কানাডাগামী সিলেটের ৪২ যাত্রীকে আটকে দিয়েছে বিমান, নানা আলোচনা

0

পাসপোর্টে কানাডার ভিসা ছিল। আসা-যাওয়ার বিমান টিকিটও ছিল। ইমিগ্রেশন পুলিশও তাদের পাসপোর্টে সিল দিয়েছিল।  কিন্তু তবুও কানাডা যেতে পারেননি সিলেটের ৪২ যাত্রী। বাংলাদেশ বিমানের কর্মকর্তারা তাদেরকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আটকে দেন। বিমানের অভিযোগ, ওই যাত্রীরা ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ভিসা করিয়েছেন। বিমান সেটি যাচাই বাছাই করে দেখেছে। নিশ্চিত হওয়ার পরই তাদেরকে আটকে দেয়া হয়। বিমানের দাবি, নিয়ম ও আইনের মধ্যে ওই যাত্রীদের যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। যদিও যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেছেন, তারা সঠিক কাগজপত্র দিয়ে ভিসা করিয়েছেন।

রিটার্ন টিকিট কেটেছেন। অথচ বিমানের কর্মকর্তারা তাদেরকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে যেতে দেয়নি। এতে করে তারা সামাজিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ঠিক তেমনি রিটার্ন টিকিটের টাকাসহ নানাভাবে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের ভাষ্য, কাগজপত্র সঠিক ছিল বলেই কানাডা ভিসা দিয়েছে। কারণ ভিসা দেয়ার আগে কানাডা সেটি যাচাই করেছে। যদি আটকাতে হয় তবে কানাডা ইমিগ্রেশন তাদের আটকাবে। ১০ই নভেম্বরের এই ঘটনা চাউর হওয়ার পর থেকে গোটা সিলেট অঞ্চলে তোলপাড় চলছে। বিভিন্ন দেশে থাকা সিলেটি প্রবাসীরাও চটেছেন। ফেসবুকে বিভিন্নজন বিমানের এমন কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য ওই যাত্রীরা আমন্ত্রণপত্র এনে ভিসার আবেদন করেন। কানাডা তাদেরকে ভিসাও দেয়। নিয়ম মেনেই রিটার্ন টিকিট কেটে নির্ধারিত দিনে সিলেট এয়ারপোর্টে ইমিগ্রেশন শেষ করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন। সেখান থেকে কানেকটিং ফ্লাইটে তাদের কানাডা যাওয়ার কথা ছিল। বিমানবন্দরে আসার পর তাদেরকে আবার বোর্ডিং পাস দেয়ার সময় পাস না দিয়ে বিমানের কর্মকর্তারা তাদেরকে আটকে দেন।

একটি সূত্র জানিয়েছে, বিয়েতে অংশগ্রহণের জন্য যে আমন্ত্রণপত্র দিয়ে তারা ভিসা করিয়েছেন সেটি ভুয়া। বাস্তবে কানাডায় এ ধরনের কোনো বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে না। আর যে ৪২ জন ওই বিয়েতে অংশগ্রহণের জন্য যাচ্ছিলেন তাদেরকে বিয়ের কনের মিথ্যা স্বজন হিসেবে আমন্ত্রণপত্র তৈরি করা হয়েছে। মূলত কানাডা ও সিলেটের একটি সিন্ডিকেট এসব ভুয়া আমন্ত্রণপত্র দিয়ে ভিসা করিয়ে মানুষকে কানাডা পাঠানোর কাজ করছিল। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে অন্তত ১৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। সিন্ডিকেটটি এভাবে আরও অনেক মানুষকে কানাডা পাঠিয়েছে। তবে এভাবে একই ফ্লাইটে এত জনকে পাঠানোর ঘটনা এই প্রথম। বিচ্ছিন্নভাবে যাওয়ার কারণে অনেকেই ধরা পড়েননি। কয়েক মাসে তারা অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে কানাডা পাঠিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়েছে। আর যারা পৌঁছেছে তারা সেখানে গিয়ে শরণার্থী হিসেবে কানাডা সরকারের কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছে।

