স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে চাইলে

0

photo-1423492257স্বাস্থ্য ভালো রাখে এমন খাদ্যাভ্যাস স্মৃতিশক্তির জন্যও ভালো। তাই খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে প্রচুর ফল ও শাকসবজি। এড়িয়ে চলতে হবে চিনি, চর্বি ও অ্যালকোহল। একই সঙ্গে প্রয়োজন নিয়মিত শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত ঘুম। প্রতিদিন রাতে আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে চাইলে আরো কয়েকটি বিষয়ের দিকে লক্ষ রাখতে হবে। ইয়াহু নিউজের প্রতিবেদন অনুযায়ী স্মৃতিশক্তি ভালো রাখতে কিছু জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চলতে হবে।

যন্ত্র বাজান, গান শুনুন 
গিটার, ভায়োলিন বা বাঁশির মতো যেকোনো ধরনের একটি যন্ত্র বাজানো শিখুন। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা মতে, ১০ বা তদূর্ধ্ব বছর ধরে যন্ত্র বাজান এমন ব্যক্তির স্মৃতি অন্যদের তুলনায় ভালো। এ ছাড়া যারা নিয়মিত গান শুনেন তাঁদের স্মৃতিশক্তিও তুলনামূলক ভালো থাকে।

অন্তত একটি বিদেশি ভাষা শিখুন
নিজের মাতৃভাষার পাশাপাশি অন্তত একটি বিদেশি ভাষা শিখুন। দুটি ভাষা শেখার কারণে স্মৃতি শক্তি হারানোর ঝুঁকি কমে। ২০১৩ সালে বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নিউরোলজিতে’ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়। অপর কয়েকটি গবেষণা অনুযায়ী, অন্তত দুটি ভাষা জানা ব্যক্তি একইসঙ্গে একাধিক কাজে পরদর্শিতা অর্জন করে। এ ছাড়া কোনো কাজে তাদের মনোযোগ বেশি থাকে। অল্প বয়সেই ভাষা শেখার শুরু হলে ভালো। তবে প্রাপ্ত বয়সের পরও ভাষা শেখা যায়।

দাবা খেলুন
চিন্তাভাবণার খেলা দাবা। এ খেলায় স্মৃতি ও চিন্তা শক্তির চর্চা হয়। এ কারণে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে। দাবা ছাড়াও মনোপলি বা তাসের মতো বিভিন্ন ধরনের চিন্তাশক্তির খেলায় স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে। গবেষকরা বলেন, চিন্তা শক্তির খেলার চর্চার কারণে স্মৃতি শক্তি লোপ পাওয়া ২০ বছর পর্যন্ত বিলম্বিত হতে পারে।

প্রতিদিনই পড়ুন 
বইপড়া সবসময়ই স্মৃতিশক্তির জন্য ভালো। অল্প হোকে বেশি হোক প্রতিদিনই কিছু না কিছু পড়তে হবে। তবে মাত্রাতিরিক্ত পড়ার কারণে কোনো কাজে মনোযোগের বিঘ্নিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের গবেষক সান্ড্রা বন্ডের মতে, প্রতিদিন ২০টি বিষয়ে পড়ার পরিবর্ততে দুটি বিষয়ে পড়া উচিত। পরে বিষয় দুটি নিয়ে গভীর চিন্তা করা যায়।

লেখার ফ্ন্ট বদল
কিছুটা অপ্রচলিত ফন্টের লেখা পড়লে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে। আর এর বিষয়বস্তুও মনে থাকে দীর্ঘক্ষণ। যুক্তরাষ্ট্রের হাভার্ড ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক এ দাবি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও হাই স্কুলের শিক্ষার্থীদের ওপর করা অপর এক গবেষণায় দেখা গেছে, অপ্রচলিত ফন্টের লেখা যারা পড়েছে, তারা অন্যদের চেয়ে পরীক্ষায় ভালো করেছে। গবেষকরা বলেন, অপ্রচলিত ফ্ন্ট পড়ার ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের ওপর কিছুটা চাপ পড়ে। যা বিষয়বস্তু মনে রাখায় সহায়তা করে।

খারাপ লাগার বিষয়গুলো লেখুন 
খারাপ লাগার বিষয়গুলো লেখে ফেলুন। এতে স্মৃতিশক্তি যেমন ভালো থাকবে তেমনটি খারাপ লাগাও দূর হবে। একদল শিক্ষার্থীর ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এ দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেন্টনের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ টেক্সাসের একদল গবেষক। তাদের পরমর্শ হলো,  কোনো বিষয়ে খারাপ লাগলে তা মনের মধ্যে লুকিয়ে রাখবেন না।

