি কোথাও। আর তাই ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রিটাও তার মতো রহস্যেঘেরা। বাকপটু মুসার ছিল ইংরেজি ও উর্দু কথোপকথনে পারদর্শিতা। বয় স্কাউটের ডিস্ট্রিক্ট লিডার হিসেবে সে পাকিস্তানের করাচী থেকে একাধিক পুরস্কারও পেয়েছে। সত্তরের নির্বাচন ও একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলনে আওয়ামী লীগের পক্ষে মাইকিং কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখলেও মুসার ছিল শক্ত পাকি কানেকশন। অভিযোগ আছে, একাত্তরের ২১ এপ্রিল পাকি সৈন্যদের ফরিদপুরে ঢোকার ব্যাপারে মানচিত্র ও পথনির্দেশনা দিয়ে নেপথ্যে সহযোগিতা করেছে এই মুসা। তার প্রমাণ পাওয়া যায় পাকি মেজর আকরাম কোরায়শীর সাথে মুসার গভীর ঘনিষ্ঠতায়। ফরিদপুরে পাকি সৈন্য ঢোকার পরদিন অর্থাৎ একাত্তরের ২২ এপ্রিল ফরিদপুর সার্কিট হাউসে মেজর আকরাম কোরায়শী ও নুলা মুসাকে দেখা যায় খুবই অন্তরঙ্গ পরিবেশে। সেদিন এই দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেন মুক্তিযোদ্ধা একেএম আবু ইউসুফ সিদ্দিক পাখী।

মেজর আকরাম কোরায়শীর সাথে গভীর সম্পর্কের কারনে মুসা একাত্তরে হয়ে উঠেছিল এক মূর্তিমান আতঙ্ক। মুসার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সহযোগিতায় পাকি সেনা, রাজাকার-আলবদর তথা পাকি দোসররা একাত্তরে নৃশংসভাবে খুন করেছিল শহরের মদনগোপাল আঙ্গিনার চন্দ্রকান্তনাথ, গৌরগোপাল আঙ্গিনার বিজয় মজুমদার, টেপাখোলার কবির আহমেদ চৌধুরী, গুড়বাজারের শেখ মোঃ আবু আব্দুল্লাহ দুলাল, খোদাবক্স রোডের অপরেশ সাহা, ভোম্বল সাহা, বৈদ্যনাথ সাহাসহ অগণিত মুক্তিপাগল জনতাকে। একাত্তরে খুন, ধর্ষণ, লুটপাটে মুসার সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিল মজিদ বিহারী, আবুল বিহারী, কালু বিহারী, মানিক বিহারী, চান্দা, ভেটকা, আয়নাল, আইয়ুব, অনু, পান্নু, চন্দন, রবি, আহমেদ মৌলানা ওরফে হাম্মাদ মৌলানাসহ অর্ধশতাধিক পাকি দোসর। নুলা মুসা ও তার সহযোগীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় একাত্তরে পাকি সেনা ও রাজাকার-আলবদররা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটায় সাবেক সংসদ সদস্য শহরের ইমাম উদ্দিন আহমাদ, নিত্যানন্দ কবিরাজ, সুখেন্দু রায়, মুক্তিযোদ্ধা আজাদ সিদ্দিকী, অহিভূষণ পোদ্দার, ধীরেন সাহা, চন্দ্রকান্তনাথ, নিমাই সাহা, পুটে সাহা, কৃষ্ণপদ সাহা, কৃষ্ণ বিশ্বাস এবং হরেন সাহার বাড়িসহ রথখোলা, লাহিড়ীপাড়া, ওয়্যারলেসপাড়া, শোভারামপুর ও বিভিন্ন মহল্লার সহস্রাধিক বাড়িতে। রথখোলা দত্তবাড়ি লুটপাটের আরেক নায়ক ফরিদপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছিল। মোটর পার্টসের দোকান লুটকারী এ লুটেরাবাহিনী শহর এলাকার বাইরে মুন্সীবাজার, কৈজুরী, ঈশান গোপালপুর, তালমা, ভবুকদিয়া, কাজীকান্দাসহ অসংখ্য জনপদে চালিয়েছে তাণ্ডব। শহরের লাহিড়ীপাড়ায় যখন লুটপাট-তাণ্ডব চলছিল তখন পাকি মেজর আকরাম কোরায়শীর সাথে ছিল মুসা। সেদিনের যুবক, আজকের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের একজন ব্যবস্থাপককে লাহিড়ীপাড়া থেকে মুসার ইঙ্গিতে পাকি সেনারা সেদিন ধরে নিয়ে যায় সার্কিট হাউসে। পরে অনেক দেনদরবারের পর প্রাণে বেঁচে যান তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের ব্যাংক ব্যবস্থাপক একাত্তরে নুলা মুসার তাণ্ডবের বর্ণনা দিতে গিয়ে শিউরে ওঠেন। মেজর আকরাম কোরায়শীসহ অনেক পাকি সেনা সদস্যের অবাধ যাতায়াত ছিল মুসার বাড়িতে। মুসার পিতা তথাকথিত পীর শমসের মোল্লা পাকি সেনাদের মনোবল বাড়াতে তাদের গায়ে ফুঁ দিত আর বলত-‘ইন্ডিয়া পাকিস্তান বন জায়গা।’

