বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, আমার জায়গায় হলে অনেক মেয়েই

0

girls-ha.নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।

“আমার বিয়ে হয় এইচ.এস.সি-এর পর, পারিবারিক ভাবে। খুব আগ্রহ নিয়ে তারা প্রস্তাব দিয়েছিল। আমার বড় বোন তখনও বাকি, তাই আম্মু রাজি ছিলেন না। কিন্তু কেন যেন বিয়েটা হয়ে গেল। আমার বাপি তখন অসুস্থ। আমার তখন ১৯ বছর। পরিবারে ছোট ছিলাম তাই অনেক কিছুই বুঝতামও না।
হাজবেন্ড আমার থেকে ১৫ বছরের বড়। বুঝতে পারলাম ও আমার থেকে একেবারেই আলাদা। আমি চঞ্চল, ও চুপচাপ। তারপরও চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি কখনো। তাও সব মেনে নিয়ে চলছিলাম ভালই। কিন্তু মুল সমস্যা হয়ে দাঁড়াল আমার শাশুড়ি। তার সাথে কেউ কথা বললে বুঝতে পারবে যে তিনি দুনিয়ার সবচে ভালো মানুষ গুলোর একজন। কিন্তু খুব কাছ থেকে যারা দেখেছে তারা জানে ডাবল ফেসড মানুষ কাকে বলে। তিনি যে আমার সাথে কী কী করেন আমি কাউকে বলতেও পারিনা। যেমন আমি যদি আমার জামাই এর সাথে বসে কথা বলি হঠাৎ দেখব সে দাঁড়িয়ে কথা শুনছে। বা ভাত খেতে যাব ,সব সময় খাবারের দিকে তাকিয়ে থাকবে। ভাব এমন যে আমি না জানি কত খাই! এমনও হয়েছে যে কারেন্ট গেলে প্লেটে টর্চ মেরে দেখেছে কতটা খাচ্ছি। খেতেও ঘেন্না লাগে আজকাল।

কারো কাছে আমার বদনাম করে না শুনেছি- কিন্তু ব্যাপারগুলোকে এমন ভাবে উপস্থাপন করবে যে সবাই আমাকেই ভুল বোঝে। হয়ত গেস্ট আসবে, আমি কষ্ট করে সারা বেলা রান্না করলাম-সে তেমন কিছু করল না। কিন্তু মেহমান আসলে এমন দৌড়াদৌড়ি শুরু করবে যে সবাই আমাকে ভাবে আমি কিছুই করিনি। আমার সম্পর্কে বিভিন্ন কথা আমার আম্মুকেও বলেছে যে আম্মু পর্যন্ত ভুল বুঝতো। আম্মু আমার বাসায় আসত না পর্যন্ত। তাহলে বোঝেন যে তার পরিবার কী ভাবে?

বিয়ের পর এখানে এসে ভর্তি হই। অনার্স , মাস্টার্স কমপ্লিট করি। আমার মেয়েটা তখন ছোট। আমি পরীক্ষা বা ক্লাসের জন্য ৬-৭ ঘণ্টা বাইরে থাকলে আমার মেয়ে না খেয়ে থেকেছে। বলত যে মেয়ে নাকি খায় না তার কাছে। মাস্টার্স পরীক্ষা শেষের ঠিক দু মাসের মাথায় খাওয়া শুরু। তখন মেয়ে দাদী ছাড়া কিছু বুঝে না। এক দিন মেয়ের টেবিল থেকে একটা তাবিজ বের হল – যে ” আমার প্রতি ফাইজার আগ্রহ বাড়িয়ে দাও” । আমি বুঝলাম আমার মেয়েকে তাবিজ করা হয়েছে। আরও তাবিজ পেয়েছিলাম আগে কিন্তু আমি আগে পাত্তা দেইনি। কিন্তু এবার মন ভেঙ্গে গেলো। আমার টুইন বেবির বয়স ১৭ মাস। বাচ্চা দুটা হতে গিয়ে প্রায় মরেই গেছিলাম। সেই বাচ্চা দুটার সব কাজ বলা চলে একা করেছি। কিন্তু ঠিক যখনই বাচ্চার বাবা আসার সময় হবে, তখন শাশুড়ি আমার ঘরে এসে বসবে। হাজবেন্ড জানে যে মা-ই তো সব করছে। এমন কি তারা আমাকে চোর ভাবতেও বাদ রাখেনি। তার ঘরে ঢুকলেও নিজেকে ছোট লাগে। হয়তো পিছনে পিছনে এমন একটা কথা বলতে শুনলাম যে নিজের ইগোতে বাঁধে।

