বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি নিয়ে আলোচনায় রাজি নয় আদানি

0

ভারতীয় ব্যবসায়ী গৌতম আদানির মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানি পাওয়ারের সঙ্গে স্বাক্ষরিত বহুল আলোচিত বিদ্যুৎ চুক্তির শর্তাবলী সংস্কারে বাংলাদেশ দাবি জানালেও তা সরাসরি নাকচ করে দিয়েছে আদানি গ্রুপ। ভারতীয় নিয়ন্ত্রকদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে আদানি পাওয়ার বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করা হচ্ছে না।

মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, গৌতম আদানির বিদ্যুৎ কোম্পানি আদানি পাওয়ারের কাছ থেকে কেনা বিদ্যুতের ওপর ছাড় চাইছে বাংলাদেশ।

স্টক এক্সচেঞ্জ ফাইলিংয়ের বরাত দিয়ে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, ‘‘গত ৩ ফেব্রুয়ারি ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ডের কাছে একটি চিঠি পাঠায় আদানি পাওয়ার। মঙ্গলবার সেই চিঠি স্টক এক্সচেঞ্জে প্রকাশ করা হয়। চিঠিতে আদানি পাওয়ার ভারতীয় ওই নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বলেছে, বাংলাদেশ লাভজনক এই বিদ্যুৎ চুক্তিতে ‘আমাদের কাছে ছাড় বিবেচনার’ অনুরোধ জানিয়েছে।’’ ২০১৭ সালে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও গত কয়েক বছর ধরে তা গোপন রাখা হয়েছিল।

ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, ১৬৩ পৃষ্ঠার গোপনীয় বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির শর্তাবলীর আওতায়, দরিদ্র এবং ভারী ঋণগ্রস্ত বাংলাদেশকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দীর্ঘদিনের মিত্র গৌতম আদানির নির্মিত একটি নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কিনতে হবে; যা সাধারণত বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য প্রদত্ত মূল্যকে ছাড়িয়ে গেছে। এই চুক্তির বিষয়ে গত ডিসেম্বরে ওয়াশিংটন পোস্ট প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল বলে জানিয়েছে।

মার্কিন এই সংবাদমাধ্যম বলেছে, এছাড়া অস্বাভাবিক শর্তের মাঝে কয়লার মূল্যসীমার বিষয়েও কোনও কিছু উল্লেখ করা হয়নি। আর গৌতম আদানি সাধারণত বিদেশে অবস্থিত তার নিজস্ব কয়লা খনি থেকে কোম্পানির নিজস্ব শিপিং নেটওয়ার্ক ও কয়লা-হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি করে থাকেন। চুক্তির শর্তে কয়লার মূল্যসীমার উল্লেখ না থাকার অর্থ— গৌতম আদানি চাইলে বাংলাদেশের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করতে পারবেন।

২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের সময় আদানির সঙ্গে ঢাকার ওই বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ওই সময় বাংলাদেশে ভারতীয় ব্যবসার প্রবেশের সুবিধার্থে ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদি।

ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশি কর্মকর্তারা আদানির সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে

তারা এই চুক্তির শর্তাবলী নিয়ে পুনরায় আলোচনার আশা করছেন। কিন্তু চলতি সপ্তাহে ভারতীয় নিয়ন্ত্রকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে আদানি পাওয়ার বলেছে, বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করা হচ্ছে না। এই বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি আদানির মুখপাত্র বর্ষা চাইনানি।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের একজন মুখপাত্রও মন্তব্যের অনুরোধে সাড়া দেননি বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন পোস্ট।

গত কয়েক বছর ধরে ধনকুবের আদানির ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে উল্কা গতিতে। তবে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক পরিসরের পাশাপাশি ভারতেও ক্রমবর্ধমান তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।

গত ২৪ জানুয়ারি মার্কিন বিনিয়োগ গবেষণা সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের ভয়াবহ জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর টালমাটাল পরিস্থিতিতে পড়েছেন ভারতীয় এই ব্যবসায়ী। গত কয়েক দিনে আদানির অন্তত সাতটি ট্রেড কোম্পানি বড় ধরনের স্টক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। এর ফলে মাত্র দুই সপ্তাহে আদানি গ্রুপ ১০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ হারিয়েছে।

যদিও আদানি গ্রুপের শীর্ষ কর্মকর্তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন, আদানিকে নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সমালোচনা ভারতের ওপর আক্রমণের সমান।

আদানি গ্রুপকে নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট গত বছর নিজেদের করা এক অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে বলেছে, আদানি পাওয়ার প্রকল্পটি নরেন্দ্র মোদি সরকারের অধীনে কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ব্যাপক কর বিরতি এবং আইনী পরিবর্তন সুবিধা পেয়েছে। এর মাধ্যমে প্রকল্পটিতে ১ বিলিয়ন ডলারের মতো অর্থ সাশ্রয় হয়েছে।

ঠিকানা

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More