উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে অত্যাধুনিক গ্রেনেড এল কোথা থেকে

0

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) এক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর ঝুপড়িতে অবিস্ফোরিত একটি গ্রেনেড উদ্ধারের ঘটনায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অত্যাধুনিক গ্রেনেডটি এল কোত্থেকে—এ প্রশ্ন আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দেশি-বিদেশি সেবা সংস্থা ও সাধারণ শরণার্থীদের।

উদ্ধার করা গ্রেনেডটি আর্জেস গ্রেনেড মনে হলেও গায়ে কোনো সিল বা লেখা নেই। এ কারণে এটি কোথা থেকে এখানে এসেছে, সেই রহস্য উদ্‌ঘাটনে মাঠে নেমেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, দেখতে আর্জেস গ্রেনেড মনে হলেও এটি মিয়ানমারের তৈরি গ্রেনেড হতে পারে। গ্রেনেডের গায়ে কোনো সিল বা লেখা নেই। ধারণা করা হচ্ছে, এটি মিয়ানমার থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার বেলা দেড়টার দিকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সন্ত্রাসীদের হামলায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেন বাহিনীর সদস্য মোহাম্মদ নবী (৪০) গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তিনি ওই আশ্রয়শিবিরের বি-৩৯ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ হাশিমের ছেলে। পুলিশের তত্ত্বাবধানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মোহাম্মদ নবীর চিকিৎসা চলছে।

পুলিশ জানায়, গতকাল বিকেলে এপিবিএন নবীর বসতিতে অভিযান চালিয়ে গ্রেনেডটি উদ্ধার করে। আজ শনিবার দুপুরে সেনাবাহিনীর ৩০ জনের একটি বিস্ফোরক দল ঘটনাস্থলে গিয়ে গ্রেনেডটি দেখে ফিরে আসে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, রোহিঙ্গার বসতিতে পাওয়া সবুজ রঙের গ্রেনেডটি আর্জেস গ্রেনেডের মতো। গ্রেনেডটির পিন বন্ধ রয়েছে। অনুসন্ধানে পুলিশ জানতে পেরেছে, গ্রেনেডটি নবী হোসেন বাহিনীর। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোহাম্মদ নবী রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের অন্যতম সহযোগী। গ্রেনেডটি তাঁর ঘরে কিভাবে এসেছে তা জানতে মোহাম্মদ নবীকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবে পুলিশ।

এ বিষয়ে কথা বলতে ৮ এপিবিএনের মুখপাত্র ও সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন ও মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আশ্রয়শিবিরগুলোর রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে চার মাস ধরে প্রায়ই স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হচ্ছে। এসব সংঘর্ষে এ ধরনের গ্রেনেড ব্যবহার হয়ে আসছে। আশ্রয়শিবিরে ইয়াবা ও আইস চোরাচালানের অন্যতম হোতা নবী গ্রুপের প্রধান নবী হোসেন উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে গ্রেনেডসহ ভারী অস্ত্রের মজুত ঘটিয়ে থাকতে পারেন। মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা) ঠেকানো এর উদ্দেশ্য হতে পারে।

এদিকে আজ সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত গ্রেনেড উদ্ধার ও সন্ত্রাসী নবী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় উখিয়া থানায় মামলা হয়নি। এসব বিষয়ে ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধার করা গ্রেনেডটি মামলার আলামত হিসেবে দেখানো হচ্ছে। এ কারণে গ্রেনেডটি নিষ্ক্রিয় করতে আদালতের অনুমতির দরকার। তাই সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক দল গ্রেনেডটি নিষ্ক্রিয় না করে ফিরে গেছে। আদালতের অনুমতি পেলে এটি নিষ্ক্রিয় করা হবে। আজ বিকেলে সাধারণ ডায়েরি–মূলে গ্রেনেড বিস্ফোরণের অনুমতি চেয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আবেদন করে পুলিশ। আগামীকাল রোববার আবেদনের শুনানি হবে।

পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, চার মাসে উখিয়ার একাধিক আশ্রয়শিবিরে আরসার সঙ্গে নবী হোসেন বাহিনীর একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ২৩ জন রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১০ রোহিঙ্গা মাঝি ও পাঁচজন আরসার সদস্য। বাকিরা সাধারণ রোহিঙ্গা। নিহত মাঝিরা নবী হোসেন গ্রুপের সমর্থক।

আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ নবী আশ্রয়শিবিরের মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত। মাদক চোরাচালানের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে আরসার সঙ্গে নবী হোসেন বাহিনীর সদস্যদের বিরোধ রয়েছে। গতকাল দুপুরে আরসার ১০–১২ জন সন্ত্রাসী ক্যাম্পে ঢুকে মোহাম্মদ নবীকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। ব্যর্থ হয়ে তাঁকে কয়েক রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায় আরসা সন্ত্রাসীরা। পরে ঘটনাস্থল থেকে এপিবিএন সদস্যরা গুলিবিদ্ধ মোহাম্মদ নবীকে উদ্ধার করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা প্রথম আলোকে বলেন, আরসাকে ঠেকাতে উখিয়ার আশ্রয়শিবিরে তৎপর হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরেক বিদ্রোহী সংগঠন ‘আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)’। আরএসওর সমর্থন নিয়ে নবী হোসেন বাহিনীর সদস্যরা মিয়ানমার থেকে সংগ্রহ করছেন গ্রেনেড, পিস্তল, গুলিসহ ভারী অস্ত্র। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ইয়াবা ও আইসের চালান বাংলাদেশে আনেন নবী হোসেন। টেকনাফের একজন ইয়াবা গডফাদারের সঙ্গে তাঁর সখ্য রয়েছে।

উৎসঃ   প্রথমআলো
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More