মারা গেছেন বগুড়ায় ছুরিকাঘাতে আহত মেডিকেল শিক্ষার্থী

0

বগুড়ায় চাপের মধ্যে ময়লা থাকার প্রতিবাদ করায় ভাজাপোড়া বিক্রেতার ছুরিকাঘাতে আহত মেডিকেল শিক্ষার্থী মেহেরাজ হোসেন ফাহিম রোববার সকালে মারা গেছেন। তিনি ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ১১ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। ঢাকার কাফরুলের বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ গাজীর ছেলে ফাহিম বগুড়া শহিদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের (শজিমেক) পঞ্চম বর্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।

শজিমেকের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রেজাউল আলম জুয়েল জানান, ফাহিমের মৃত্যুতে একটা প্রতিভার মৃত্যু হলো। তিনি এ হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, আগের মামলাটি হত্যা মামলায় রূপান্তর হবে। গ্রেফতার দুই আসামি ফরিদ বেপারী (৫১) ও তার ছেলে শাকিল বেপারী (২৬) বগুড়া জেলহাজতে রয়েছেন।

এদিকে, ফাহিমের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ছয় দফা দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন শজিমেকের শিক্ষার্থীরা। রোববার বিকালে প্রতিষ্ঠানের সামনে প্রায় দেড় ঘণ্টা ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। এর আগে তারা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পুলিশ প্রশাসন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে তারা ক্যাম্পাসে ফিরে যান। অবরোধ চলাকালে মহাসড়কে উভয়পাশে কয়েক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।

মহাসড়ক অবরোধকালে শিক্ষার্থী শৈশব রায়, অর্ঘ রায়, অর্ণব আকন্দ, আনোয়ারুল আজিম প্রমুখ বক্তব্য দেন। তাদের ছয়দফা দাবি হলো-আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালের ২ নম্বর গেটসংলগ্ন সব অবৈধ দোকান উচ্ছেদ, দোকানিদের ট্রেড লাইসেন্সসহ পুলিশের অনুমতি সাপেক্ষে ব্যবসার অনুমতি, ক্যাম্পাসের ২ নম্বর গেটসংলগ্ন নতুন রাস্তার মোড়, ছাত্রী হোস্টেলের সামনে, ফিরিঙ্গির মোড় ও ভার্সেটাইল মোড়ে সিসিটিভি স্থাপন, ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ও প্রবেশমুখে ২৪ ঘণ্টা আনসার মোতায়েন, নতুন রাস্তার মোড়ে সার্বক্ষণিক পুলিশি টহল, অন্ধকার পয়েন্ট আলোকিত এবং ফাহিমের হত্যাকারীদের দ্রুত ও সর্বোচ্চ শান্তি নিশ্চিত করা। দাবিগুলো অবিলম্বে পূরণ করা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করা হবে বলে ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।

খবর পেয়ে বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরাফত ইসলাম, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূরে আলম সিদ্দিকী, পরিদর্শক (তদন্ত) বাবু কুমার বিশ্বাস প্রমুখ কর্মকর্তা এবং শজিমেক হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. রেজাউলসহ হাসপাতালের কর্মকর্তারা সেখানে আসেন।

পুলিশ সুপার জানান, কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হবে। আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে অবরোধ তুলে নেন।

উল্লেখ্য, ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে ফাহিম নাশতার জন্য কলেজের হোস্টেল থেকে খান্দার নতুন সড়কের মোড়ে যান। সেখানে তিনি ফরিদ ও তার ছেলে শাকিলের ভ্রাম্যমাণ ভাজাপোড়ার দোকানে চপ খান। চপের মধ্যে ময়লা থাকায় তিনি প্রতিবাদ করলে ফরিদ ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে ধাক্কা দেন। এসময় শাকিল পেঁয়াজ কাটার ছুরি দিয়ে ফাহিমের বাম পাঁজরে আঘাত করেন। এতে ফাহিম রক্তাক্ত জখম হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। তার চিৎকারে উপস্থিত মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাকে আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তৃতীয় দিনে তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছিল।

এ ঘটনায় ফাহিমের বাবা সদর থানায় ফরিদ ও শাকিলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ রাতেই বগুড়া শহর ও সোনাতলার বালুয়াহাটে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করে। তাদের কাছে থেকে হামলায় ব্যবহৃত ছুরিটি জব্দ করা হয়। পরদিন তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ফরিদ বগুড়া শহরের মালগ্রাম চাপড়পাড়ার মৃত মনসুর বেপারির ছেলে।
jugantor

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More