এখন স্বপ্ন শুধুই বিশ্বজয়ের!

0

ঢাকা: ভালো খাবারের তৃপ্তির ঢেঁকুর উঠে দীর্ঘক্ষণ! বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের অবস্থা এখন তেমনই। এগারো বীর বাঙালির ব্রিটিশবধের উল্লাস যেন থামছেই না। সোমবার সন্ধ্যায় জয়ের পর থেকেই শুরু হয়েছে উল্লাস-উচ্ছ্বাস। যা এখনো চলছে বীরদর্পে। গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বন্দনা করতেও ক্লান্ত হচ্ছেন না কেউই। আর সবার চোখে স্বপ্ন এখন আরো বড়- আর মাত্র তিনটি ম্যাচ বিজয়। এরপর ষাট সেন্টিমিটার উচ্চতা আর এগারো কেজি ওজনের সোনালী-রুপালি বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরবেন মাশরাফি বিন মুর্তজা।

ক্রিকেট সবসময় সবাইকে এক সুতোয় গাঁথে- এ কথাটার পূর্ণজন্ম হয়েছে সোমবার রাতেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানিয়েছেন বিজয় মিছিলের। একই আহ্বান জানিয়ে বারো ঘণ্টার জন্য হরতাল শিথিল করেছেন বেগম খালেদা জিয়াও। দেশের প্রধান দুই দলের সঙ্গে দেশের আপামর জনতাও নিজ নিজ উদ্যোগে বের করেছেন বিজয় মিছিল। হাতের কাছে যা পেয়েছেন তাই বাজিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ক্রিকেট দলকে।

‘মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি’- জাতীয় সংগীতের এ গানটার মতো মাতৃভূমির মুখ মলিন হতে দেয়নি বাংলাদেশের ক্রিকেটারা। নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কথা রেখেছেন ক্রিকেটাররা। প্রায় দু’মাস আগে দেশত্যাগের সময় মাশরাফি যখন বলেছিলেন, ‘কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবো। এ কথা শুনে যারা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসেছিলেন, তারাও এখন সামিল বিজয়ের উল্লাসে।’

প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সকালেই বিজয় মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে শুরু হয় আওয়ামী লীগের বিজয় মিছিল। যা পল্টন মোড় থেকে প্রেসক্লাব ঘুরে শাহবাগ পৌঁছায়। সেখান থেকে আবারো বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে ফিরে আসে উল্লাসমুখর এ শোভাযাত্রাটি। নেচে-গেয়ে আর হর্ষধ্বনির মধ্য দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপিও বের করে বিজয় মিছিল।
RANA-(10)এতো গেলো রাজনৈতিক দলের উল্লাস। সাধারণ মানুষের উল্লাসও ছিল বাঁধভাঙা। সর্বসাধারণের এ উল্লাসে এখন পরিপূর্ণ সমগ্র বাংলাদেশ। যার প্রধান কেন্দ্রবিন্দু নিঃসন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাকে বলাই যায়। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার টিএসসি চত্বরের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে শুরু হয়েছে উল্লাস। একদল এসেছে ঢাক-ঢোল নিয়ে; অন্যদলের আগমন স্পিকারে গানের সুরে। আর যাদের কাছে এর কিছুই ছিল না, তাদের তো গলাই সম্বল! তাদের গগনবিদারী হর্ষধ্বনিতে যেন চাপা পড়ে গিয়েছিল ঢাক-ঢোল আর উচ্চস্বরের গানের সুরও। এই দুইয়ের সংমিশ্রণে মাঝেমাঝেই মনে হচ্ছিল সহ্যসীমার শব্দের পরিমান ৮০ ডেসিমাল যেন পার হয়ে যাচ্ছিল।

বসনেও ছিল উল্লাসের ছোঁয়া। মাথায় লাল-সবুজের পতাকা বেঁধে, কিংবা গায়ে ক্রিকেট দলের জার্সি পড়ে আগত সবাই যেন এক একজন মাশরাফি-সাকিব-মুশফিক-রুবেল। আর একে অপরকে আবিরের রঙে রাঙানোর আয়োজন তো ছিলই।

এ উল্লাসের মাঝেই কথা হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র আমিনুলের সঙ্গে। বাংলামেইলকে তিনি বললেন, ‘আমাদের দেশের ক্রিকেটে এর চেয়ে বড় সাফল্য আর আসেনি। কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে মনে হচ্ছে, আমরা বিশ্বকাপ জয় করে ফেলেছি।’

তার পাশে থাকা তানজিনা আবার আরেক কাঠি সরস, তিনি বললেন, ‘কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে ফাইনাল- মাত্র তিন ম্যাচ। এ তিন ম্যাচ জিতলেই আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। এটা খুব একটা কঠিন কাজ বলে আমার মনে হয় না!’

প্রায় একই ধরনের জবাব অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র আবিরের। তিনি বললেন, ‘আমরা যদি একটু বুঝে-শুনে খেলি, তাহলে বিশ্বকাপ জিততে পারবো। তবে তা না হলেও আপত্তি নেই, ওরা আমাদের মনোবাসনা পূর্ণ করে দিয়েছে।’
Press-Club-43শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা নয়, অলিগলিতেও এখন বিজয় উল্লাসে ভাসছে। কেউ বাইকে, কেউ হেঁটে। ওরা রাজপথে যাকে পাচ্ছে, তাকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ প্রকাশ করছে। আর যে বেশি কাছের তার গাল রাঙিয়ে তুলছেন আবিরের রঙে।

সোমবার রাতে শুরু হওয়া এ উল্লাসে অস্থির, আতঙ্কের দেশটার মেজাজটাই বদলে গেছে। সব মিলিয়ে ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের জনপদের মানুষের জীবনের এখন একটাই রঙ- প্রিয়, অতি প্রিয় লাল-সবুজ!

সূত্রঃ বাংলামেইল

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More