প্রাইভেট কোচিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ‘বেশি ব্যয়’ বাংলাদেশে

0

প্রাইভেট কোচিংয়ে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে বাংলাদেশে।

বাংলাদেশে গ্রামীণ এলাকার ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট পড়ে এবং শহরাঞ্চলে এ হার ৬৭ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় শহরে এ হার ৬৫ এবং গ্রামে ৬২ শতাংশ। পাকিস্তানে সরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের ২৫ ও বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের ৪৫ শতাংশকে প্রাইভেট পড়তে হয়। ভারতে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রেও ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী প্রাইভেট শিক্ষকের দ্বারস্থ হয়।

গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২২ এ এসব তথ্য উঠে এসেছে। ইউনেসকো প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার শিক্ষায় বেসরকারি খাতের ভূমিকা সংক্রান্ত গবেষণা করেছে। এতে সহযোগী হিসেবে রয়েছে ব্র্যাক।

মঙ্গলবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘দক্ষিণ এশিয়া: শিক্ষাক্ষেত্রে অরাষ্ট্রীয় অবদান’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ বাংলাদেশে মাধ্যমিকে ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের। তবে প্রাক প্রাথমিকে শ্রীলঙ্কায় ৮০ শতাংশ, প্রাথমিকে ভারতে ৪৫ ও উচ্চশিক্ষায় আফগানিস্তানে ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। প্রাক প্রাথমিকে বাংলাদেশে ৫৫, প্রাথমিকে ২৪ ও উচ্চশিক্ষায় ৩৬ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ে। অন্যদিকে ভারতে মাধ্যমিকে ৫১ ও উচ্চশিক্ষায় ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ে।

গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ পরিবার বহন করে। তবে এনজিও স্কুলে ফি সরকারির তুলনায় তিনগুণ ও বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ফি সরকারির তুলনায় নয়গুণ বেশি। পাকিস্তানে শিক্ষা ব্যয়ের ৫৭ শতাংশ বহন করে পরিবার। নেপালে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় পরিবারের ব্যয় ৬৩ শতাংশ এবং কারিগরি-বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে পরিবার ব্যয় করে ৭৫ শতাংশ। ভারতে শীর্ষ ২০ শতাংশ পরিবার নিচের ২০ শতাংশ পরিবারের তুলনায় সরকারি, বেসরকারি অনুদানপ্রাপ্ত এবং অনুদানবিহীন সব রকম স্কুলে প্রায় চারগুণ বেশি ব্যয় করে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ১২ শতাংশ পরিবার সঞ্চয় করে এবং ৬ শতাংশ পরিবার স্কুলের ফি মেটাতে ঋণ করে থাকে। বাংলাদেশে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পরিবার ঋণ করে বেসরকারি পলিটেকনিকে পড়াশোনার খরচ মেটায়। ভুটান, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা গ্রহণকারীদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি বৃদ্ধি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি এর ওপর কর আরোপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিল। ফলস্বরূপ, কিছু সিদ্ধান্তের পরিবর্তনও হয়েছিল।

এই প্রতিবেদনের জন্য করা একটি জরিপে দেখা যায়, ভারতের এক হাজার ৫০টি কম খরচের বেসরকারি স্কুলের মধ্যে এক হাজারটি স্কুল শুধু ফির ওপর নির্ভর করে চলে।

প্রাইভেট-কোচিংয়ের কৃতকার্যতার ব্যাপারে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৭০ শতাংশের বেশি রাষ্ট্রীয় ও অরাষ্ট্রীয় শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রাইভেট পাঠদান শিক্ষার্থীদের ভালো ফল পেতে সাহায্য করেছে। উচ্চ আয়ের সন্ধানে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে অনেক মেধাবী শিক্ষক এই ‘ছায়া শিক্ষা’য় চলে গেছেন বলে জানা যায়। তবে শ্রীলঙ্কায় প্রাইভেট পাঠদানে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলেনি। নেপালে শিক্ষকরা প্রাইভেট পাঠদানের চাহিদা বাড়াতে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে পড়ার বিষয় অসম্পন্ন করে রাখেন বলে জানা যায়। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের শহরাঞ্চলে শিক্ষার্থীরা তাদের শ্রেণিকক্ষের শিক্ষকদের চেয়ে কোচিং সেন্টারের শিক্ষকদের প্রতি বেশি শ্রদ্ধাশীল বলে জানা যায়।

বাংলাদেশের ব্যাপারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার দায়িত্বভার দুটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে ভাগ করা হয়েছে। যা পাঠ্যক্রম, শিক্ষক, শিক্ষার গুণগত মান ও অন্যান্য মানদণ্ডগুলোর ক্ষেত্রে সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গিকে বাধাগ্রস্ত করছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসাইন জিল্লুর রহমান, গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে. চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইউনেসকোর পরিচালক ড. মানোস অ্যান্টোনিনিস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্র্যাকের পরিচালক সাফি রহমান খান।

উৎসঃ   দেশ রূপান্তর
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More