জাবিতে ‘ভুল’ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ!

0

Ja universityজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ‘ভুল’ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের এমন কর্মকাণ্ডের কারণে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে এক ধরনের নৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ হাতে পেলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ২৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ, লোক প্রশাসন, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান এবং মার্কেটিং বিভাগে স্থায়ী অধ্যাপক, অস্থায়ী সহকারী অধ্যাপক, অস্থায়ী প্রভাষক ও স্থায়ী প্রভাষক পদে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘প্রভাষক পদে আবেদনকারী প্রার্থীর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে। স্নাতক (সম্মান) অথবা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে যে কোনো একটিতে প্রথম শ্রেণী থাকতে হবে অথবা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিতে প্রথম শ্রেণী এবং স্নাতক (পাস) ডিগ্রিতে প্রথম শ্রেণী থাকতে হবে। অথবা স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পর্যায়ে প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান ও মার্কেটিং বিষয়ে কমপক্ষে সিজিপিএ এবং জিপিএ ৩ দশমিক ৬০ (৪.০০ স্কেলে) এবং লোকপ্রশাসন বিষয়ে কমপক্ষে সিজিপিএ এবং জিপিএ ৩ দশমকি ৫০ (৪.০০ স্কেলে) থাকতে হবে।’ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এ বিজ্ঞপ্তিতে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে প্রভাষক পদে আবেদনের ক্ষেত্রে কোনো সিজিপিএ উল্লেখ করা হয়নি।
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রচলিত লেটার গ্রেডিং সিস্টেমে পাস করা শিক্ষার্থীরা এ পদে আবেদন করতে পারেননি বলে জানা গেছে। এদিকে বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রচলিত গ্রেডিং সিস্টেমে পাস করায় আবেদন করতে পারেননি। কিন্তু ওই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা ওই সময় প্রভাষক পদে আবেদন করেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের দুই শিক্ষার্থীকে প্রভাষক পদে নিয়োগও দেয়া হয়।  প্রভাষক পদে নিয়োগ পাওয়া এ দুই শিক্ষক হলেনÑ আলমগীর হোসেন ভূইয়া (স্নাতক ৩ দশমিক ৬৮, স্নাতকোত্তর ৩ দশমিক ৯৪) ও আনারুল হক মণ্ডল (স্নাতক ৩ দশমিক ৬৬, স্নাতকোত্তর ৩ দশমিক ৯২)।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ফল প্রকাশিত হয় ২০১৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাপক পদে আবেদনপত্র জমাদানের শেষ সময় ছিল ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত। আর অন্যান্য পদে আবেদনপত্র জমাদানের শেষ সময় ছিল ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। এ ছাড়া অসম্পূর্ণ দরখাস্ত বাতিল বলে গণ্য হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পরীক্ষা অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে ফল প্রকাশের মাত্র দুই দিনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা সিন্ডিকেট সভা এবং উপাচার্যের অনুমোদন ব্যতিরেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে তাদের প্রভিশনাল সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন এবং প্রভাষক পদে আবেদন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অধ্যাদেশের ২৭ (ী) ধারায় বলা হয়েছে, ‘সাধারণত মার্কশিট, সার্টিফিকেট ও ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের জন্য নির্ধারিত টাকা পরিশোধ করলে আবেদনের ১৫ দিন পর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে তা উত্তোলন করা যাবে। আর জরুরি ভিত্তিতে উত্তোলন করতে অতিরিক্ত টাকা পরিশোধপূর্বক আবেদনের ৩ দিন পর তা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে সরবরাহ করা হবে।’
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অধ্যাদেশের ২৭ (র) ধারায় বলা হয়েছে, ‘পরীক্ষার্থীর অর্জনকৃত ফলাফল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস যথাসময়ে প্রকাশ করবে এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রভিশনাল সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। বিশেষ ক্ষেত্রে, সিন্ডিকেটের অনুমোদন ছাড়াও কোনো শিক্ষার্থীকে প্রভিশনাল সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে। সেক্ষেত্রে ওই শিক্ষার্থীকে উপযুক্ত কারণ উপস্থাপন করতে হবে এবং অবশ্যই উপাচার্যের অনুমোদন নিতে হবে। সার্টিফিকেট পেতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের পরিচালক বরাবর আবেদন করতে হবে। এর পূর্বে শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় ফি পরিশোধ করতে হবে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অধ্যাদেশ লঙ্ঘন করে সার্টিফিকেট প্রদানের বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সিদ্দিকুর রহমান মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট দিয়ে থাকি।’ প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিককে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ভুল ধরা পড়লে পরবর্তীতে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দিয়ে দেয়া হয়।’ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম মানবকণ্ঠকে বলেন, ‘উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ হাতে পেলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এদিকে সিজিপিএ উল্লেখ করে সংশোধিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে ভুল থাকলে তার সংশোধনী পত্রিকায় দেয়ার কথা। তা কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া হবে। এর পেছনে সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকদের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। মূলত পরিকল্পিতভাবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে নিজেদের আশীর্বাদপুষ্টদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতেই এ ধরনের জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More