বিমানবন্দর সূত্রগুলো বলছে, সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে সিলেট থেকে বিমানেরই একটি ফ্লাইটে শাহজালাল বিমানবন্দরে আসেন ওই যাত্রীরা। কারণ কানেক্টিং ফ্লাইটের আগে বিমানের কর্মকর্তারা তাদের পাসপোর্ট চেক করে দেখতে পান প্রায় সবারই এর আগে কোনো দেশে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা নাই। অনেকের খালি পাসপোর্টে কানাডার ভিসা লেগেছে। তখন বিমানের কর্মকর্তারা তাদের আমন্ত্রণপত্র ও হোটেল বুকিং দেখতে চান। তখন তাদের সবারই একই আমন্ত্রণপত্র ভিন্ন ভিন্ন নামে এবং কোনো হোটেল বুকিং দেখাতে পারেননি। তখন বিমানের কর্মকর্তারা চূড়ান্ত সন্দেহের তালিকায় রেখে তাদেরকে জানিয়ে দেন ভিসা ও কাগজপত্রের সত্যতা যাচাই করে তাদেরকে ফ্লাইটে ওঠানো হবে। পরে বিমানের কর্মকর্তারা খোঁজখবর ও যাচাইবাছাই করে নিশ্চিত হন সেটি ভুয়া। তারপর ওই যাত্রীদের বোর্ডিং লক করে বাড়িতে ফেরত পাঠান। তাদের ইমিগ্রেশন সিলও বাতিল করা হয়।

বিমানের কর্মকর্তারা বলছেন, ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে ভিসা করা ওই যাত্রীদের যদি কানাডা পৌঁছে দিতো বিমান তবে তারা বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কারণ কানাডার ইমিগ্রেশনে যাওয়ার পর সেটি ধরা পড়তো। আর ধরা পড়লে অন্তত দেড় হাজার ডলার জরিমানা করা হতো। এমনকি কানাডাগামী রোডে বিমানের ফ্লাইট বন্ধ করে দেয়ার সম্ভাবনা ছিল। ঘটনার পর বিমানের একটি প্রতিনিধিদল সিলেটে গিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছে। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও সেটি সম্ভব হয়নি। তবে যাত্রীরা নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত দাবি করে বাংলাদেশ বিমানের দিকে তীর ছুড়ছেন। তারা বলছেন, তারা নির্দোষ। তাদের ভিসা, কাগজপত্র সবই বৈধ। বিমানের কর্মকর্তারা অন্যায়ভাবে তাদের সঙ্গে এটি করেছেন। এজন্য তাদের ক্ষতিপূরণ বিমানকেই দিতে হবে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজম মানবজমিনকে বলেন, বিমানের দায়িত্ব হলো যাত্রীরা ওঠার সময় কাগজপত্র পরীক্ষা করা। কাগজপত্রে সমস্যা থাকলে ভ্রমণ করার কোনো সুযোগ নাই। কানাডা ইমিগ্রেশন পর্যন্ত চলে গেলে তাদেরকে গেইট লক করা হবে। তখন বিমান এই দায়িত্ব কেন নিবে। ভুয়া কাগজপত্র থাকলে কেন আমি তাকে বিমানে তুলবো। যখনই এসব বিষয় আমাদের চোখে পড়বে তখনই আমরা ধরবো। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে যদি তারা যেতে চায় তবে আমাদের ছেড়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নাই। তিনি বলেন, বোর্ডিং পাস দেয়া পর্যন্ত আমাদের কাজ। এই মুহূর্তে যদি দেখেন কেউ অপরাধ করতে যাচ্ছে তখন তাকে থামানোই প্রধান কাজ। আমরা যদি তাদেরকে যেতে দিতাম তবে কানাডা বিমানকে বড় অঙ্কের জরিমানা করতো। এ ছাড়া আমাদের নিয়মিত সব ফ্লাইট বন্ধ করে দিতে পারতো। তাদের জন্য তো পুরো জাতি সাফার করবে না। কানাডাতে হাজার হাজার মানুষ আছে যারা বিমানের সেবা নেয়। এ সমস্ত প্রতারকের জন্য তো তাদেরকে সেবাবঞ্চিত করতে পারে না।

mzamin
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More