দেশের পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রয়েছে বলে দাবি করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সোমবার কমিশনের নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের পুঁজিবাজার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। পুঁজিবাজারে বড় ধরনের দরপতনের ঘটনা ঘটে থাকে। এসব পতনের অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। সম্প্রতি চীনের পুঁজিবাজারসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের পুঁজিবাজারের বড় ধরনের পতনের ঘটনা ঘটেছে। সারাবিশ্বের তুলনায় গত কয়েক বছর আমাদের পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রয়েছে।
তিনি বলেন, বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা নেই এ ধরনের কথা প্রচার করা হচ্ছে, তা মোটেও সঠিক নয়। বাজারে কোনো কোনো কোম্পানির দাম কমে যেতেই পারে। আবার কোনো কোনো কোম্পানির দাম বেড়ে যেতেই পারে। এটি মূলত শেয়ারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর নির্ভর করে।
তিনি বলেন, একজন ব্যক্তির পরিবর্তনের কারণে সমগ্র সিস্টেম পরিবর্তন হয়ে যাবে, এ কথার সঙ্গে আমরা একমত নই। কারণ একটি প্রতিষ্ঠান চলে সম্মিলিতভাবে। একজন ব্যক্তির কারণেই যে পুরো প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হয়ে যাবে বা পুঁজিবাজারের পরিবর্তন হয়ে যাবে তা আমরা মনে করি না। বাজারের আস্থা ফিরিয়ে আনতে গত কয়েক বছর বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বিএসইসির এ নির্বাহী বলেন, একটি জবাবদিহিমূলক এবং স্বচ্ছ বাজার গড়ে তোলাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। কোম্পানির নিরীক্ষক, ইস্যু ম্যানেজার ও ইস্যুয়ার কোম্পানির জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে আইপিওর ক্ষেত্রে পাবলিক ইস্যু রুলস ২০০৬ পরিবর্তন করে নতুন রুলস ২০১৫ করা হয়েছে। যাতে অনেক বেশি ডিসক্লোজার সংযুক্ত করা হয়েছে।
বাজার মনিটরিংয়ে উন্নত সার্ভিল্যান্স ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি উল্লেখ করে সাইফুর রহমান বলেন, লেনদেনে কোনো কারসাজি হলে তা তাৎক্ষণিক সার্ভিল্যান্স ব্যবস্থায় ধরা পড়ছে। আমাদের সিস্টেমে অ্যালার্ট আসে। তার ভিত্তিতে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে তদন্ত করে থাকি। প্রয়োজন হলে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এমনকি কারসাজি খতিয়ে দেখার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জেও পাঠানো হয়। অনিয়মের কারণে বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সম্প্রতি আরএন স্পিনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে অপসারণ করা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইস্যু ম্যানেজারের সনদ বাতিল করা হয়েছে।
গত বছর পুঁজিবাজারের পরিধি সাড়ে ৪ শতাংশ কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর পেছেনে বড় পুঁজির লাফার্জ সুরমা, তিতাস গ্যাস ও গ্রামীণফোন এই ৩ কোম্পানির ভূমিকা ছিল। এসব কোম্পানির নিজ নিজ নিয়ন্ত্রক সংস্থার পদক্ষেপের কারণে তাদের শেয়ারের দাম কমেছে। এ কারণে বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে।
এর আগে সকালে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নবনির্বাচিত পরিচালনা পর্ষদ বিএসইসি চেয়ারম্যান ড. খায়রুল হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। বৈঠক শেষে বিএসইসির চেয়ারম্যান সাংবাদিকদের বলেন, বিনিয়োগাকারীদের প্রটেশশন দেয়ার জন্য আমরা কাজ করছি। গত কয়েক বছরে বেশকিছু সংস্কারমূলক কাজ করেছি। বিশ্ব পুঁজিবাজার ও ২০১০-১১ সালের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে বর্তমানে দেশের পুঁজিবাজার বেশ স্থিতিশীল। তিনি বলেন, কেউ কোনো অপরাধ করলে আমরা তার শাস্তির ব্যবস্থা করছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো বাজারে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা। সে জন্য সরকারের সহায়তায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিএমবিএর নবনির্বাচিত সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান বলেন, ২০১৪-১৫ সালে যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে তার ফলাফল পাওয়ার পর্যায়ে চলে এসেছে।
Next Post