শহরের একটি পরিবারের তিন বোনকে মুসা মাঝেমধ্যেই মিলিটারি জীপে তুলে নিয়ে যেত সার্কিট হাউসে পাকি মেজরের আস্তানায় গান শোনাতে। পরে পাকি ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি বোন তিনটির বাবা। তাঁকেও নৃশংসভাবে খুন করা হয়েছিল। ফরিদপুরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ শহরের সব শহীদ মিনার মুসা পাকি সেনাদের দিয়ে ভেঙ্গে ফেলে। পাকি সেনারা তালমার অমূল্য কুণ্ডু ও কার্তিক সাহার বাড়ি থেকে লুট করে এনেছিল ৮ মণ পরিমাণ সোনা। কথিত আছে, এ বিপুল পরিমাণ সোনা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা পাকি সেনারা তালমাকে পূর্বপাকিস্তানের ‘রাজধানী’ আখ্যা দিয়েছিল। পাকি সেনারা ব্যাংক থেকেও বিপুল পরিমাণ টাকা ও সোনা লুট করেছিল। অভিযোগ রয়েছে, তালমার সোনা লুট ও ব্যাংক লুটের ঘটনার সাথে জড়িত ছিল নুলা মুসা তথা আজকের প্রিন্স ডঃ মুসা-বিন-শমসের।

