৮ মাছের দাম ৩০ লাখ টাকা, জেলে পরিবারে আনন্দের বন্যা

0

কক্সবাজারের মহেশখালী দ্বীপে সমুদ্রপাড়ের এক জেলে পরিবার ছোটো নৌকা নিয়ে বেরিয়ে বাড়ির পাশের সমুদ্র থেকে ধরে এনেছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ৮টি কালা পোয়া মাছ। এ নিয়ে ওই জেলে পরিবারে আনন্দের বন্যা বইছে।

nagad-300-250
জানা গেছে, মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি ইউনিয়নের জেলেপাড়া এলাকার মোহাম্মদ শহিদুল হক বহদ্দারের এফবি মা-বাবার দোয়া নামের মাত্র ২৪ অশ্বশক্তির মাছ ধরার একটি ছোটো নৌকা আছে। ওই নৌকাটি নিয়ে প্রতিদিনের মতো সোমবার (২৮ নভেম্বর) মাছ ধরতে বেরিয়ে পড়েছিল তার ছোট ভাই একে খান। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিল আরও দুই-তিনজন স্থানীয় জেলেকে।

সকালে কয়েকটি ছোট জাল ও নৌকাটি নিয়ে বের হয়ে পাশের সমুদ্রের কুয়াঁরদ্বার নামক পয়েন্টে কয়েকটি জাল ফেলে তারা। জাল ফেলার কয়েক ঘণ্টা পর দুপুরের দিকে একে একে জাল তোলা হচ্ছিল। কিন্তু দুই-একটি জাল তোলার পর জেলেরা হতাশ হয়ে পড়েন। এবার কোনো জালেই মাছ পড়েনি তাদের।

এ অবস্থায় শেষ দুপুরের দিকে তুলতে যাচ্ছিল সর্বশেষ জালটি। টেনে টেনে নৌকায় জাল তোলার মুহূর্তেই জেলেদের চোখ কপালে ওঠার মতো ঘটনা ঘটে যায়। জাল টানার সঙ্গে একে একে নৌকায় উঠতে লাগল আস্ত বড় সব মূল্যবান পোয়া মাছ। বাজারে যার অর্থমূল্য অনেক বেশি। একে একে আটটি বিশালাকৃতির পোয়া মাছ নৌকায় তুলে দিনের নির্দিষ্ট সময়ের আগেই বাড়ি ফিরেন তারা।

ছোট এই নৌকাটি চালাচ্ছিলেন স্থানীয় আব্দুল মজিদ মাঝি। সবার চোখেমুখে হাসির ঝিলিক। ঘাটে নৌকা বেঁধে জেলেপাড়ায় এসে পৌঁছাতেই বড় মাছ ধরে আনার খবরটি চাউর হয়ে যায়। স্থানীয় পাইকাররাও চলে আসেন এসব মাছ কেনার জন্য।

এরই মধ্যে চট্টগ্রামের মাছের আড়তের বড় ব্যবসায়ীদের কাছেও এ খবর চলে যায়। তারাও মোবাইল ফোনে কথা বলে এসব মাছ কেনার জন্য দফা-রফা করতে থাকে।

মাছের মালিক শহিদুল হক বহদ্দারের পক্ষ থেকে এই আটটি মাছের দাম হাঁকা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। স্থানীয় পাইকাররা কয়েকজন মিলে এই মাছ কিনতে চেয়েছেন ২৫ লাখ টাকায়। তবে শেষ পর্যন্ত স্থানীয়ভাবে এই মাছ বেচাকেনা হয়নি রাত পর্যন্ত। চট্টগ্রামের পাইকাররা আরও বেশি মূল্যে মাছগুলো কিনতে রাজি হওয়ায় এসব মাছ বরফ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। সকালে চট্টগ্রামে বিক্রির জন্য নিয়ে যাওয়া হবে এসব মাছ।

মহেশখালীর মাতারবাড়ি ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জেলেপাড়া এলাকার মোহাম্মদ শহিদুল হক বহাদ্দারের ছোট ভাই মাছ ধরার সময় নৌকায় থাকা একে খান ও স্থানীয় বাসিন্দারা যুগান্তরকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

জেলে একে খান বলেছেন, তাদের জালে এই মূল্যবান মাছ ধরা পড়ার পর পরিবারের সবার মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। এর আগে কখনো তাদের নৌকায় এমন মাছ ধরা পড়েনি। শেষ বিকালে তারা মাছ-ভর্তি নৌকা নিয়ে উপকূলে ফিরেন।

বৈজ্ঞানিক সূত্রে প্রকাশ- এ মাছগুলো সামুদ্রিক জো-ফিস প্রজাতির। এটির বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে ‘প্রোটোনিবিয়া ডায়াক্যান্থাস’। এসব মাছের বায়ুথলি সাধারণত তিনটি কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রথমত- সার্জিক্যাল কাজে ব্যবহার হয় সুতা হিসাবে, দ্বিতীয়ত ভিটামিন-ই ক্যাপসুল তৈরি হয়, সর্বশেষ বিদেশে এসব মাছের বায়ুথলি দিয়ে অনেক দামি সুপ বানানো হয়।

মূলত বিদেশে উচ্চমূল্যে এই বড় মাছ ও এসব মাছের বায়ুথলি রপ্তানি হয় বলেই মাছটির এত মূল্য। হংকংসহ দুনিয়ার বহু দেশেই এই মাছের বায়ুথলি আকার ভেদে গ্রেড হিসেবে বিক্রি হয়। বঙ্গোপসাগরে এই মাছের অধিকমাত্রায় বিচরণ রয়েছে বলে জানা যায়।

কক্সবাজারসহ মহেশখালীর জেলেদের জালে প্রায়ই এই মাছ ধরা পড়ে। এর আগে গত বছর এই মাসেই ২৫টি কালো পোয়া ধরা পড়েছিল মাতারবাড়ির জনৈক সৈয়দ বহদ্দারের জালে।
jugantor

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More