দিল্লির রাস্তায় তরুণীর লোমহর্ষক মৃত্যুতে স্তব্ধ গোটা ভারত

0

১ জানুয়ারি ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ২০ বছর বয়সী এক তরুণীর লোমহর্ষক মৃত্যু পুরো দেশকে স্তব্ধ করেছে।

গণমাধ্যম থেকে জানা যায়, ওই তরুণী পেশায় একজন ইভেন্ট ম্যানেজার ছিলেন। নববর্ষের দিন ভোরে কাজ থেকে ফেরার সময় তার স্কুটারের সঙ্গে একটি গাড়ির সংঘর্ষ হয়। পুলিশ বলছে, গাড়িটিতে চালকসহ মোট পাঁচজন ছিলেন।

গাড়িটি তরুণীর দেহকে টেনে নিয়ে মাইলের পর মাইল চলেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সংবাদপত্র অনুসারে, তরুণীর দেহটি প্রায় এক ঘণ্টা ধরে রাস্তায় টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজেও গাড়ির নিচে লাশ দেখা গেছে।

ভারতে সড়ক দুর্ঘটনা খুবই সাধারণ ঘটনা। প্রতিবছর এতে কয়েক লাখ লোক মারা যায়। তবে এই বিশেষ লোমহর্ষক ঘটনাটি পুরো জাতির মনোযোগ কেড়েছে এবং গণমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা তৈরি করেছে। এই দুর্ঘটনাটি নববর্ষের দিন ঘটেছে। সে সময় দিল্লির রাস্তায় হাজার হাজার টহল পুলিশ মোতায়েন ছিল। তাই এ দুর্ঘটনাকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

গাড়িতে থাকা পাঁচজনকেই ইতিমধ্যে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে। তবে তারা এখনো কোনো বিবৃতি দেয়নি। পুলিশ তাদের তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।

নিহতের পুরো পরিবার আকস্মিক এ দুর্ঘটনায় হতবিহ্বল। তিনি তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। তার বাবা কয়েক বছর আগেই মারা গেছেন। তার মাও অসুস্থতার কারণে কাজ করছেন না। তার মা বিবিসি হিন্দিকে বলেছেন, ‘আমার মেয়ে খুব হাসিখুশি ছিল। সে ইনস্টাগ্রাম রিল বানাতে পছন্দ করত। মেয়ের শেষকৃত্য করার জন্য আমাদের কাছে টাকাও নেই। ’

এদিকে নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে, তাকে যৌন নিপীড়ন করা হয়েছিল। কারণ তার দেহটি উদ্ধারের সময় নগ্ন ছিল। তবে পুলিশ বলেছে, ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এমন কিছু পাওয়া যায়নি।

দিল্লি পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাগর প্রীত হুদার বিবৃতি অনুসারে, ‘সব জখম ভোঁতা আঘাতের কারণে হয়েছে। সম্ভবত যানবাহন দুর্ঘটনা এবং টেনে নিয়ে যাওয়ার কারণে হয়েছে। এ ছাড়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে যৌন নিপীড়নের কোনো আঘাতের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। ’ মৃত্যুর অস্থায়ী কারণ ‘মাথা, মেরুদণ্ড, ঊরুর হাড় এবং নিম্নাঙ্গে আঘাতের কারণে শক এবং রক্তক্ষরণ’।

এদিকে পুলিশ এ ঘটনায় অন্য একজন নারীকে খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছে। তিনি সংঘর্ষের সময় নিহতের স্কুটারের পেছনে ছিলেন। ঘটনার পর তিনি ভয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তবে এখন তিনি পুলিশকে তদন্তে সাহায্য করছেন।

পুলিশের তথ্য অনুসারে, রবিবার সকালে তারা দুটি ফোন পাওয়ার পর তদন্ত শুরু করে। প্রথম ফোনে মারুতি ব্যালেনো গাড়ি একজন নারীকে টেনে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানানো হয়। দ্বিতীয় ফোনে উত্তর দিল্লির একটি রাস্তায় একজন নারীর দেহ পড়ে থাকার বিষয়ে জানানো হয়। খোঁজাখুঁজির পর তারা গাড়িটি খুঁজে পায় এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে। গাড়িতে থাকা পাঁচজনের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক হত্যাকাণ্ড এবং অবহেলার কারণে মৃত্যুর অভিযোগ আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার হুদা।

পুলিশ জানায়, ৩১ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত রাতের বেলা চালানোর জন্য ওই গাড়িটি এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার নেওয়া হয়েছিল। অভিযুক্তরা বলেছে, তারা স্কুটারটিকে আঘাত করার পর আতঙ্কিত হয়ে দ্রুত চলে গিয়েছিল। তারা বুঝতে পারেনি যে ওই তরুণীর দেহটি টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাদের দাবি, তারা গাড়িতে উচ্চৈঃস্বরে গান বাজানোর কারণে তরুণীর চিৎকার শুনতে পায়নি।

পুলিশের অভিযোগে অভিযুক্তদের মাতাল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গাড়িটি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের একটি দল পরীক্ষা করবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এ ছাড়া অভিযুক্তদের ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে পুরো ঘটনা যাচাই করবে পুলিশ এবং যা ঘটেছে তা পুনরায় সাজানো হবে।

রাজনৈতিক দোষারোপ

এই দুর্ঘটনার মামলাটি ভারতে রাজনৈতিক বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। দিল্লি শাসনের দায়িত্বে থাকা আম আদমি পার্টি (এএপি) শহরে দুর্বল নিরাপত্তার কথা তুলে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। তাদের দাবি, শহরের পুলিশ বাহিনীর ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বাহিনীটি কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জবাবদিহি করে।

সোমবার দলটির সদস্যরা লেফটেন্যান্ট গভর্নর ভি কে সাক্সেনার কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ করেছেন। তারা এই ঘটনার জন্য তার পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লির লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগ করে।

এএপির মুখপাত্র সৌরভ ভরদ্বাজ অভিযোগ করেছেন, পাঁচজন অভিযুক্তের একজন ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সদস্য। সাক্সেনা এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ‘ইচ্ছাকৃতভাবে এই তথ্য গোপন করার’ অভিযোগ করেছেন তিনি।

আগের দিন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এক টুইটে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ‘দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা’ নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। তাদের ‘রাজনীতির ওপর মহলে সংযোগ’ থাকলেও কোনো নমনীয়তা দেখানো উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সরাসরি এএপির সমালোচনার জবাব দেননি। তবে তিনি পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ঘটনার দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে সাক্সেনা বলেছেন, তিনি তদন্তের তত্ত্বাবধান করছেন। এর আগে তিনি বলেছিলেন, ‘অপরাধীদের ভয়ঙ্কর সংবেদনশীলতা’ দেখে তিনি হতবাক হয়েছেন এবং ‘অমানবিক অপরাধের জন্য লজ্জায় তার মাথা নিচু হয়ে গেছে। ‘

সূত্র : বিবিসি

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More