কেসিসির ৫৫ লাখ টাকার দরপত্র যুবলীগ নেতাদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা

0
Jubo_Leagueখুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) বিভিন্ন রাস্তা ও অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ৫৫ লাখ টাকার দরপত্র ভাগাভাগি করে নিয়েছেন আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা। টেন্ডার জমা দেয়াকে কেন্দ্র করে গতকাল নগরভবনে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। নগরীর গল্লামারী এলাকার চিহ্নিত একদল সন্ত্রাসী কেসিসির পূর্ত বিভাগের সামনে ও নির্বাহী প্রকৌশলীর কক্ষে পাহারা বসায়। এর আগের রাতে সাধারণ ঠিকাদারদের কাছ থেকে দরপত্র নিয়ে নেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কেসিসি সূত্রে জানা গেছে, নগরীর গল্লামারী এলাকায় লিনিয়ার পার্কের প্রবেশ রাস্তার উন্নয়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি। এই কাজের ব্যয় ধরা হয় ৫৫ লাখ ৫১ হাজার টাকা। গতকাল ছিল দরপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৬টি শিডিউল বিক্রি হয়। জমা পড়ে ১৪টি। এর মধ্যে বৈধ কাগজপত্র রয়েছে মাত্র তিনটির। বাকি ১০টির কোনো কাগজপত্রই নেই। একটির আংশিক কাগজপত্র আছে।
গতকাল দুপুরে নগরভবনে গিয়ে দেখা গেছে, মূল ভবনের পেছনে লোকজন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজ। ২০০৪ সালে প্রণীত পুলিশের তালিকায় খুলনার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। পূর্ত ভবনের সামনে চেয়ার পেতে ৬-৭ জন যুবক বসা। তারা গল্লামারী এলাকার উঠতি সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত। ভবনের দ্বিতীয় তলায় নির্বাহী প্রকৌশলী-২ লিয়াকত আলী খানের কক্ষে ছিল দরপত্র জমা দেয়ার বাক্স। সেখানেও হাফিজের সহযোগী চঞ্চল এবং যুবলীগ নেতা জাহিদুল খলিফা পাহারায় ছিলেন।
কেসিসির একাধিক কর্মকর্তা জানান, এর আগেও কেসিসিতে দরপত্র সিন্ডিকেট হয়েছে। কিন্তু গত সাত বছরের মধ্যে বহিরাগতদের নিয়ে মহড়া এবং গেটে পাহারা এবারই প্রথম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার জানান, গল্লামারী এলাকার রাস্তার কাজটি অন্যের ঠিকাদারি লাইসেন্সে হাফিজ করতে চায়। এ জন্যে সিন্ডিকেট করে দরপত্র জমা দেয়া হচ্ছে। তারা জানান, কেসিসি ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সোনাডাঙ্গা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তসলিম আহমেদ আশা ও যুবলীগ নেতা হাফিজ মঙ্গলবার রাতেই অন্য ঠিকাদারদের কাছ থেকে শিডিউল নিয়ে নেন।
বিষয়টি স্বীকার করে আশা বলেন, ১৬ জন ঠিকাদার মিলে আমরা বৈঠক করেছি। সেখানে সবার সম্মতিতে একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেভাবেই দরপত্র জমা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, হাফিজ কেসিসির নিয়মিত ঠিকাদার। এর আগে সড়কের কাজ করেছে। তবে পূর্ত ভবনের সামনে চেয়ার নিয়ে পাহারায় থাকা যুবকদের তিনি চেনেন না।
টেন্ডার ভাগাভাগির অভিযোগ অস্বীকার করে যুবলীগ নেতা হাফিজুর রহমান হাফিজ বলেন, তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম বাঁধন অ্যান্ড কোং। এই প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়নি। তিনি ব্যবসায়িক কাজে সিটি করপোরেশনে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া কাজী ট্রেডার্সের সাথে তার কোনো সম্পক্তৃতা নেই।
কেসিসির নির্বাহী প্রকৌশলী-২ লিয়াকত আলী খান বলেন, জমা পড়া দরপত্রগুলোর মধ্যে কাজী ট্রেডার্স সর্বনি¤œ দর দিয়েছে ৫৫ লাখ ৪০ হাজার ১৭০ টাকা। এটি টুটপাড়া এলাকার কাজী তরিকুল ইসলামের প্রতিষ্ঠান। যাচাই-বাছাই কমিটির পর্যালোচনা শেষে ঠিকাদার চূড়ান্ত হবে। তিনি বলেন, দরপত্র জমা দেয়া নিয়ে ঠিকাদারদের সিন্ডিকেট হওয়া বা ঠিকাদারদের বাধা দেয়ার কোনো অভিযোগ তিনি পাননি।
তার কক্ষে বসে টেন্ডার পাহারা সম্পর্কে তিনি বলেন, এরা সবাই কেসিসির ঠিকাদার। সবাই কোনো না কোনো কাজে বসে ছিলেন।
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More