দলের ভাঙন রোধে দায়িত্ব পড়েছে খালেদার কাঁধেই

0

bnpআর মাত্র সপ্তাহখানেক পর দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। এই কাউন্সিলের ওপর নির্ভর করছে দলটির ভবিষ্যৎ রাজনীতির গতিপথ। যে কোনো সময়ের চেয়ে একটি বৈরী রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যেই বিএনপিকে তাদের কাউন্সিল করতে হচ্ছে। আসন্ন কাউন্সিলের মাধ্যমে বিএনপি  চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তার দলকে নতুন করে ঢেলে সাজাবেন। দল পুনর্গঠনের পর নতুন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রাণ ফেরানোর চেষ্টা চালাবেন।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, যে কোনো সময়ের চেয়ে কমিটি গঠনে বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে। অতীতের ভুল থেকেও শিক্ষা নিয়ে দলকে সাজাতে হবে। নিতে হবে চ্যালেঞ্জ। কারণ নতুন গঠিত কমিটিকে অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে। একদিকে সরকারের চরম দমন নিপীড়ন নির্যাতন মোকাবিলা করা। অন্যদিকে মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি নতুন জাতীয় নির্বাচন আদায় করার লড়াই। নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে বিএনপিকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নাই। বিএনপির একাধিক নীতি নির্ধারক মানবকণ্ঠকে বলেন, এবার অনেক সতর্কতার সঙ্গে, যথাযথ যাছাই-বাছাই করেই নির্বাহী কমিটির পদ পদবি বণ্টন করতে হবে। যদি কমিটি গঠনে ব্যাপকভাবে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন ও অবমূল্যায়নের মতো ঘটনা ঘটে তাহলে দলের অবস্থা হিতে বিপরীতও হতে পারে। সংগঠন শক্তিশালী হওয়ার চেয়ে দুর্বল হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। পদত্যাগ ও দল ত্যাগের ঘটনাও ঘটতে পারে। আবার অনেক নিষ্ক্রিয় অথবা রাজনীতি থেকে অবসরেও চলে যেতে পারেন। এমন বাস্তবতায় দলের নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন নিয়ে চাপের মধ্যেই রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। পদ প্রত্যাশী সবাইকেই খুশি করে তাকে নিতে হবে দল পুনর্গঠনের কঠিন সিদ্ধান্ত।
একটি সূত্র জানায়, কমিটি গঠনে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের মূল্যায়ন, জ্যেষ্ঠতা বজায় রেখে তরুণ নেতাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেয়া, নানা কারণে যারা দলের মূল ধারার বাইরে রয়েছেন তাদের সম্পৃক্ত করার মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই খালেদা জিয়া কাজ করে যাচ্ছেন। সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন দলের অভ্যন্তরীণ নেতাদের নানা কর্মকাণ্ড। সবদিক বিবেচনা নিয়েই বিএনপির নতুন নির্বাহী কমিটি গঠনের খসড়া তালিকা প্রস্তুত করেছেন। গুলশান কার্যালয়ের একটি সূত্র জানায়, নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়ে নেতাদের আমলনামা বিবেচনা ছাড়াও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও  বুদ্ধিজীবীদেরও মতামত নিয়েছেন। এবার অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গেই কমিটি গঠনের কাজটি করছেন খালেদা জিয়া। দলের সাংগঠনিক কাঠামোগত পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত। যেখানে স্থায়ী কমিটির পদমর্যাদায় দলের উপদেষ্টা পরিষদ রাখা হবে। যেখানে ১৫-১৯ জন সদস্য থাকবেন। যারা গুরুত্বপূর্ণ দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে চেয়ারপার্সনকে সহযোগিতা করবেন। রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে প্রজ্ঞাবান জ্যেষ্ঠ নেতাদের সমন্বয়ে এই পরিষদ গঠিত হবে।
কাউন্সিলকে ঘিরে পদ পদবির তদবিরে চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় ও নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে। পদ প্রত্যাশী নেতারা নয়াপল্টন থেকে গুলশান ছুটে যাচ্ছেন। এমনকি পদ পদবির জন্য লন্ডনেও তদবিরে ব্যস্ত রয়েছেন কেউ কেউ। যারা এতদিন দলের কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় ছিলেন তারাও পদ পদবির আশায় জোর লবিং চালাচ্ছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহাবুবুর রহমান মানবকণ্ঠকে বলেন, যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়টা বিএনপির কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটি সময়ে দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন দেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত। মানুষের ভোটের অধিকার নেই। আমাদের প্রধান কাজ হলো দলকে সুসংগঠিত করে মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনা। আমাদের দলের নেতাকর্মীরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ জানান, একটি সফল সার্থক কাউন্সিল করার জন্য যা যা প্রয়োজন বিএনপি তা করছে। ইতিমধ্যে কাউন্সিলের ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে জনগণ একটি দিক নির্দেশনা পাবে।
২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর দলটি তাদের সর্বশেষ কাউন্সিল করেছিল। মাঝখানে কেটে গেছে সাতটি বছর। এ সময়ে নানা ঘটন অঘটনে বিএনপি বর্তমানে একটি কঠিন সময় পার করছে। রাজনৈতিকভাবেও দলটির সামনে রয়েছে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ। রাজনৈতিকভাবে কিছুদিন ধরে বিএনপি কোণঠাসা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই কাউন্সিল উপলক্ষে  বিএনপির চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দলের এই শীর্ষ পদে আবারো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বেগম খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক রহমানকে যথাক্রমে চেয়ারপার্সন ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। বিএনপির কাউন্সিলকে সামনে রেখে দলের নেতাকর্মীদের আগ্রহের নতুন জাতীয় নির্বাহী কমিটি নিয়ে। দলটির পরবর্তী মহাসচিব কে হচ্ছেন, কারা কারা জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাচ্ছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির আকার কি হবে, দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনীতে কি কি থাকছে- এসব বিষয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাইরেও সব মহলের নজর রয়েছে।
বিএনপির কাউন্সিলসহ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার ওপর এবার তীক্ষè দৃষ্টি রাখছে আর্ন্তজাতিক মহলও। বিশেষ করে পশ্চিমা প্রভাবশালী দেশগুলো বিএনপির পুনর্গঠন নিয়ে তাদের বক্তব্যও তুলে ধরেছে। বিএনপিকে ভাঙার ষড়যন্ত্রও অব্যাহত রয়েছে। এসব দিক বিবেচনায় নিয়েই বিএনপি কাউন্সিলের জন্য শেষ মুহূতের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতিমধ্যে কাউন্সিলরদের তালিকাও প্রায় প্রস্তুত। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনকেই কাউন্সিলের ভেন্যু হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওইস্থানে কাউন্সিল আয়োজনে অনুমতিও পাওয়া গেছে। কাউন্সিল উপলক্ষে গঠিত উপকমিটিগুলো তাদের নিজ নিজ কর্মকাণ্ড জোরেশোরেই সম্পন্ন করছেন। দেশে ও দেশের বাইরে প্রায় শতাধিক রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়ে গেছে। দলের গঠনতন্ত্রে প্রয়োজন সংশোধন আনতে নানা প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। কাউন্সিলের  লোগোও উন্মোচন করা হয়েছে। ‘দুর্নীতি দুঃশাসন হবে শেষ- গণতন্ত্রের বাংলাদেশ’ এই স্লোগান নিয়ে আগামী ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More