হামলার কারণেই সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান খানের মৃত্যু, অভিযোগ বিএনপির

0

পটুয়াখালী বড় মসজিদ মাঠে বিএনপি নেতা শাহজাহান খানের দ্বিতীয় নামাজে জানাজাছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালী জেলা বিএনপির নেতা ও পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান খানের (৭০) মৃত্যুতে দলীয় নেতা–কর্মীরা শোক প্রকাশ করেছেন। অনেকে ক্ষোভের কথাও জানিয়েছেন। বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছিলেন শাহজাহান খান। ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

বিএনপি নেতারা বলছেন, ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের হামলাতেই প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ মারা গেলেন। তবে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের দাবি, বিএনপির দলীয় কোন্দলের কারণে নিজেদের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছিল।

বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দেওয়ার পথে আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছিলেন শাহজাহান খান। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ২২ নভেম্বর ঢাকার ধানমন্ডিতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি হন। গতকাল সকাল ১০টা ২০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

শাহজাহান খান দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। একসময় পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। সর্বশেষ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ১ নম্বর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ৫ নভেম্বর বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সমাবেশ ছিল। আগের দিন সন্ধ্যার পরে শাহজাহান খানসহ দলের কিছু নেতা–কর্মী কয়েকটি মোটরসাইকেলে করে পটুয়াখালী থেকে বরিশাল যাচ্ছিলেন। পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের বদরপুরের গাবুয়া এলাকা পার হওয়ার সময় ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা অতর্কিতে তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে শাহজাহান খানসহ কয়েকজন নেতা–কর্মী আহত হন। আহত অবস্থায় পটুয়াখালীতে স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শ নেন তিনি। এদিকে শাহজাহান খানের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ২২ নভেম্বর তাঁকে ঢাকার ধানমন্ডিতে ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

হামলার কারণেই সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান খানের মৃত্যু, অভিযোগ বিএনপির

শাহজাহান খানের বড় ছেলে জেলা যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শিপলু খান বলেন, ‘আমার পিতা একজন বয়স্ক মানুষ। তাঁর রাজনৈতিক কোনো শত্রুতা ছিল না। বিএনপি করাই ছিল তাঁর অপরাধ।’ আওয়ামী লীগের কর্মীদের বেধড়ক মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ তুলে শিপলু খান বলেন, ‘আমরা এ সরকারের আমলে মামলা করে ন্যায়বিচার পাব না। তাই এই সরকারের আমলে মামলা করব না। আমি আমার পিতার এই মৃত্যুর বিচার জনগণের কাছে দিলাম।’

পটুয়াখালী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব স্নেহাংশু সরকার বলেন, বরিশালে গণসমাবেশে যোগ দেওয়ার পথে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের বেদম মারধরে তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন, আসলে শাহজাহান খান আগে থেকেই কিডনি রোগে ভুগছিলেন। তাঁর ওপর হামলার ঘটনা তাঁদের দীর্ঘদিনের দলীয় কোন্দলের কারণে হয়েছে। এর আগেও দলীয় কোন্দলের জেরে বিএনপির নিজেদের মধ্যে হামলার ঘটনা ঘটেছে। শাহজাহান খানের ওপর হামলার ঘটনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

বিএনপির গণসমাবেশের আগের দিন সাবেক একজন সংসদ সদস্য হামলার শিকার হয়েছেন—এমন কোনো অভিযোগ পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে পটুয়াখালী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, শাহজাহান খানের ব্যাপারে তাঁর পরিবার কিংবা বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আজ মঙ্গলবার বাদ মাগরিব নিজ গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপার চিকনিকান্দি ইউনিয়নের দক্ষিণ সুতাবাড়ীয়ায় পারিবারিক কবরস্থান শায়িত হলেন বিএনপি নেতা শাহজাহান খান। বেলা সাড়ে তিনটায় মরদেহ গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছে। চিকনিকান্দি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে কয়েক হাজার নেতা–কর্মী ও সাধারণ মানুষ তাঁর জানাজায় অংশ নেন।

এর আগে গতকাল বাদ জোহর শাহজাহান খানের মরদেহ ঢাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে দলীয় নেতা–কর্মীরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। পরে দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালামসহ দলীয় নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎসঃ প্রথমআলো

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More