বাংলাদেশের ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি এমপির পদত্যাগের পর সরকারি দল আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উকিল আব্দুস সাত্তারের সংসদ সদস্য হওয়ার পর বিএনপির অনেকে মনে করছেন তাদের দলকে অস্বস্তিতে বা বিপদে ফেলতে সামনে সংসদ নির্বাচনেও এমন কৌশল নিতে পারে আওয়ামী লীগ।
যদিও আওয়ামী লীগ বলছে মিস্টার সাত্তারকে বিএনপি থেকে এনে প্রার্থী করা হয়নি বরং তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে। এবং এর সাথে সংসদ নির্বাচনকে মেলানো ঠিক হবে না বলেও মনে করছে দলটির নেতারা।
প্রসঙ্গত, উকিল আব্দুস সাত্তার ২০১৮ সালের নির্বাচনে একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছিলেন। গত ১১ই ডিসেম্বর বিএনপির সিদ্ধান্তে তিনি পদত্যাগ করায় সংসদ সদস্য পদটি শূন্য হয়েছিলো।
পরে উপনির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আওয়ামী লীগের নেতারা তার সমর্থনে প্রচার প্রচারণা চালান। এমনকি আওয়ামী লীগ বা তাদের জোট এ উপনির্বাচনে প্রার্থীও দেয়নি।
বরং স্থানীয় বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছিলেন যে উকিল আবদুস সাত্তারকে নির্বাচনে জিতিয়ে আনতে সরকারি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে নানা তৎপরতা চালানো হচ্ছে, যা সরকারি দলের নেতারা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
হর্স ট্রেডিং নির্বাচনে দেখা যাবে?
তবে পুরো ঘটনা প্রবাহ বিশ্লেষণ করে বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন যে তারা মনে করছেন এটি আওয়ামী লীগের নতুন একটি কৌশল। তারা বিএনপিকে একটি ইঙ্গিত দিলো যে বিএনপি যদি শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে নির্বাচনে না আসে তাহলে দলটির অনেক নেতাকেই হয়তো এভাবে বিজয়ী করে আনার প্রলোভন দেখানো হতে পারে।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলছেন তারা কিছুটা হলেও উদ্বিগ্ন এবং সতর্ক। যদিও এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার কৌশলও তার দলের আছে বলেই জানান তিনি।
“হর্স ট্রেডিংয়ে আওয়ামী লীগ সিদ্ধহস্ত। কিন্তু আমরা কিন্তু এগুলো এমনি ছেড়ে দিবো না। বিএনপি থেকে আগেও অনেক বড় তারকা গেছে কিন্তু বিএনপির তাতে কিছু যায় আসেনি। সামনেও এমন হলে শূন্য স্থান পূরণের কৌশল এখন আমাদের জানা আছে,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
এবার উপনির্বাচনে উকিল আব্দুস সাত্তারের পক্ষে ঢাকা থেকে গিয়ে সক্রিয় প্রচারণা চালিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন।
তিনি বলছেন আওয়ামী লীগ মিস্টার সাত্তারকে দল থেকে ভাগিয়ে এনে নির্বাচন করায়নি বরং দলের সিদ্ধান্তেই তিনি পদত্যাগ করেছিলেন।
“উনি তার দলের সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করেছেন এবং নিজের সিদ্ধান্তে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। আওয়ামী লীগ কোনো ষড়যন্ত্র করেনি। বয়োজ্যেষ্ঠ রাজনীতিক তিনি। সে কারণে তাকে সম্মান দেখানো হয়েছে। আর উপনির্বাচনের সাথে সংসদ নির্বাচনের সম্পর্কও নেই। তাই সংসদ নির্বাচনে এমনটা ঘটবে এমন ভাবার কারণ নেই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন মিস্টার হোসেন।
নির্বাচন: বিএনপি এলে কেমন, না এলে কেমন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সব নেতাই পরিষ্কার বলছেন যে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিবে এবং তারা সেই নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দিতে সরকারকে বাধ্য করবেন।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগও পরিষ্কার করেই বলছে যে নির্বাচনে হবে সংবিধান অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই।
এখন প্রশ্ন হলো বিএনপি যদি তাদের দাবি অনুযায়ী নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে আওয়ামী লীগকে বাধ্য করতে না পরে এবং নির্বাচন যদি ২০১৪ সাল ও ২০১৮ সালের মতো শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েই যা সেক্ষেত্রে বিএনপি কী করবে।
বিএনপির কোনো নেতাই এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দিতে পারেননি। তবে কেউ কেউ বলেছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপের কারণে আওয়ামী লীগ আগের দুটি নির্বাচনের মতো করে এবার নির্বাচন করতে পারবে না।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেউ কেউ মনে করেন শেখ হাসিনার অধীনেই বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেবে গত নির্বাচনের মতোই।
কিন্তু নির্বাচন যদি আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই হয় এবং তাতে যদি বিএনপি অংশ না নেয় তাহলে বিএনপির কিছু নেতাকে দিয়ে ‘উকিল আব্দুস সাত্তার স্টাইলে’ নির্বাচন করানো হতে পারে এমন ইঙ্গিতই এবারের উপনির্বাচনে সরকার দিয়েছে বলে মনে করেন বিএনপিরই একটি অংশ।
আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ হোসেন অবশ্য বলছেন জাতীয় নির্বাচন সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি বিষয় যেখানে প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রার্থীরা আছেন।
“আমরা নিজেদের লোকদেরই দিয়ে শেষ করতে পারছি না সেখানে বিএনপি নেতাদের আসন ছেড়ে দিবো- এটা তো যুক্তির কথাই হতে পারে না। সংসদ নির্বাচনের সাথে রাষ্ট্রক্ষমতা জড়িত। সেটা নিয়ে এমন ভাবনার সুযোগই নেই,” বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল নিজেও একাধিকবার বিএনপির এমপি ছিলেন। তিনি বলছেন পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সরকারের কোনো ফাঁদে বিএনপির কেউ পা দিলে সেই জায়গা দ্রুতই পূরণ হয়ে যাবে।
“আমরা বলতে পারেন কিছুটা সতর্ক। কারণ আওয়ামী লীগ এগুলো করতে পারে। দলের অভ্যন্তরে আমরাও সে ধরনের প্রস্তুতি নিয়েই চলছি,” বলছিলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিলো। তবে দলটির তেমন কোনো নেতাকে তখন এই সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করতে দেখা যায়নি।
অবশ্য ২০১৮ সালে আওয়াম লীগের অধীনেই নির্বাচন করে বিএনপি মাত্র সাতটি আসন পেয়েছিলো। যদিও এই নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখার ব্যাপক অভিযোগ ওঠেছিলো।
এবার চলতি বছরের শেষ দিকে যে নির্বাচন হওয়ার কথা সেই নির্বাচন কীভাবে হয় এবং তাতে বিএনপি অংশ নেয় কি-না বা কীভাবে অংশ নেবে-সেদিকেই দৃষ্টি থাকবে সবার।
তবে নির্বাচন আওয়ামী লীগের অধীনেই হলে এবং বিএনপি অংশ না নিলেও দলীয় নেতাদের কেউ কেউ যে নির্বাচনে অংশ নেবেন- সেই গুঞ্জন আছে দলের ভেতরেই।