চলছে বৈশাখ। মাথার ওপর প্রখর সূর্যের তাপ, আর পয়লা বৈশাখের জমজমাট উৎসবের মধ্য দিয়ে গ্রীষ্মকে স্বাগত জানানোও শেষ। এখন গরমকে আপন করে নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় আছে কি? গরম আবহাওয়া নিয়ে আমাদের বিরক্তির শেষ নেই। তারপর বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সংকট নিয়ে দিনগুলো পার করা কম দুসাধ্য নয়। তবুও চেষ্টা চলতে থাকে, যতটুকু ভালো থাকা যায়। তাই গরমকালে এই ভালো থাকার জন্য সবচেয়ে জরুরী হলো প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাবারদাবার। এ জন্য আমাদের খাদ্য তালিকায় দরকার সঠিক সংস্কার।
আমাদের দেশের খাবারে ঐতিহ্যের প্রভাব বেশী। যেকোনো খাবার রান্না করার সময় প্রতিটি উপকরণের স্বাদ, রং আর চেহারা বদলে দেওয়ার জন্য আমাদের যত্নআত্তি শেষ নেই। আর সে কারণেই আমাদের নিত্য সঙ্গী হলো তেল আর হরেক পদের মসলা। কিন্তু গরমে কষ্ট হলেও ভালো থাকার জন্য এই তেল-মসলার পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। তেল-মসলা কমানোর কথা যখন হচ্ছে তখন বিরিয়ানি, তেহারির মতো মজার খাবারগুলো খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। তেল, মাখন, মেয়নেজ, ক্রিম ও ক্রিমযুক্ত সালাদ ড্রেসিং যতটা সম্ভব পরিহার করতে হবে। পরিহার করতে হবে বাজারের নানান স্বাদের জনপ্রিয় তরল পানীয়। গরম থেকে বাঁচার জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য এ পানীয় আমাদের শরীরের জন্য মোটেও সহায়ক নয়। এতে ব্যবহৃত বিভিন্ন রং, স্বাদবর্ধক উপকরণ আমাদের শরীরে খানিকটা স্বস্তি দিলেওএর অন্য কোনো পুষ্টিগুণ নেই।
গরমে খাদ্য তালিকায় হালকা ও কম চর্বিযুক্ত খাবার রাখতে হবে যা আমাদের শরীরের জন্য পুষ্টিকর। গরমে সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো এ সময় আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। তাই শরীরে পানির সঠিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ করা আবশ্যক। অনেক বেশি পানি পান করতে হবে। খাবারের তালিকায় আরও থাকবে প্রচুর সবজি ও ফলমূল। আর গরমকালে হরেক পদের রসালো ফলে ছেয়ে যায় বাজার। তরল পানীয়ের পরিবর্তে বিভিন্ন ফলের ঠান্ডা রস ও লেবুর শরবতের বিকল্প নেই। কিন্তু বাইরে খোলা আকাশের নিচে বানানো বিভিন্ন শরবতের প্রতি দৃষ্টি না দেওয়াই ভালো। সেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত কি না তা দেখতে হবে। গরমে অন্যান্য করণীয় হলো-
• সকালের নাশতায় তেলে ভাজা পরোটা এড়িয়ে চলাই ভালো। নাশতা হতে হবে পুষ্টিকর ও ফলযুক্ত। সারা দিনের খাদ্য তালিকা যাই হোক না কেন, সকালের খাবার হতে হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় যেন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। বড়দের ক্ষেত্রে খাবারে কমপক্ষে ৪০০ ক্যালোরির জোগান থাকা উচিত। সকালে বা রাতে যখনই হোক না কেন, দুধ থাকতে হবে। এই গরমে দুধটা ঠান্ডা হলে আর তাতে কোনো ফ্লেভার নিয়ে খেলে সেটার তো কোনো তুলনাই নেই। নয়তো চলতে পারে হালকা রং চা বা ভেষজ চা।
• দুপুরের খাবারে সবজি একটা জরুরি খাবার। সেটা তেলে না ভেজে গ্রিল বা ভাপ দিয়ে নিয়ে খাওয়া যেতে পারে। সবজি রান্নায় অল্প আঁচ হলে তার পুষ্টিগুণ অটুট থাকে। অন্যান্য খাদ্য তালিকার পাশাপাশি দই গরমকালে আমাদের শরীরের এক মহা আপনজন-সেটা টক দই বা মিষ্টি দই যাই হোক না কেন। বেশি কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার পরিহার করার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সয়াবিন তেলের পাশাপাশি জলপাই তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে। খাবার মান ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। খাবার পর ভিটামিন ‘সি’ যুক্ত বা যেকোনো ফল খাওয়ার অভ্যাস ভালো।
• রাতে খাদ্য তালিকায় ভারী খাবার না রাখাই ভালো। অনেক রাত করে রাতের খাবার খাওয়া শরীরে চাপ সৃষ্টি করে। এতে পাকস্থলীর বিভিন্ন সমস্যা, বিশেষ করে ডায়রিয়া, বদহজম, বমি বমি ভাব হয়। তাই আগেই রাতের খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। রাতে ঘুমানোর ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিতে হবে। ঘুমাতে যাবার আগে দুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে গরম দুধ না খাওয়াই ভালো।
• দীর্ঘ সময় পর বেশি করে না খেয়ে, কম সময় পরপর (৩ ঘণ্টা কমপক্ষে) বারবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। তবে প্রতিবার খাবার এর পরিমাণ অবশ্যই কম হবে। খাওয়ার সময়টা ঠিকভাবে মেনে চলা উচিত। সময় মেনে খাবার অভ্যাস শরীরের জন্য সহায়ক।
• দৈনিক কমপক্ষে আট গ্লাস পানি খাওয়া উচিত হলেও এই গরমে পানি খাওয়ার অভ্যাস বাড়িয়ে দিতে হবে। সঙ্গে দুধ, ফলের রসসহ যেকোনো পুষ্টিকর পানীয় খাওয়া যেতে পারে। আর আম, জাম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, তাল, তরমুজ, জামসহ বিভিন্ন রসালো ফল তো আছেই।
গরমে শরীরের জন্য উপযোগী খাবার বেছে নিন। সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন।
Prev Post