ম্যারাডোনার প্রশ্ন, বাংলাদেশ কোথায়?

0

Maradonaইতালি বিশ্বকাপের অনেক স্মৃতি। অনেক ইতিহাস। ম্যারাডোনার মুখোমুখি হওয়া ছিল অন্যতম ঘটনা। বলতে পারেন বাংলাদেশের সাংবাদিক হিসেবে পাঁচটি বিশ্বকাপ কভার করে আপাতত ইতিহাস গড়লেও বড় ইতিহাস হয়ে রয়েছে ম্যারাডোনার মুখোমুখি হওয়া। সেটাতে পরে আসছি। আগে বলে নেই কিভাবে ভাতের সন্ধান পেলাম। আমাদের প্রিয় ফজলু ভাই বললেন- রোববার ‘ভাতের হাট’
বসে রেলওয়ে স্টেশনের পাশের একটি মাঠে। সেখানে গেলে দেখতে পাবেন হাঁড়ির মধ্যে
করে কিভাবে ভাত-তরকারি বিক্রি হয়। বিশ্বাস হয়নি প্রথমে। রোববার খেলা ছিল দূরের এক মাঠে, অন্য শহরে। তাই রোম থেকেই অন্য খবর পাঠালাম ইত্তেফাকে। হাতের কাজ শেষ করে আমরা পাঁচজন সাংবাদিক ছুটলাম রেলওয়ে স্টেশনের দিকে। ভারতীয়দেরও ভাত পছন্দ। অনেকদিন পর বাইরে ভাত পাওয়া যাবে শুনে ওদের আগ্রহের কমতি নেই। ঠিকই পৌঁছে গেলাম স্টেশনে। রেলের টিকিট ফ্রি। পৌঁছে দেখি ফজলু ভাই ঠিকই অপেক্ষা করছেন। সন্ধ্যা হয় হয় এমন অবস্থা। প্রচুর বাংলাদেশী। কয়েক শ’ বাংলাদেশী দেখে গর্বে বুকটা ভরে গেল। ছুটির দিনে সবাই একত্রিত হন। আর ভাত-তরকারি নিয়ে আসেন কেউ কেউ। বিক্রিও হয়। ভাত আর মুরগির মাংস। সঙ্গে আলু। তরকারির রঙটা টুকটুকে লাল। তাতে কি? খেয়ে দেখি না! প্লাস্টিকের প্লেটের মধ্যে ভাত আর তরকারি। গো-গ্রাসে গিলে ফেললাম মুহূর্তের মধ্যেই। মন্দ লাগছিল না। হাজার হলেও বাঙালির পছন্দের খাবার ভাত-তরকারি। ভারতীয়রা আমাকে ধন্যবাদ জানালেন। আমি তাদের বললাম, ধন্যবাদ আমার প্রাপ্তি নয়। ফজলু ভাইকে ধন্যবাদ দিতে হয়। তিনিই এই খবরটা দিয়েছেন। অনেক আড্ডা হলো। প্রায় দু’ঘণ্টা সেখানে কাটিয়ে হোটেলে চলে গেলাম। ইতালিতে বাংলাদেশীরা সবেমাত্র আসতে শুরু করেছেন। তখন সংখ্যা হাজারে পৌঁছায়নি। এখন কয়েক লাখ। ব্যবসা-বাণিজ্যেও পিছিয়ে নেই তারা। আমি যখন ইতালিতে তখন ইমিগ্র্যান্ট হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ এসেছিল। ইমিগ্র্যান্ট পলিসি অনেক উদার করেছিল ইতালি সরকার। প্রচুর বাংলাদেশী এই সুযোগ নেন। আমাকেও বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন ফার্স্ট সেক্রেটারি বলেছিলেন আবেদন করতে। কি ভেবে বললাম, ঠিক আছে। পরে দেখা যাবে। ইংল্যান্ডে যখন ইমিগ্র্যান্ট হলাম না- এখন ইতালিতে হবো? এখন দেখছি মন্দ হতো না। বর্তমান বাস্তবতায় একটা বিদেশী পাসপোর্ট থাকা জরুরি। মাঝে মাঝে মনে হয় প্রবাসী হয়ে যাই সব ছেড়ে দিয়ে। যে নেশায় বাংলাদেশে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সে নেশা এখন কেটে গেছে। পেয়ে বসেছে ভয় আর আতঙ্ক। বাড়ি থেকে বের হলে কখন ফিরবো তা নিয়ে পরিবারের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। সাংবাদিকতাও নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। সেলফ সেন্সরশিপ কাবু করে ফেলেছে এই পেশাকে। প্রতিদিনই পাঠকের সঙ্গে