এমন ছোট খাটো হাজারটা কথা যা আসলে লিখে শেষ করা যাবে না। সে আসলে ফেমাস হতে পছন্দ করে। প্রতিটা কথা এমন ভাবে বলবে যে সেই সবচে ভালো কিন্তু আমাকে ছোট করে বসবে। গত ১২ বছরের বেশি সহ্য করছি আপু। জানি সবাই আমাকেই ভুল বুঝবে। হয়তো আমি গুছিয়ে লিখতে পারলাম না। কিন্তু সব সময় এই মিথ্যা অভিনয়,মিথ্যা ভালো সাজা আর ভালো লাগে না। আমার কথা হল সে যদি মন থেকে কোন কিছু না করে তাহলে করার দরকার নাই। কিন্তু মিথ্যা বলে নিজেকে বড় করা কেন? কেন আমাকে আমার হাজবেন্ড-এর সামনে নিচু করা? এসব কারণে ওর সাথেও আমার সম্পর্কটা কখনোই সুন্দর হয়নি। ও আমাকে সব কিছুতেই ভুল ভুঝেছে সারা জীবন। আর আগেই বলেছি যে সেও আমাকে সেই সাপোর্ট দেয়নি যে আমি নিজেকে সামলে নিব। এমন কি শারিরিক ভাবেও আমি অসুখী। সেই দিকেও তার ভ্রুক্ষেপ নাই। অনেক কিছু শেয়ারও করতে পারিনি কারো সাথেই। বিয়ের পর অনেকেই আম্মুকে বলেছে যে এমন সুন্দর মেয়েটাকে এমন একটা বয়স্ক ছেলের সাথে বিয়ে দিলে? শিক্ষা, সৌন্দর্য বা যোগ্যতায় সব দিক থেকে আমি আমার হাজবেন্ড বা তার পরিবারের সবার চেয়ে আমি বেশি আছি। আমি কখনোই তা নিয়ে কিছু বলিনি। বরং প্রথম থেকেই তাকে বুঝাবার চেষ্টা করেছি যে সে কত স্পেশাল আমার কাছে। তাই বলে তার অবহেলা সহ্য করাব তা তো একটা শিক্ষিত মেয়ের পক্ষে সম্ভব না আপু।

নিজে জান প্রাণ দিয়ে পড়া লেখা করলাম । কত ভালো জব করতে পারতাম। কিছুই করা হল না বাচ্চাদের মুখের দিকে তাকিয়ে। আজ আমি নিঃস্ব বেকার। নিজেকে খুঁজি। কার বউ কার মা কার মেয়ে হয়ে বেঁচে থাকলাম। কোন কষ্টই জামাই এর সাথে বলার সুযোগ পেলাম না। অনেক বলতাম যে দেখ আমি ছোট। ভুল যদি করি বুঝিয়ে বল। কিন্তু সে তা না করে হয়ত কথা বন্ধ করে দিত। নিজেকে কোথাও পৌঁছাতে পারলাম না আপু। তবুও আমার সব কষ্ট এই বাচ্চা গুলার মুখের দিকে তাকিয়ে হয়ত মেনে নিতে পারতাম। কিন্তু মেয়েটাও হল ডাউন সিনড্রোম এর। এমন হাজারটা কষ্ট সহ্য করতে করতে আমি এখন নিজেকে সামলাতে পারছিনা । বীভৎস রকমের রাগ উঠে মাঝে মাঝে। জামাইকে নিজের মত করে না পাওয়ার কষ্ট, শাশুড়ির ক্রমাগত অভিনয়, আমার অসুস্থ বাচ্চা, নিজে কিছু করতে না পারা, নিজেকে খোঁজা- নির্জীব বিনোদন হীন ছক বাঁধা জীবন। আমি আর পারছিনা।

