শিবিরের রিজার্ভ ফোর্স ঢাকায়! সাত শতাধিক পয়েন্টে সশস্ত্র অবস্থান

0

shibir-logo_178401চলমান অবরোধে ২০ দলীয় জোটের প্রধান শরিক বিএনপিসহ অন্যান্য দলের নেতা-কর্মীদের তেমন তৎপরতা নেই। তবে জামায়াত-শিবির নাশকতায় বেশ সক্রিয় আন্দোলনে শক্তি জোগাতে। এ উদ্দেশ্যে রাজধানীতে জড়ো করা হচ্ছে শিবিরের রিজার্ভ ফোর্স।

বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে, রাজধানী ও এর আশপাশে এখন প্রায় সাড়ে ছয় হাজার শিবিরকর্মী প্রস্তুত রয়েছে। তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আনা হয়েছে। সাত শতাধিক পয়েন্টে বিএনপিসহ ২০ দলের অন্যান্য বিশ্বস্ত নেতার আশ্রয়ে আছে তারা। তিনজন করে একেকটি দল গঠন করা হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা বিভিন্ন স্থানে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ ও যানবাহনে আগুন লাগানোর কাজে নিয়োজিত।

সূত্র জানায়, রাজধানীতে এখন প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা চলছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার তরুণ এই পরীক্ষা দিতে আসছে। শিবিরের প্রশিক্ষিত কর্মীরা তাদের সঙ্গে মিশে থাকার সুযোগ নিচ্ছে।

গত দুই বছরে ২০ দলীয় জোটের অবরোধ ও হরতালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ঘটলেও রাজধানী ছিল অনেকটাই সুরক্ষিত। ঢাকাকেন্দ্রিক অবরোধ ও হরতালে ব্যর্থতার কারণে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন সফল হয়নি।

শিবিরের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে এবারও ছাত্রশিবির আপাতত ‘গেরিলা কায়দায়’ হামলা ছাড়া কোনো বিকল্প খুঁজে পাচ্ছে না। তবে তাদের পরিকল্পনা হলো, আওয়ামী নেতা-কর্মীদের বিক্ষুব্ধ করে তোলা। আর তা করা গেলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সহিংস কর্মকাণ্ড চালাবে এবং এতে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়বে। এ সুযোগে ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু এভিনিউসহ মহানগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের অফিসে হামলা চালানো হতে পারে। যাতে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মনোবল ভেঙে পড়ে।

শিবির নেতারা আরো জানিয়েছেন, এবার রাজধানীতে দীর্ঘমেয়াদে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য নতুন ‘ছক’ কষেছেন তাঁরা। ২০ দলীয় জোটের অনির্দিষ্টকালের অবরোধ শিবিরের সেই ‘ছক’ বাস্তবায়নে সাহায্য করবে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এরই মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, কাকরাইল, বায়তুল মোকাররমসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে সংগঠনটির ক্যাডাররা অবস্থান নিয়েছে। সেই ছকের অংশ হিসেবে মতিঝিলে আশ্রয় নেন শিবিরের নড়াইল জেলার অতিপরিচিত মুখ ইমরুল কায়েস। গত সোমবার পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন তিনি। একই ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুর মহানগর ঘিরেও। এর সঙ্গে বাছাই করা ৩৩টি জেলার জামায়াত ও শিবির সভাপতির কাছে কেন্দ্র থেকে বিশেষ নির্দেশনা গেছে। জেলাগুলোর মধ্যে সাতক্ষীরা, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, মাগুরা, পটুয়াখালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, ঝিনাইদহ, লালমনিরহাট, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, পিরোজপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও কক্সবাজার অন্যতম।

অতীতের মতো পুলিশ পেটানোর পাশাপাশি সরকারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অফিসে হামলা, অগ্নিসংযোগ, থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন, ঢাকায় আওয়ামী লীগের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের অফিসে আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

ছাত্রশিবিরের সূত্র দাবি করেছে, মূলত ফেব্রুয়ারি থেকেই শুরু হবে তাদের তাণ্ডব। জাতীয় সংসদের চলতি পঞ্চম অধিবেশনে উত্থাপিত হতে যাচ্ছে জামায়াত নিষিদ্ধের বিল। এই বিল পাস হলে জামায়াত চূড়ান্তভাবে নিষিদ্ধ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে যেকোনো ধরনের নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে শিবির। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবিরের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক নেতা বলেন, ‘সরকার টিকে গেলে আমাদের বাঁচার পথ থাকবে না। এমনিতেই গত ছয় বছরের মামলা-হামলায় আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। অর্থনৈতিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সংগঠন। জেল খাটতে খাটতে অনেক নেতা-কর্মীর মনোবল ভেঙে গেছে।’

নাশকতা বাস্তবায়নে নানা ধরনের কৌশল গ্রহণ করেছে শিবির। গ্রেপ্তার এড়াতে পোশাকে পরিবর্তন এনেছে ক্যাডাররা। তিন সদস্যের প্রতিটি দলে রয়েছে একজন নেতা। রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে হামলার স্থান নির্ধারণ করে তারা। স্থান নির্ধারণ হয়ে গেলে একসঙ্গে না এসে ১৫-২০ মিনিটের ব্যবধানে একে একে এসে জড়ো হতে শুরু করে রিজার্ভ ফোর্সের কর্মীরা। কাস্টমার সেজে একেক দোকানের সামনে অবস্থান নেয় তারা। গ্রিন সিগন্যাল মিললেই মুহূর্তের মধ্যে একজোট হয়ে হামলা চালিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে রিজার্ভ ফোর্সের সদস্যরা। যানবাহনে হামলার ক্ষেত্রে শিবির সদস্যরা আধুনিক পোশাকে সজ্জিত হয়ে সুবিধাজনক স্থানে যাত্রী সেজে দাঁড়িয়ে থাকে। সুযোগমতো চালককে থামার ইঙ্গিত দিয়েই চালানো হয় হামলা।

শিবিরের রিজার্ভ ফোর্সকে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখতে ফেসবুকে সক্রিয় রয়েছেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতারা। গতকাল রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড, লালবাগ, শাহাজাদপুর ও ধানমণ্ডিতে প্রকাশ্যে মিছিল করেছে জামায়াত-শিবির। ছাত্রশিবির প্রতিদিন গণমাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে তাদের কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরছে। ফেসবুকের মাধ্যমে কর্মীদের পরোক্ষ নির্দেশনা দিচ্ছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার ও সেক্রেটারি জেনারেল আতিকুর রহমান। গত সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আতিকুর রহমান হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। এ ছাড়া ১৪৪ ধারা ভেঙে নেতা-কর্মীদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল জব্বার। শিবিরের তিতুমীর কলেজের সাবেক এক সভাপতি বলেন, এটাই ছিল কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সেক্রেটারির পক্ষ থেকে সরকার উৎখাতে রিজার্ভ ফোর্সের জন্য দীর্ঘমেয়াদি হামলার সবুজ সংকেত।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More