শোলাকিয়ায় যার সাহসিকতায় জঙ্গিদের ধরা সম্ভব হয়েছে (ভিডিও)

0

Sholakhiaনীল পাঞ্জাবি ও জিন্স প্যান্ট পরা এক ব্যক্তি জঙ্গিদের লক্ষ্য করে একাই গুলি ছুড়ছেন। বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট দূরে থাক, পরনে কোনো ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জামও নেই। তারপরও সবার সামনে থেকে অভিযানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের হামলা শুরুর পর পুলিশের অভিযানের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এক মিনিটের ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, জঙ্গিদের বর্বরতা মোকাবেলা করেছেন পাঞ্জাবি পরা এই পুলিশ কর্মকর্তা। নাম তার মোরশেদ জামান। তিনি কিশোরগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত)।[ads1]

অভিযানের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, তার সাহসিকতার কারণেই জঙ্গিদের ধরা সম্ভব হয়েছে। তবে তিনি কৃতিত্ব নিতে চান না। বললেন, সবার চেষ্টায় জঙ্গিদের ধরা সম্ভব হয়েছে। ঈদের জামাতে হামলা ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। তার কাছে ঘটনার শুরু থেকে জানতে চাইলে বলেন, তিনি থানাতেই ছিলেন। সকাল পৌনে ১০টার দিকে বেতারে বার্তা পান পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে। তবে কোথায় হামলা হয়েছে, তা জানতেন না।

কিছুক্ষণ পর খবর পান আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে পুলিশ চেকপোস্টে হামলা করেছে জঙ্গিরা। ছয়-সাত মিনিটের মধ্যে কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি মীর মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে সেখানে পৌঁছে যান মোরশেদ। সঙ্গী তিন পুলিশ কনস্টেবলের কাছে ছিল তিনটি চায়নিজ রাইফেল। প্রথম ১০ মিনিটে হামলায় আহত ও নিহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করেন। ততক্ষণে জঙ্গিরা সবুজবাগ আবাসিক এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে অবস্থান নিয়েছে। সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হতে পারে, তাই গুলিও করতে পারছিলেন না।[ads2]

মোরশেদ জামান জানান, সবুজবাগে প্রবেশের রাস্তাগুলো সরু। রেললাইন পেরিয়ে বড় রাস্তা থেকে নামলে খোলা একটি বাগান পেরিয়ে যেতে হয়। এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি ছিল। তিনি ও অন্য তিন পুলিশ সদস্য জঙ্গিদের ধরতে সরাসরি অভিযানে নামেন। এ ছাড়া অন্যরা ছিলেন দূরে বেকআপ টিম হিসেবে। একটি দল জঙ্গির অবস্থান থেকে ১৫-২০ গজ দূরে এক বাড়ির ছাদে অবস্থান নেয়। কনস্টেবলের কাছ থেকে চায়নিজ রাইফেল নিয়ে পাল্টা গুলি ছোড়েন মোরশেদ জামান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মোরশেদ জামান দেয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে গুলি ছুড়ছেন। অন্য পুলিশ সদস্যরা লুকিয়ে আছেন পেছনে গলির আড়ালে। তবে মোরশেদ জামান বললেন, ‘তারা আসলে লুকাননি। তাদের দায়িত্ব ছিল, আমাকে কাভার করা। যাতে আমি এগিয়ে যেতে পেরেছি। কখনও কখনও তিনিও অন্যদের কাভার করেছেন। সেগুলো ভিডিওতে নেই।’

দীর্ঘদিন পুলিশের চাকরি করলেও কখনও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়তে হয়নি মোরশেদ জামানকে। তিনি বলেন, অন্য সন্ত্রাসীরা পুলিশকে গুলি করে পালানোর জন্য, বাঁচার চেষ্টা করে। কিন্তু শোলাকিয়ায় যারা হামলা করেছে তাদের পালানোর কোনো চেষ্টাই ছিল না। তারা মরতেই এসেছিল। চেষ্টা ছিল, মরার আগে যথাসম্ভব বেশি পুলিশ সদস্য হত্যা করা। আত্মঘাতী হামলাকারীদের প্রাণের ভয় নেই। তাই তারা পুলিশের চোখে চোখ রেখেই গুলিবর্ষণ করছিল।[ads2]

তিনি জানান, গোলাগুলির এক পর্যায়ে জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। চারদিক ঘিরে ফেলে পুলিশ। তারপরও মাঝে মধ্যে গুলি করে উপস্থিতি জানান দিচ্ছিল। প্রায় এক ঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধের পর ধরাপড়া জঙ্গি শফিউল ইসলামের গুলি শেষ হয়ে যায়। নিহত জঙ্গি আবীর রহমানের পিস্তলের চেম্বারে গুলি জ্যাম হয়ে যায়। গুলি করতে না পেরে আবীর চাপাতি হাতে দৌড়ে পুলিশের দিকে তেড়ে আসে। উদ্দেশ্য ছিল আরও পুলিশকে কুপিয়ে হত্যা। পায়ে গুলি করে তাকে থামানোর চেষ্টা করে পুলিশ। গুলিবিদ্ধ হয়েও চাপাতি নেড়ে নেড়ে পুলিশের দিকে আসতে থাকে। আবীরের মৃত্যুর পর শফিউল একটি বাড়ির ঘরে ঢুকে পড়ে। তাকে সেখান থেকে আটক করা হয়।
মোরশেদ জামান বলেন, ‘গুলি খাওয়ার পরও কেউ চাপাতি নিয়ে হামলা করতে আসতে পারে, এটা আমার কল্পনাতেই ছিল না। এদের মগজ ধোলাই করা হয়েছে। আবীর গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর যতক্ষণ বেঁচে ছিল, ততক্ষণই চেষ্টা করেছে পুলিশকে আঘাত করতে।’
অপর জঙ্গি শফিউল গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ধরা পড়ে। তবে তার মধ্যে কোনো ধরনের বিকার নেই। তিনি বলেন, এদের মধ্যে কোনো রকম অনুশোচনা, ভয় দেখিনি।[ads1]
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More