প্রধানমন্ত্রীর জন্য ৫ বছর ধরে বানানো চেয়ার!

0

Moulvibazar-Prime-Minister-BM022মৌলভীবাজার: নাম তার আতিক হাসান(২৮)। বাড়ি মৌলভীবাজারে। পেশায় কাঠমিস্ত্রি। কাঠ দিয়ে নানারকম আসবাবপত্র তৈরিই তার পেশা। তবে পেশার বাইরে রয়েছে তার এক অন্যরকম স্বপ্ন। সেই স্বপ্নের হাত ধরেই গত ৫ বছর ধরে করে চলেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম।
জীবিকার বাইরে রাতের ঘুম হারাম করে তিনি তৈরি করছেন কারুকাজ খচিত চেয়ার। কাঠ, নকশা আর ওজনে আনা হয়েছে বৈচিত্র। প্রতিদিন ২-৩ জন শ্রমিক ২-৩ ঘণ্টা করে খেটে তৈরি করছেন চেয়ারটি। এর কারুকাজে ঠাঁই পেয়েছে জাতীয় পতাকা, নৌকা, জাতীয় ফুল, হাতির শুঁড় আর নানা জাতের ফুল।

চেয়ারটির উচ্চতা সাত ফুট, ৬ ইঞ্চি আর প্রস্থ ৩ ফুট ১ ইঞ্চি। ওজন সর্বসাকুল্যে দশ মণ দশ কেজি। আকর্ষণীয় এ চেয়ার তৈরি করতে লেগেছে প্রায় ২০ ফুট সেগুন, মেহগনি আর আকাশমনি কাঠ। চেয়ারটি নাড়াচাড়া করতে প্রয়োজন হয় ৮ জন লোকের। বিগত ৫ বছর ধরেই চলেছে এটি তৈরির কাজ। এখন শেষ পর্যায়ে। শুধুমাত্র করা হচ্ছে ঘঁষামাজা আর রঙ করার কাজ।

তিল তিল যত্ম আর পরিশ্রমে কার জন্য তৈরি করা হচ্ছে চেয়ারটি? এমন প্রশ্ন নিয়ে ইতোমধ্যে এটা দেখতে আতিকের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন অসংখ্য দর্শনার্থী। দর্শনার্থীদের কৌতুহলের জবাবও দিচ্ছেন কুলাউড়ার দক্ষিণ হিঙ্গাজিয়া গ্রামের মৃত রেনু মিয়া ও আঙ্গুর বেগমের বড় ছেলে আতিক হাসান।
সরজমিনে কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের হিঙ্গাজিয়া বাজারে গেলে দেখা যায়, তালাবদ্ধ একটি ঘরে যত্ম করে রাখা হয়েছে চেয়ারটি। ঘরেই পাশেই দাঁড়িয়ে কথা হয় চেয়ারের মিস্ত্রি আতিক হাসানের সঙ্গে। এসময় চেয়ারটি দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় লক্ষ্য করা যায়।

প্রায় ১৮ বছর থেকে কাঠমিস্ত্রি পেশায় জড়িত আতিক হাসান বাংলামেইলকে বলেন, ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মনেপ্রাণে ভালোবাসি। সেই মহান নেতাকে জীবিত না দেখলেও তার বীরত্ব আর নেতৃত্বের গল্প কত যে শুনেছি, মুগ্ধ হয়েছি। আমার এক বুক স্বপ্ন আর প্রত্যাশা বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার উপহার হিসেবে এ চেয়ারটি দিতে চাই তার সুযোগ্য কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।

আতিক আরো বলেন, আমর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন- প্রিয় নেতার কন্যাকে আমার পেশা সংশ্লিষ্ট কোনো উপহার নিজ হাতে তৈরি করে দেবো। আর এ ভাবনা থেকেই তৈরি করি চেয়ারটি। টুঙ্গিপাড়া, জাতীয় জাদুঘরসহ নানা স্থানে ঘুরেছি চেয়ারটির নকশার ধারণা নিতে। পেয়েও যাই নকশা। এরপর বাড়ি ফিরে কারিতাস থেকে ৩০ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে কাঠ সংগ্রহ করে কাজ শুরু করি। দিনের বেলায় কারখানার মালিকের কাজ করায় আমাকে রাত জেগে চেয়ার তৈরির কাজ করতে হয়েছে।

আতিক জানান, এর আগে পরীক্ষামূলকভাবে একটি চেয়ার তৈরি করেছিলাম প্রধানমন্ত্রীকে দেয়ার জন্য। কিন্তু সেটি মনের মতো না হওয়ায় বিক্রি করে দেই। প্রায় ১ লাখ টাকা দিয়ে তা কিনে নেন সিলেটের শিল্পপতি আলহাজ্ব রাগীব আলী।

আতি বলেন, ‘এখন বহু পরিশ্রমের ফসল এ চেয়ারটি যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছাতে পারি আর প্রধানমন্ত্রী যদি তার উপহার গ্রহণ করেন তবেই ভালো লাগবে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী যদি চেয়ারটিতে একবারের জন্যও বসেন তবেই দীর্ঘ কষ্ট আমার সার্থক হবে।’

তবে আতিক হাসানের জানা নেই, কীভাবে তার এ উপহারটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেবেন? তাছাড়া চেয়ারটি যদি বঙ্গবন্ধুকন্যা গ্রহণ না করেন তাহলে তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন, প্রত্যাশা বিফলে যাবে বলেও মনে করছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More