তাতে যে ব্যাপারটা হচ্ছে সেটা হল আমার রাগ বাড়ছে। সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করছি। সবাই আমাকেই ভুল বুঝছে। কিন্তু আমি কেন এমন করছি তা কেউ বুঝছে না। স্বামীকে এমন বলেছি যে আমি সাইকিয়াট্রিস্ট-এর কাছে যেতে চাই। আমি জানি আমার হরমনাল ইম্বালান্সও আছে। হাজারটা দোষের মাঝে শাশুরি বা জামাই এর গুনও আছে নিজেকে বোঝাই। নিজেকে বুঝাবার চেষ্টা করি যে দুনিয়ায় এর চাইতে কত খারাপ মানুষ আছে। প্রিয় আনসার পড়েও মনে হয় জীবনটা হয়তো এত খারাপ না। কিন্তু রাগ উঠলে নিজেকে সামলাতে পারছিনা। শাশুড়িকে সহ্য করতে পারছি না। ইদানিং জামাইকেও ভিত্তিহীন ভাবে বিরক্তিকর লাগছে।

মনে হয় এত বছর যখন সহ্য করেছি তখন আর একটু কেন নয়? কিন্তু পারছি না। আমি চাইছি সম্পর্কটা সুন্দর করতে । কিন্তু ওর সাহায্য বা শাশুড়ির অভিনয় বন্ধ না হলে তাতো সম্ভব না। অনেক কিছু লিখলাম। অনেক কিছু লেখা হলনা। অনেক দিন পর লিখতে বসে বুঝলাম ছোট বেলার লেখালেখির গুনটাও নষ্ট হয়েছে আমার ব্রেন এর মতই। যা হোক আপু, আমি এর সমাধান চাই। আর ,একজন খুব ভালো মহিলা মানসিক ডক্টর এর খোঁজ চাই। আর আপু আমি আশা করব কেউ আমাকে ভুল বুঝবেন না। হয়তো গুছিয়ে লিখতে পারিনি কিন্তু বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি আমার জায়গায় হলে অনেক মেয়েই আরো আগে কঠিন কোন সিন্ধান্তে পৌছাতো। আমি চাইছি কীভাবে আরএকটু বুদ্ধি করে চললে সম্পর্কগুলো ভালো হবে?”

পরামর্শ:
প্রথমত আপু, আপনার কোন সাইকিয়াট্রিস্টের প্রয়োজন নেই। আপনি মানসিক রোগী নন যে সাইকিয়াট্রিস্ট লাগবে। আপনার একজন ভালো ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিসট প্রয়োজন, যার কাছে আপনি নিয়মিত থেরাপি নিতে পারবেন বা কাউন্সিলিং করাতে পারবেন। আপনার এমন একজন বন্ধু প্রয়োজন, যাকে আপনি নিয়মিত ভাবে নিজের মনের কথা খুলে বলতে পারবেন। আপনার জীবনে কী চলছে সেটা বলতে পারবেন। এবং সব শুনে তিনি নিরপেক্ষ পরামর্শ দিতে পারবেন, আপনাকে ভালোমন্দ বলতে পারবেন। আর এই কাজের জন্য প্রয়োজন অপরিচিত কেউ। সেই অপরিচিত বন্ধু আপনি একজন ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিসটের মাঝে পেতে পারেন। আমরা কারো নাম বা যোগাযোগের নম্বর তাঁদের অনুমতি ছাড়া দিতে পারি না। তবে বড় বড় হাসপাতালগুলোতে এই সেবাটি আপনি পেতে পারেন। যদি আমাকে মনের কথা বলতে চান, বন্ধু হিসাবে আমিও আছি পাশে।

এবার আমি কিছু কথা বলি, আপনি দয়া করে মন দিয়ে শুনুন আপু। প্রথমত আপু, আমি আপনাকে ভুল বুঝছি না। বরং একেবারেই ঠিক ঠিক বুঝতে পারছি। জীবনের একটা পর্যায়ে এমন অন্তহীন হতাশার মাঝ দিয়ে আমাকেও যেতে হয়েছে। এত গভীর হতাশা, মনে হতো যে জীবন এখানেই শেষ। এর চাইতে ভালো কিছু আর আমার জীবনে ঘটবে না, আমি কখনো সুখী হতো পারবো না। রাত হলে হাউমাউ করে কাঁদতাম। সবার সাথে রাগ করতাম আর মেজাজ করতাম। কিন্তু এমন কেউ ছিল না যাকে নিজের কষ্ট খুলে বলতে পারি। শুধু মরে যেতে ইচ্ছা করতো…

সেই অবস্থা থেকে আমি নিজেই নিজেকে টেনে বের করেছি আপু। আপনি নিজেও পারবেন। আপনি একই সাথে অনেকগুলো সমস্যার শিকার। সেই সমস্যাগুলো আপনাকে এক এক করে সমাধান করতে হবে। একটির সমাধান শুরু হলে আরেকটিও সমাধান হতে শুরু করবে। আমি পয়েন্ট আকারে কিছু কথা লিখে দিচ্ছি। আপনি একটু মনযোগ দিন আপু।

