উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর পাঁচ সরকারি (চট্টগ্রাম, মহসিন, সিটি, কমার্স ও মহিলা) কলেজ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রথম পছন্দ। এই পাঁচ সরকারি কলেজের পাশাপাশি তাদের পছন্দ ও নির্ভরতার জায়গায় আরও তিনটি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে, এগুলো হলো- ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজ, ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও নৌবাহিনী স্কুল অ্যান্ড কলেজ। গত শনিবার প্রকাশ হওয়া এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া ১০ হাজার ৮৮৪ জন পরীক্ষার্থীর সবার প্রথম দৃষ্টি থাকবে এসব কলেজের কোনোটিতে ভর্তি হওয়া। তবে এসব কলেজে ভর্তি হতে মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা না হলেও ভাল ফলাফলের ভোগান্তিতে পড়বে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
আট কলেজের আসন সংখ্যা ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা তুলনা করে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৩৯১ জন। বিপরীতে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য চট্টগ্রাম কলেজে আসন রয়েছে ৪৫০, মহসিন কলেজে ৪৫০, সিটিতে ৪৫০, মহিলা কলেজে ৩০০, ইস্পাহানি পাবলিকে ১০০, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিকে ৩০০ ও নৌবাহিনীতে ৩০০। সব মিলিয়ে বিজ্ঞানের আসন সংখ্যা দাঁড়ায় ২ হাজার ৩৫০টি। তাহলে দেখা যাচ্ছে জিপিএ-৫ পেয়েও বিজ্ঞানের ৫ হাজার ৪১ জন শিক্ষার্থী এই আট কলেজের কোথাও ভর্তির সুযোগ পাবে না। তাদেরকে অন্য কোথাও ঠিকানা খুঁজে নিতে হবে।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৩৭৭ জন। কিন্ত এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য মহসিন কলেজে ৪৫০, সিটি কলেজে ৬০০, কমার্স কলেজে ৭৫০, মহিলা কলেজে ৩০০, ইস্পাহানিতে ১০০, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিকে ২৫০ ও নৌবাহিনীতে ২০০ আসন রয়েছে। সব মিলিয়ে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে আসন রয়েছে ২ হাজার ৫৫০টি, তাহলে দেখা যাচ্ছে এ বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েও এসব কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না ৮২৭ শিক্ষার্থী।
কলেজ ভর্তি নিয়ে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে পড়তে হলেও মানবিকের শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। সরকারি ও তিন বেসরকারি কলেজে মানবিকের জন্য এক হাজার ৯৫০টি আসন থাকলেও এই বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ১১৬ জন। অর্থাৎ জিপিএ-৫ পেলেই চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি নিশ্চিত। শুধু জিপিএ-৫ নয়, ন্যূনতম ভালো ফলাফল করলেই এ বিভাগে ভর্তি হওয়া যাবে। এ বিষয়ে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের অধ্যক্ষ কর্নেল মোহাম্মদ রফিক বলেন, ‘মানবিকের জন্য আমাদের ১৫০টি আসন
থাকলেও ভর্তির ন্যূনতম যোগ্যতার শিক্ষার্থীও মানবিকের জন্য পাওয়া যায় না, আসন খালি থাকে।’
কলেজ ভর্তির ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের প্রেসারে পড়তে হবে জানিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক সুমন বড়ুয়া সুপ্রভাত বাংলাদেশকে বলেন, ‘বিজ্ঞানের জন্য চট্টগ্রাম, মহসিন, সিটি, মহিলা, ইস্পাহানি, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক ও নৌবাহিনীর পাশাপাশি আরও কিছু ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নগরীতে রয়েছে। সিটি করপোরেশন পরিচালিত কলেজগুলোর মধ্যে কাপাসগোলা এবং বেসরকারি এমপিওভুক্ত কলেজগুলোর মধ্যেও কিছু ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিক্ষার্থীরা এসব কলেজে ভর্তি হলে সেসব প্রতিষ্ঠানও ভবিষ্যতে ফলাফল করতে পারবে।
একই অভিমত প্রকাশ করে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. পীযূষ দত্ত বলেন, এখন সময় এসেছে সরকারি কলেজগুলোর বাইরে গিয়ে ভর্তি হওয়ার। সরকারি কলেজে টিউশন ফি কম ও ভাল সহপাঠী পাওয়া যায় কথাটি সত্য, কিন্তু বেসরকারি অনেক কলেজ এখন ভালো করছে সেসব কলেজে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হলে এইচএসসিতেও ভাল ফলাফল করতে পারবে।’
বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ ও বোর্ড কর্মকর্তারা জানান, গত তিন বছরে বোর্ডের আওতাধীন জেলাগুলোতে অনেক বেসরকারি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হলেও সবাই নগরীর সরকারি ও বেসরকারি নামী কলেজগুলোতে ভর্তি হতে আগ্রহী। নামকরা কলেজগুলোর বাইরে অন্যান্য কলেজ এগিয়ে আসতে না পারায় তীব্র হচ্ছে কলেজ ভর্তি। ইস্পাহানি পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘চট্টগ্রামে বেসরকারি পর্যায়ে গুণগত মান সম্পন্ন কলেজ এগিয়ে এলে ভর্তির চাপ কিছুটা কমে আসতো, অভিভাবকরাও স্বস্তি পেতো।’
উল্লেখ্য, গত শনিবার প্রকাশিত এসএসসি ফলাফলে চট্টগ্রামের রেকর্ড পাশ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে। পাশ করেছে ৯১ দশমিক ৪০ শতাংশ পরীক্ষার্থী এবং জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০ হাজার ৮৮৪ জন।