চাপ কমাতের হাতের কাজ 
কাপড় বোনা, কারুশিল্প বা বাগান করার মতো দুই হাত ব্যস্ত থাকে এমন কাজ করুন। এতে স্মৃতি ভালো থাকে। ২০১৩ সালে সাড়ে তিন হাজার ব্যক্তির ওপর হাতের কাজের সঙ্গে স্মৃতি ভালো থাকার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করা হয়। গবেষকরা বলেন, দুই হাত ব্যস্ত রাখা যায়, এমন কাজের মধ্যে থাকলে স্মৃতি তুলনামূলক ভালো থাকে।

নিজের লক্ষ্য খুঁজে বের করুন
জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পাওয়া মানুষরা মানসিক চাপ মুক্ত থাকেন। এতে দীর্ঘদিন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ে। একই সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও ভালো থাকে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, জীবনের লক্ষ্য খুঁজে পাওয়া ব্যক্তিদের আলঝেইমায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে অর্ধেক। গবেষকদের মতে, লক্ষ্য খুঁজে পাওয়া ব্যক্তিদের কাজের প্রতি মনোযোগ থাকে সর্বোচ্চ।

সামাজিকতা মেনে চলুন 
যতটা সম্ভব পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটান। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই সামাজিকতা মেনে চলার সময় বাড়িয়ে দিন। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব উইনকনসিনের স্কুল অব মেডিসিনের একদল গবেষক জানান, সামাজিতার সঙ্গে স্মৃতির বয়স নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিকতার কারণে মানুষ নিরাপদ বোধ করেন। এ কারণে স্মৃতিও হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমে।

খেলুন মাথা খাটানোর খেলা
মাথা খাটাতে হয় এমন গেম দিনে কিছু সময় খেলা হলে, স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষকরা বলেন, সমস্যা সমাধান করতে হয়, এমন গেম কিছু সময় খেলায় মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়।

সময়ের ব্যাপারে সতর্কতা 
১০ মিনিটে করা যায় এমন কোনো কাজ করতে এক ঘণ্টা কাটানো নয়। আবার এক ঘণ্টা লাগে এমন কাজ ১০ মিনিটে করাও ঠিক নয়। যে কাজে যতটা সময় প্রয়োজন ঠিক ততটাই ব্যয় করা উচিত। গবেষকদের মতে, কাজে সঠিক সময় ব্যয় করা হলে মানুষের স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে।

হাতে লিখুন 
বাসা বা অফিস সবখানেই এখন কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয়। তবে এর মাঝেই কিছু সময় হাতে লেখার চর্চা করুন। গবেষণায় দেখা গেছে, স্কুল শিক্ষার্থীরা হাতে লেখার কারণেই কোনো বিষয় দীর্ঘ সময় মনে রাখতে পারে। ফলাফলও ভালো করে। তাই যেকোনো পরিস্থিতেই হাতে লেখার চর্চা অব্যাহত রাখুন।

পর্যাপ্ত ঘুম 
মানুষের স্মৃতি চার্জ হওয়ার কাজটি করে পর্যাপ্ত ঘুম। জার্মানির একদল গবেষক ঘুমের সঙ্গে মানুষের স্মৃতির সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করেন। তাঁরা জানান, পর্যাপ্ত ঘুমানো ব্যক্তিদের স্মৃতি অন্যদের চেয়ে ভালো হয়। এ কারণে মানুষের দীর্ঘজীবী হওয়ার হারও বাড়ে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। অন্যদিকে অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে স্মৃতি ভ্রষ্টতার ঝুঁকি বাড়ে।

দৈনন্দিন কাজ করুন 
বাড়ির দৈনন্দিন কাজগুলো করুন। এতে স্বাস্থ্য ভালো থাকার পাশাপাশি স্মৃতিও ভালো থাকে। গবেষকদের মতে, থালা বাসন ও ঘর-দোর পরিষ্কার ‌এবং নিয়মিত রান্নার মতো দৈনন্দিন কাজ স্মৃতি ভ্রষ্টতার ঝুঁকি অর্ধেক কমিয়ে দেয়।

নাচে দীক্ষা নিন 
নাচ একটি ভালো শরীরচর্চা। এতে স্মৃতিশক্তিও ভালো থাকে। গবেষকদের মতে, নিয়মিত নাচের কারণে স্মৃতি ভ্রষ্টতার হার ৭৫ শতাংশ কমে যায়। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের মন্টেফিওর মেডিকেল সেন্টারের একদল গবেষক। গবেষকদের মতে, নাচের সময় শারীরিক দক্ষতার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক চাপ নেওয়ারও চর্চা হয়।

সক্ষমতা বাড়ান
শারীরিক ও মানসিক উভয় ক্ষেত্রেই নিজের সক্ষমতা বাড়ান। কোনো সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যান। একই সঙ্গে হাঁটা বা অন্যকোনো শরীরচর্চার ক্ষেত্রেও নিজের সক্ষমতার শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করুন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More