১) আপনার সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে আপু আইডেনটিটি ক্রাইসিস। আপনি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন, নিজেকে নিয়ে আর সুখী নন, নিজেকে আর কোথাও খুঁজে পাচ্ছেন না। আমরা যখন নিজেকে নিয়ে সুখী থাকি না, তখন আসলে পৃথিবীর কাউকেই ভালো লাগে না। অন্যদিকে যখন নিজেকে ভালো লাগে, তখন খুব খারাপ একটা অবস্থাকেও খুব খারাপ লাগে না।

এই অবস্থা থেকে মুক্তি পাবার একটাই উপায় আপু, নিজের একটা জায়গা খুঁজে নেয়া পৃথিবীতে। এমন একটা কিছু করা, যেটার জন্য মানুষ আপনাকে চিনবে। কারো স্ত্রী, কন্যা বা মা হিসাবে নয়। আমি কিন্তু দেখলাম যে আপনি এখনো ভীষণ চমৎকার লেখেন। চাকরি বাকরি করার সুযোগ আপনার নেই বুঝতে পারছি। কিন্তু আজকাল অনলাইনে খুব সহজেই ঘরে বসে লেখালিখি করা যায়। আর সেটা থেকে ভালো উপার্জনও করা যায়। একই সাথে নাম কামানোর ব্যাপারটি তো আছেই। আপনি দৈনিক কিছুটা সময় বের করে অনলাইনে লেখালিখি করতে শুরু করুন। ফেসবুকে লিখুন, ব্লগে লিখুন, বিভিন্ন অনলাইন সাইটে লেখা পাঠান। আপনি যেভাবে গুছিয়ে লেখেন, তাতে আমি নিশ্চিত যে খুব সহজেই আপনি পাঠক প্রিয় লেখক হয়ে যাবে। একবার যখন আত্মপরিচয় খুঁজে পাবেন, দেখবেন মনের মাঝে এই তীব্র হতাশা কাটতে শুরু করেছে।

২) আপনার অনেক আগেই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা উচিত ছিল। তাহলেই আপনি ভালো থাকতেন। সেটা না নিয়ে আপনি ভালোমানুষি দেখিয়ে সংসার চালিয়ে গেছেন এই আশায় যে পরিস্থিতির বদল হবে। কিন্তু সেটা হয়নি। বরং সন্তান এসেছে সংসারে, আপনার হাত পা চিরতরে বেঁধে ফেলেছে। এখন জীবন আপনার কাছে একটা নিরানন্দ বন্দীশালা হয়ে গিয়েছে। যে স্বামীর সাথে শারীরিক মানসিক সুখ পাচ্ছেন না, একের পর এক তার সন্তানের মা হওয়াটা বেশ বড় বোকামি হয়েছে। সন্তান নেয়ার আগে সম্পর্কের উন্নতি হয় কিনা দেখা দরকার ছিল।

যাই হোক, যা হয়ে গেছে তা হয়ে গেছে যেহেতু আপনাকে এই সংসারেই থাকতে হবে, তাই শিখে নিতে হবে স্বামী বা শাশুড়ি কাউকে পাত্তা না দেয়ার। তাঁদের কথা তখনই আপনার গায়ে লাগবে না, যখন আপনি নিজের দুনিয়ায় ব্যস্ত থাকবেন। ঝামেলামুক্ত থাকার জন্য নিজের সাথে নিজেই একটা চুক্তি করুন। আর সেটা হচ্ছে আপনি প্রয়োজনীয় কথার বাইরে কাউকে নিজে থেকে কিছু বলতে যাবেন না। এবং যে আপনার সাথে যেমন ব্যবহার করবে, তার সাথে ঠিক তেমনই পাল্টা ব্যবহার আপনি করবেন। বোবার শত্রু নেই আপু। শাশুড়ি বা স্বামী যা করছে, করতে দিন। স্বামীকে আপনি জীবনেও বোঝাতে পারবেন না যে আপনার শাশুড়ি কোন ধরণের অভিনয় করে। তাই স্বামীকে আর কিছুই বলতে যাবেন না। সকল অভিযোগ একদম বন্ধ। এতে স্বামীর সাথে সম্পর্ক ভালো হতে শুরু করবে। সম্ভব হলে শাশুড়ির সাথে জোর করে হলেও মিষ্টি ব্যবহার করবেন, বিশেষ করে সকলের সামনে। অর্থাৎ শাশুড়ি আপনার সাথে যা করে আপনিও ঠিক তার সাথে তাই করুন। দেখবেন স্বামী ও অন্যান্যদের সামনে আপনার ইমেজ বদলে যেতে সময় লাগবে না। এবং তখন আপনাকে খারাপ সাজাতে চাইলেও পারবে না শাশুড়ি। বরং চেষ্টা করলে তার সরূপ বের হয়ে যাতে পারে।

