ডজনখানেক প্রতিষ্ঠানের টাকা পাচারের তদন্তে এনবিআর

0

NBRবড় অঙ্কের অর্থ পাচারের তথ্য উদঘাটনে তদন্তে নেমেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।  প্রাথমিকভাবে ব্যাংক, বহুজাতিক কোম্পানি ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানসহ ১২ থেকে ১৫টি প্রতিষ্ঠানের ১০০ কোটি টাকার বেশি অর্থ বিদেশে পাচারের প্রমাণ পেয়েছে এনবিআর।

প্রতিষ্ঠানগুলোর এক দশকের বেশি সময়ের লেনদেনের তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে ওই  অর্থ পাচারের বিষয়টি নজরে আসে। এনবিআরের গোয়েন্দা শাখার একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে তা নিশ্চিত করেছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে অন্তত ডজনখানেক কোম্পানির লেনদেনের তথ্য নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এর মধ্যে ব্যাংক, বহুজাতিক কোম্পানি ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কোম্পানির গত এক দশকের লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে কয়েকটি কোম্পানির বড় অঙ্কের অর্থ পাচারের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দা শাখা। প্রাথমিকভাবে কেবল ১২টি কোম্পানির অর্থপাচারের পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ তালিকায় অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নামও চলে আসছে। তদন্ত শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও এনবিআর সূত্র জানায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একটি সূত্র রাইজিংবিডিকে জানায়, ইতিমধ্যে বেশকিছু কোম্পানির লেনদেন বিশেষ নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। এসব কোম্পানির কোটি কোটি টাকা পাচারের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে তথ্য পাওয়া গেছে। এ প্রক্রিয়ায় আর কারা অর্থপাচার করেছে সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর এ তালিকায় অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠানের নামও চলে আসছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হবে।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান বলেন, প্রাথমিকভাবে ডজনখানেক কোম্পানির অর্থ পাচারের বিষয়ে তদন্ত চলছে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রাথমিকভাবে তদন্তের আওতায় আসা কোম্পানিগুলোর পাচারকৃত অর্থের পরিমান ১০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।

এনবিআর সূত্র আরো জানা যায়, একটি রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান ভুয়া ডকুমেন্ট দাখিল করে বিভিন্ন সময়ে ২৯৮টি কার্গোতে পণ্য রপ্তানি দেখালেও কোনো অর্থ দেশে আসেনি। এ প্রক্রিয়ায় ওই প্রতিষ্ঠান প্রায় কয়েক কোটি টাকা পাচার করেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ওই প্রতিষ্ঠানসহ একই কৌশলে আরো কোন কোন প্রতিষ্ঠান অর্থ পাচার করেছে, তা এখন খুঁজে দেখা হচ্ছে। এরকম ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে রপ্তানির আড়ালে বড় অংকের অর্থ পাচারের তথ্য রয়েছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কাছে। ইতিমধ্যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে বিদেশে লেনদেনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের বিগত কয়েক বছরের আমদানি-রপ্তানি তথ্য এবং ওই অর্থ কখন, কীভাবে হাতবদল হয়েছে তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান বলেন, অর্থপাচারের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এসেছে। দোষী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে আদালতের সঙ্গে এনবিআর কীভাবে সন্মিলিতভাবে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে  কথাবার্তা চলছে।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্নভাবে মুদ্রা পাচার হতে পারে। সম্প্রতি আটক হওয়া কোকেনের চালান, কিংবা বিমানবন্দরে আটককৃত স্বর্ণের মাধ্যমেও অর্থ পাচারের সংযোগ থাকতে পারে। মুদ্রা পাচার ঠেকাতে আয়করের সঙ্গে ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) ও শুল্ক বিভাগ এক সঙ্গে কাজ করবে। ইতিমধ্যে নেওয়া এনবিআরের উদ্যোগ নিয়ে অসৎ ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান আতঙ্কে রয়েছে।

সম্প্রতি গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৩ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। এসব অর্থের বেশিরভাগই উন্নত দেশগুলোতে পাচার হয়েছে। মূলত প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে অধিক গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করে এনবিআর।

শুল্ক গোয়েন্দা সূত্রে আরো জানা যায়, সাধারণত অবৈধ উৎস হতে প্রাপ্ত অর্থই পাচার হয়ে থাকে। এ অর্থের উৎস আড়াল করার  লক্ষ্যে বেশ কয়েকবার হাতবদল হয়। এ ছাড়া নানা উপায়ে তা বিনিয়োগেও আসে। আবার কিছু ক্ষেত্রে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে আমদানির আড়ালে এসব অর্থ পাচার হয়ে থাকে। ২৮ ধরণের অপরাধের মাধ্যমে অবৈধ অর্থ সংগ্রহ কিংবা পাচার হয়। এর মধ্যে ছয়টি এনবিআরের শুল্ক বিভাগের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এগুলো হলো চোরাচালান ও শুল্ক সংক্রান্ত, দেশি ও বিদেশি মুদ্রা পাচার, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার, অবৈধ মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের ব্যবহার, মেধাসত্ত্ব আইনের লঙ্ঘন ও পরিবেশ সংক্রান্ত অপরাধ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More