একাত্তরে এই কুখ্যাত মুসার মূল ভূমিকাটি ছিল পাকি সেনাদের নিত্য সহচর হিসাবে ঘাতকদের সকল অপকর্মের পথ নির্দেশনা দেয়া। পাকি মেজর আকরাম কোরায়শী মুসাকে বলত ‘দোস্ত’। দেশ স্বাধীন হবার পর ডিসেম্বরেই পাকি দোস্ত নুলা মুসা মুক্তিযোদ্ধাদের ভয়ে ফরিদপুর থেকে পালিয়ে চলে যায় পাবনায়। সেখানে বড় ভাইয়ের শ্যালিকাকে বিয়ে করে ঢাকা ও চট্রগ্রামে ছোটাছুটি করে।
এমন অভিযোগ রয়েছে, ঢাকার এক অবাঙালীকে পাকিস্তানে পাঠানোর নাম করে সে তার সহায়সম্পদ আত্মসাতের মাধ্যমে একপর্যায়ে ঢাকায় শাহবাজ ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি আদম ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলে। বিদেশে লোক পাঠানোর নামে উত্তরবঙ্গের ২/৩শ’ লোকের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে মুসা বিদেশে উধাও হয়ে যায়। বছর তিনেক পর ঢাকায় ফিরে এসে DATCO নামের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে আবার শুরু করে আদম ব্যবসা। পাশাপাশি চলে অস্ত্র ও অবৈধ হুণ্ডির ব্যবসা। এরশাদ আমলে তৎকালীন ফার্স্ট লেডিকে ‘ডক্টরেট’ খেতাব এনে দিয়ে লাইমলাইটে চলে আসে নুলা মুসা ওরফে আজকের প্রিন্স ডঃ মুসা-বিন-শমসের। আর পিছনে ফিরতে হয়নি মুসাকে। বিত্তবৈভবে শুধুই সামনে এগিয়ে চলা, শুধুই রাজকীয় জীবনযাপন করা। সূত্রটি জানায়, মুসা ১৯৮৭ সালে কোরীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান DONGHA COMPANY-এর মাধ্যমে লিবিয়ায় লোক পাঠিয়েছিল। এজন্য কমিশন বাবদ মুসার কাছে কোরীয় কোম্পানিটির পাওনা হয়েছিল প্রায় দু’কোটি টাকা। এই পাওনা পরিশোধ নিয়ে নানা কথা শোনা যায়। দেশের বা বিদেশের প্রতারিতরা মুসার বিরুদ্ধে টুঁ-শব্দটি করতে পারে না। কারণ মুসা সব সময়ই ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রভাবশালী এক মন্ত্রীর পুত্রের সাথে নিজের কন্যার বিয়ে দিয়ে প্রভাব, প্রতিপত্তি ও দাপটের মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে নিয়েছে। তার বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকার চাঞ্চল্যকর আয়কর মামলাটিও হিমাগারে চলে গেছে। ব্রিটেনের লেবার পার্টিকে বিশাল অঙ্কের চাঁদা দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচিত প্রিন্স ডঃ মুসা-বিন-শমসের দেশী-বিদেশী অনেক জাঁদরেল সাংবাদিককেও ভুয়া তথ্য দিয়ে আত্মপ্রচারের মাধ্যমে প্রতারিত করেছে, বোকা বানিয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। সর্বশেষ মুসা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্তির অপচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়।

মুসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট স্পর্শকাতর বিষয়ে পুঙ্খানুপঙ্খ তদন্ত দাবি করে একাত্তরে নুলা মুসার অনেক অপকর্মের সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা ও বাস শ্রমিক একেএম আবু ইউসুফ সিদ্দিক পাখী বলেন, পাকি সেনাদের নিত্যসহচর কুখ্যাত মুসার মতো পাকি দোসরদের স্বরূপ উন্মোচন করতে একমাত্র জনকণ্ঠই পারে, জনকণ্ঠই পারবে। একাত্তরের ডিসেম্বরে ফরিদপুর থেকে পালিয়ে আসা মুসা আর দিনের আলোয় ফরিদপুরে ঢুকতে পারেনি-এ কথার উল্লেখ করে পাখী বলেন, সে দিন বেশি দূরে নয় যেদিন একাত্তরের ঘাতক-দালাল পাকি দোসরচক্র ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের অর্জন প্রিয় বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হবে।

স্যার বাসায়, স্যার বিদেশে !
জনকণ্ঠের এ প্রতিবেদক মুসা-বিন-শমসেরের সাথে কথা বলতে ফরিদপুর থেকে টেলিফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেন তার ঢাকাস্থ বনানীর ড্যাটকো অফিসে ও গুলশানের বাসায়। ড্যাটকো অফিস থেকে এক ব্যক্তি জানান, স্যার বাসায়। বাসায় টেলিফোন করা হলে এক মহিলা বার বার প্রতিবেদকের পরিচয় জানতে চান। জনকণ্ঠের পরিচয় দিতেই মহিলাটি রিসিভার রেখে দেন। একই নম্বরে আবার টেলিফোন করা হলে মহিলাটি নিজেকে টেলিফোন অপারেটর পরিচয় দেন, নাম বলেন ফাহিমা। মুসা-বিন-শমসেরের সাথে কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করলে মহিলাটি ‘স্যার বিদেশে গেছেন’ এ কথা বলেই রিসিভার রেখে দেন। আবার ড্যাটকো অফিসে যোগাযোগ করা হলে এক ব্যক্তি ‘স্যার বিদেশে, কবে ফিরবে জানি না’-এ কথা বলেই রিসিভার রেখে দেয়।

জনকণ্ঠ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More