বছর শেষে ব্যাংকের ঋণ আমানতে সমান প্রবৃদ্ধি

0

bangladesh bankজাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালের প্রায় সময়জুড়ে ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। আর নির্বাচনের পর ২০১৪ সালে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলেও উদ্যোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা কাজ করেছে। যার প্রভাব পড়েছে ২০১৫ সালেও। তাই গত বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেশে কাক্সিক্ষত হারে বিনিয়োগ হয়নি। তবে শেষ সময়ে অনিশ্চয়তা কাটিয়ে বিনিয়োগে ফিরছিলেন উদ্যোক্তারা। ফলে আমানতের সঙ্গে সমান তালে বাড়ছিল ঋণ। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ। ঋণ বেড়েছে ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তবে আলোচ্য সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে পিছিয়ে থাকলেও এগিয়ে রয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পাশাপাশি নতুন ব্যাংকগুলোও। বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময়ই আমানত ও ঋণ সমানতালে এগিয়ে নিতে ব্যাংকগুলোকে উৎসাহিত করে। কেননা আমানত যে হারে বাড়ে ঋণ সে হারে না বাড়লে ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বাড়ে। আবার আমানতের তুলনায় ঋণ বেশি বিতরণ করলে ব্যাংকগুলো তহবিল সংকটে পড়ে। ফলে দু’টি একই রকম না বাড়লে তা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপনায় অদক্ষতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কোনো ব্যাংকের ঋণ ও আমানতে খুব একটা ব্যবধান দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক সামঞ্জস্য আনার নির্দেশ দিয়ে থাকে। তবে বছরের প্রথম দিকে আমানতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঋণ বিতরণ না বাড়লেও শেষ সময়ে ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদন ভালো দেখাতে তারা সমান তালে আমানত ও ঋণ বিতরণের চেষ্টা করে থাকে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল হওয়ায় অর্থবছরের শুরু থেকেই ঋণ বিতরণ বাড়ছে। তবে ব্যাংকগুলো যেসব ঋণ বিতরণ করেছে, তার গুণগত মান যাচাই করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে যদি কোনো সমস্যা পাওয়া যায় তবে সেই ব্যাংকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মোট আমানত দাঁড়িয়েছে আট লাখ ০৩ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। আগের বছর শেষে আমানত ছিল সাত লাখ ১০ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। এতে এক বছরে আমানত বেড়েছে ৯৩ হাজার ৩৮ কোটি টাকা যা ১৩ দশমিক ১০ শতাংশ। ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার ৩০১ কোটি টাকা। আগের বছর শেষে যা ছিল পাঁচ লাখ ২৮ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। এতে এক বছরে ঋণ বেড়েছে ৬৬ হাজার ৫৪৬ কোটি টাকা যা ১২ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, শেষ ছয় মাসের তুলনায় প্রথম ছয় মাসে আমানতে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর ঋণ বেশি বেড়েছে শেষ ছয় মাসে। মূলত গত বছরের প্রথমভাগে আশানুরূপ বিনিয়োগ না হওয়ায় ব্যাংকগুলোর কাছে প্রচুর অলস অর্থ জমছিল। এ কারণে আমানতে সুদহার কমিয়ে আসছে তারা। ডিসেম্বর শেষে আমানতে গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আমানতের সঙ্গে সমান তালে না কমলেও ঋণের সুদহারও কিছুটা কমেছে। আলোচ্য সময়ে ঋণে গড় সুদহার দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ। ব্যাংকের তুলনায় সঞ্চয়পত্রের সুদহার এখনো বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলোর তুলনায় সঞ্চয়পত্রে বেশি অর্থ রেখেছেন বিনিয়োগকারীরা। চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসেই (জুলাই-ডিসেম্বর) সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রি লক্ষ্যমাত্রার  প্রায় ৮৪ শতাংশ পূরণ হয়েছে। এ সময়ে সরকার নিট ১৩ হাজার ৩০৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি করেছে। এ বছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল ১৫ হাজার কোটি টাকা।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ডিসেম্বর শেষে রাষ্ট্রীয় মালিকানার চার ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ১২ দশমিক ৯৮ শতাংশ আর ঋণ বেড়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৫৩ শতাংশ। বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ঋণ বেড়েছে ৩  দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আমানতের তুলনায় ঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে। এসব ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ১৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আর ঋণ বেড়েছে ১৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে বিদেশি ব্যাংকগুলোর আমানত ও ঋণ পর্যায়ক্রমে শূন্য দশমিক ৭৭ ও ৫ দশমিক ৩২ শতাংশ বেড়েছে। যদিও এ সময়ে ৬টি ব্যাংকের আমানতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। আর ঋণ প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ৩টি ব্যাংকের।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More