বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই

0

hasinaবাংলাদেশে কতিপয় সংগঠন ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করলেও এদেশে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) কোন অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে শফিকুল ইসলাম শিমুলের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এই দাবি করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যে কোন ধরণের জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতিতে বিশ্বাস করে। যে কোন জঙ্গিবাদকে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলায় বদ্ধপরিকর। জঙ্গিবাদ মোকাবিলাসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতীয় মহাসড়ককে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সমূহের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে জেলা পুলিশ এবং হাইওয়ে পুলিশ পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করছে। নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিষয়ে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য যাচাইপূর্বক এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে।
ধার দেনা শোধের পর ডিজেলের দাম নিয়ে ভাবনা
স্বতন্ত্র সদস্য হাজী মো. সেলিমের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ভর্তুকি দেয়া ঋণ পরিশোধের পর প্রয়োজনে ডিজেলের দাম কমানো হবে। তিনি বলেন, পেট্রোল আমরা কিনি না। আমাদের গ্যাস ফিল্ড থেকে বাই প্রোডাক্ট হিসেবে যে পেট্রোল আসে সেটা আমরা রফতানি করি। ডিজেলের দাম কমানোর বিষয়টা আসছে। যখন বিশ্ব বাজারে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছিলো তখন আমরা সাবসিডি দিয়ে কম দামে ডিজেল বিক্রি করেছি। যার ফলে আমাদের পেট্রোলিয়াম করপোরেশনে হাজার হাজার কোটি টাকা লোন হয়ে গেছে। ৩৮ হাজার কোটি টাকা লোন আসে। ভ্যাট, শুল্ক বাকী। এই প্রথম আমরা কিছুটা সাশ্রয় করতে পারছি। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম বেড়েছিলো তখন কিন্তু এমপিরা কেউ এই দাবি করেননি- আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম বেড়েছে আমরাও দাম বাড়াই। বরং আমরা যদি ১ টাকা ২ টাকা বাড়িয়েছি সেটার জন্য ভাংচুর হয়েছে, স্ট্রাইক এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন যে অবস্থা আছে তাতে আমাদের পেট্রোলিয়াম করপোরেশন কিছু আয় করে ঋণ শোধ করছে। ইতিমধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা লোন শোধ করা হয়েছে। আরও লোন আমাদের শোধ করতে হবে। তারপরও ট্যাক্স রয়েছে, ভ্যাট রয়েছে আমাদের পরিশোধ করতে হবে। এখনও প্রায় ১৫/১৬ হাজার কোটি টাকা আমাদের শোধ করার অপেক্ষা। এত দিন যাবৎ ভর্তুকি দিলাম। যে লোনটা নেয়া হলো ডিজেল কেনার জন্য সেগুলো যখন পরিশোধ করা হবে তখন ধার দেনা শোধ করার পর প্রয়োজন হলে দাম কমানো হবে।
তিনি বলেন, জাপান, চায়না, ভারত থেকে শুরু করে ইউরোপিয়ান দেশগুলো দেশে বিনিয়োগ করছে। জাপান এখানে ৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে। ভারতও দিচ্ছে। চায়নার আরও বড় বড় অফার আসছে। পৃথিবীর বড় বড় দেশ বাংলাদেশে লাইন দিচ্ছে বিনিয়োগ করার জন্য। তাদের কাছে বাংলাদেশ বিনিয়োগের সবচেয়ে উচু ক্ষেত্র।
পাইপ লাইনে বাসায় গ্যাস ব্যবহার নিরুৎসাহিত
পীর ফজলুর রহমানের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাইপ লাইনে বাসা-বাড়িতে গ্যাস ব্যবহার আমরা নিরুৎসাহিত করতে চাচ্ছে সরকার। সিলিন্ডারে এলপিজি গ্যাস ব্যবহারের জন্য ট্যাক্স কমানো হয়েছে। বিভিন্ন প্রনোদনা দেয়া হচ্ছে। গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যেসব এলাকায় শিল্প স্থাপন হচ্ছে সেসব এলাকায় গ্যাস সংযোগ দেয়া হচ্ছে।
প্রবাসী সিআইপির মর্যাদা ৫ গুণ বৃদ্ধি হবে
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য সেলিনা বেগমের প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী জানান, ১৯৭৬ সাল থেকে জানুয়ারি ২০১৬ পর্যন্ত মোট ৯৭ লাখ ৬২ হাজার ৬৮৫ জন বাংলাদেশী কর্মী বিএমইটি’র ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে গমন করেছেন। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে বাংলাদেশী ৩৪ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৮ জন কর্মী বিদেশে গমন করেছেন।
শেখ হাসিনা জানান, বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীগণ প্রতি বছর বিপুল অংকের রেমিট্যান্স প্রেরণ করেন। ২০১৫ সালে মোট রেমিটেন্সের পরিমাণ প্রায় ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাঁদের এ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ প্রতি বছর সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রদানকারী নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রবাসী কর্মীকে কমার্শিয়াল ইমপট্যান্ট পারসন (সিআইপি) মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করা হয়। তিনি বলেন, বিগত ২০১৪ সালের জন্য সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রেরণকারী হিসেবে ১০ জন প্রবাসী বাংলাদেশীকে সিআইপি নির্বাচন করা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ১০ জনের স্থলে ৫০ জনকে সিআইপি মর্যাদা দেয়া হবে। সিআইপি মর্যাদা প্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাদের কার্ড ব্যবহার করে সচিবালয়ে প্রবেশ, ব্যবসায়িক ভ্রমনে বিমান, রেল ও নৌপথে আসন সংরক্ষণের সুযোগ পান। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাইলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সমান সুযোগ পান। দেশে বিদেশে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বৈঠক করতে পারেন। বিভিন্ন জাতীয় জাতীয় দিবসে বাংলাদেশ মিশনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ লাভ করেন।
প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশী কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত শ্রম উইং এর সংখ্যা ১৬ থেকে ২৮-এ উন্নীত করা হয়েছে। এছাড়াও যে সকল দেশে ১০ হাজারের বেশী বাংলাদেশী কর্মী রয়েছে, সে সকল দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে পর্যায়ক্রমে শ্রম উইং চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More