৩) আমার মনে হয় আপু, আপনার জীবনে এই মুহূর্তে একটি পরিবর্তন খুব প্রয়োজন। আপনি কিছুদিনের জন্য স্বামী ও শাশুড়ির কাছ থেকে দূরে চলে যান। বাচ্চাদের নিয়ে বাবার গিয়ে কিছুদিন থেকে আসতে পারেন। ক্রমাগত সামাজিক, মানসিক, সাংসারিক চাপে আপনার বিশ্রাম হয় না। আপনার মন বিশ্রাম চায়। কোথাও চলে যান, নিজেকে সময় দিন। পছন্দমত খান, একটু ঘুমান, আর অনেক চিন্তা করুন। নিজের দিকে মনযোগ দিন। নিজেকে সাজান, রূপচর্চা করুন, প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটান, তাই করুন যা ভালো লাগে। এতে আপনার হতাশা ও কষ্ট যেমন কমবে, মনের ভার হালকা হবে, আপনার বাচ্চাদের ভালো লাগবে। মাঝে মাঝে জীবনকে উপভোগ করারও দরকার আছে। আর এই দূরত্বের কারণে স্বামী ও শাশুড়িকে যে আপনি সহ্য করতে পারছেন না, এই ব্যাপারটাও অনেকটাই কমবে। কারণ আপনার মন শান্ত হবে। তাঁরা আপনাকে মিস করবে, আপনি তাঁদের মিস করবেন। ফিরে আসার পর বেশ শান্ত ভাবে নতুন করে শুরু করতে পারবেন।

৪) আর শেষ কথা আপু। আমি এত কথা কারো জন্য লিখি না, আপনার জন্য লিখছি। অসুস্থ সন্তানটির দিকে তাকিয়ে হলেও নিজেকে জোড়া লাগিয়ে নিন। মনে রাখবেন, আপনি যদি ভেঙে পড়েন, এই বাচ্চাটির ভবিষ্যৎ কিন্তু অন্ধকার। আপনাকে অনেক বড় লড়াই লড়তে হবে জীবনে। আর আপনি যদি না পারেন, আপনার সন্তানের জন্য সেই লড়াই আর কেউ জিততে পারবে না। আপনি কেবল নিজের একটা অস্তিত্ব খুঁজে বের করুন আপু। দেখবেন, আপনার সকল সমস্যা এক এক করে ফিকে হতে শুরু করেছে। আর শাশুড়ির কথা ভুলে গিয়ে স্বামীর দিকে সময় দিন। স্বামীর পছন্দগুলো মাথায় রাখুন। সেই অনুযায়ী কাজ করুন। নিজের ভালোবাসা দিয়ে স্বামীকে কাছে টেনে নিন, যা আগে কখনো হয়নি ঠিক তাই করুন। তাঁকে স্ত্রী ও সন্তানের প্রেমে পড়তে বাধ্য করুন। আপনার হাতে অনেক বড় একটি অস্ত্র আছে- সন্তান। সেই সন্তানের মোহে স্বামীকে বেধে ফেলুন যেভাবেই হোক। সময় লাগবে। কিন্তু এটা সম্ভব।

বিশেষ দ্রষ্টব্য
আমি কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক বা আইনজীবী নই। কেবলই একজন সাধারণ লেখক আমি, যিনি বন্ধুর মত সমস্যাটি শুনতে পারেন ও তৃতীয় ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু পরামর্শ দিতে পারেন। পরামর্শ গুলো কাউকে মানতেই হবে এমন কোন কথা নেই। কেউ যদি নতুন কোন দিক নির্দেশনা পান বা নিজের সমস্যাটি বলতে পেরে কারো মন হালকা লাগে, সেটুকুই আমাদের সার্থকতা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More