মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন অব্যাহতভাবে বাড়ছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যে শহর থেকে গ্রামে, গ্রাম থেকে শহরে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুযোগ তৈরি হওয়ায় মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং শুধু টাকা আদান-প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং অনেক নতুন সেবা যুক্ত হচ্ছে এতে। প্রতি মাসেই বাড়ছে বিভিন্ন সেবা বিল দেয়ার পরিমাণ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লেনদেনের পরিমাণও। গত ডিসেম্বরে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৩৭ কোটি টাকা। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকসংখ্যা সোয়া ৩ কোটি ছাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনে গ্রাহকসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ১৮ লাখ ৪৫ হাজার। যেখানে ১ মাসের ব্যবধানে অর্থাৎ নভেম্বর মাসের তুলনায় ২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ গ্রাহক বৃদ্ধি পেয়েছে। নভেম্বরে শেষে গ্রাহক ছিল ৩ কোটি ১২ লাখ ২ হাজার। নভেম্বরের তুলনায় ডিসেম্বরে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৩৭ কোটি কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা আগের মাসে ছিল ৪৯৭ কোটি টাকার ওপরে। এখানে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি লেনদেন হয়েছে। আবার গ্রাহকের পাশাপাশি বেড়েছে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিনিধি বা এজেন্ট। নভেম্বরের চেয়ে ডিসেম্বরে এজেন্টের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৬১ হাজার ১৯৮ জনে। আগের মাসে যা ছিল ৫ লাখ ৫২ হাজার ৬৫২ জন। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহকসংখ্যা সোয়া ৩ কোটি ছাড়িয়েছে। গ্রাহক বৃদ্ধির সঙ্গে বেড়েছে অ্যাকটিভ (সক্রিয়) অ্যাকাউন্টের সংখ্যা।
ডিসেম্বরে সচল অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩২ লাখ ১৮ হাজার। আগের মাসে ছিল সচল অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ডিসেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রায় ১৬ হাজার ১২৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে, যা নভেম্বর মাসে ছিল ১৪ হাজার ৯১৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। সে হিসাবে মাসিক লেনদেন বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগের মাসের তুলনায় ডিসেম্বরে প্রবাসী আয়ের লেনদেন বেড়েছে ১৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ সময়ে লেনদেন হয়েছে ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকা যা নভেম্বরে ছিল সাড়ে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। এ সেবার মাধ্যমে ডিসেম্বর মাসে টাকা উত্তোলন (ক্যাশ আউট) করা হয়েছে ৫ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা, যা আগের মাসে ছিল ৫ হাজার ৪৭৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। ডিসেম্বর মাসে অন্যের হিসাবে টাকা পাঠিয়েছেন এমন লেনদেনের পরিমাণ ২ হাজার ৭৫০ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা আগের মাসে ছিল ২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ১৫৪ কোটি ১৫ লাখ টাকা, যা আগের মাসে ছিল বেতন ১৪০ কোটি ৯১ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে সেবা-বিল পরিশোধ হয়েছে ১০৯ কোটি ১২ লাখ টাকা। এর আগের মাসে যা ছিল ৯৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অন্যান্য খাতে ডিসেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন হয়েছে ৩৪৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘সব শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছে বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে এই সেবাটি অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই এর গ্রাহকসংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি লেনদেনের পরিমাণও বাড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমানে গ্রাহকসংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে এখন সঠিক গ্রাহক ও লেনদেনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক এ পর্যন্ত ২৮ ব্যাংককে অনুমোদন দিলেও এ সেবা দিচ্ছে ২০ ব্যাংক। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান বিকাশের গ্রাহকসংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং এরপরই আছে ডাচ-বাংলা ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং। সম্প্রতি এ সেবার নীতিমালা অনুযায়ী গ্রাহকের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ পরিচিতি ছাড়া অ্যাকাউন্ট খোলার বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। একই সঙ্গে নাশকতা, ঘুষ লেনদেনসহ নানা অপরাধমূলক কাজে অর্থ লেনদেনে যাতে এ মাধ্যম ব্যবহƒত না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করা হচ্ছে।