প্রতারণা করি। পর্দার আড়ালে আত্মসমর্পণ করি অদৃশ্য শক্তির কাছে। তাছাড়া, নিকৃষ্ট দলবাজি তো আছেই। ইতালি বিশ্বকাপে আমার স্বপ্নের ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনা। ভারতীয় সাংবাদিক অমিয় তরফদারের কাছে অনেক গল্প শুনেছি। তিনি কিভাবে পাঞ্জাবি পরিয়ে ছবি তুলেছিলেন। যা ছাপা হয়েছিল কলকাতার পত্রিকায়। হোটেলে দেখা করা সম্ভব নয়। অসম্ভব নিরাপত্তা। একমাত্র জায়গা প্র্যাকটিস ফিল্ড। তা-ও কাছে যাওয়া যাবে কিনা! এক সকালে ঠিকই পৌঁছে গেলাম প্র্যাকটিস মাঠে। ম্যারাডোনা ব্যস্ত। ঘণ্টাখানেক চললো প্রাকটিস। বের হওয়ার মুহূর্তে ম্যারাডোনার একান্ত সচিবের মুখোমুখি হলাম। ভাঙা ভাঙা ইংরেজি। কেন যে স্প্যানিশ শিখে যাইনি। সেক্রেটারি বললেন, মনে হয় সুযোগ হবে না। কথা বলে দেখতে পারি। ফিরে এসে বললেন, দুই মিনিট হয়তো সুযোগ পাবেন। তাতেই রাজি। বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে মনে হলো নামটা তার কাছে অপরিচিত। বললাম, ভেরি ক্লোজ টু ইন্ডিয়া। ও ইন্ডিয়া। কেমন আছেন। ভাল আছি। বাংলাদেশের ফুটবল কেমন? র‌্যাঙ্কিং শুনে আক্কেল গুড়ুম। এই দেশ থেকে আবার খেলা কভার করতে গিয়েছি? সরি, কি আর বলবো এত বড় দেশ ভারত তারাও পারলো না। প্রাইভেট সেক্রেটারি ঘড়ির কাঁটা দেখে বললেন, থ্যাঙ্ক ইউ। ফিরে এসে রিপোর্ট করলাম ইত্তেফাকে। যা প্রথম পাতায় গুরুত্ব সহকারে ছাপা হয়েছিল। সেদিন ম্যারাডানাকে বলতে পারিনি বাংলাদেশ কোথায়, তিনি জানেন না অথচ তার জন্য এই দেশটির অগণিত ভক্ত নফল নামাজ পড়েন। ঝগড়া করে বউকে তালাক দেন। রাজপথে আহাজারি করেন হাজারো ভক্ত। আর্জেন্টিনার পতাকা ঘরে ঘরে টাঙিয়ে উল্লাস করেন। ম্যারাডোনার মুখোমুখ
ি হওয়া তখন ছিল স্বপ্নের মতো। পরে অবশ্য তার একাধিক সংবাদ সম্মেলন কভার করেছি। বাংলাদেশের আরেক সাংবাদিক দিলু খন্দকার ’৯৪ বিশ্বকাপে ম্যারাডোনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। প্রিয় সহকর্মী দিলু খন্দকার তখন ইত্তেফাকে। আমি ইত্তেফাক ছেড়ে বাংলাবাজার পত্রিকার সম্পাদক হয়েছি। সেবার আসর বসেছিল যুক্তরাষ্ট্রে। হেনরি কিসিঞ্জারের জন্যই ফুটবল কিছুটা জনপ্রিয় হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। কিসিঞ্জারের বংশধররা ইউরোপ থেকে গিয়ে সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছিলেন। সে কারণে ফুটবলের প্রতি কিসিঞ্জারের প্রেম ছিল অন্যরকম। তার একক চেষ্টায় ফিফা রাজি হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে আসর বসাতে। প্রথমে ফিফা বলেছিল মাঠ খালি যাবে। দর্শক থাকবে না। সেটা ভুল প্রমাণিত হয় টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার পর। পাওলো রসির মুখোমুখি হয়েছিলাম একদিন ইতালির মিলানের সান সিরো স্টেডিয়ামে। সে সময়কার বিখ্যাত ফুটবলার রসি।

সূত্রঃ mzamin.com

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More