জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেছেন, আওয়ামী লীগ বা বিএনপির সঙ্গে আর নয়। বড় কোনও দলের সঙ্গে জাতীয় পার্টি প্রেম করবে না। জাতীয় পার্টির প্রেম দেশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আর বিএনপির নীতিগত অনেক অমিল আছে। অনেক ইস্যুর কারণে তারা এক টেবিলে বসতে পারে না। কিন্তু ক্ষমতায় গেলে তাদের মধ্যে চরিত্রগত কোনও অমিল নেই।’
মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয় মিলনায়তনে ‘সংবিধান সংরক্ষণ দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
চুন্নু বলেন, ‘ক্ষমতায় গিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুনীতি, দুঃশাসন, চাঁদাবাজি এবং টেন্ডারবাজি, আর দলীয়করণের মাধ্যমে দেশের শান্তি শেষ করেছে। দেশের মানুষ তাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। দুটি দলের ওপর দেশের মানুষ বিরক্ত হয়ে আছে।’
আলোচনায় চুন্নু উল্লেখ করেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গণমানুষের ওপর আস্থা, আর গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে তৎকালীন উপ-রাষ্ট্রপতি মওদুদ আহমদের স্থলে প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদকে উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিয়ে তার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। পল্লীবন্ধু সব সময় সংবিধানকে সমুন্নত রেখেছিলেন।
‘কিন্তু, বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ জাতীয় পার্টির সঙ্গে অবিচার করেছিলেন। সব রাজনৈতিক অধিকার থেকে জাতীয় পার্টিকে বঞ্চিত করেছিলেন ১৯৯১ সালের নির্বাচনে। কিন্তু দেশ ও মানুষের ভালোবাসায় সেই নির্বাচনেও জাতীয় পার্টি ৩৫টি আসনে নির্বাচিত হয়েছে। পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জেলে থেকেই ৫টি করে আসনে নির্বাচিত হয়েছিলেন।’ বলেন মুজিবুল হক।
জাপা মহাসচিব বলেন, ‘সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে এক ব্যক্তির হাতে সব ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হয়েছে। যিনি নির্বাহী বিভাগের প্রধান, তিনিই আইন সভারও প্রধান, আবার রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে বিচার বিভাগও অনেকটাই তার হাতে। বিপুল ক্ষমতা একজনের হাতে থাকলে ক্ষমতার ভারসাম্য থাকে না। আবার ভুল ত্রুটিও বেশি হয়। একজনের হাতে সব ক্ষমতা থাকলে রাষ্ট্রের কোনও ক্ষেত্রেই জবাবদিহি থাকে না।’
জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেন, ‘কোনও ষড়যন্ত্রে জাতীয় পার্টির ঐক্য নষ্ট হবে না। জাতীয় পার্টির মাঝে কেউ বিভাজন সৃষ্টি করতে পারবে না। ২০২৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ৩০০ আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাই গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা লাঙ্গল সমর্থকদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।’
সভায় আরও বক্তব্য রাখেন— প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, সৈয়দ দিদার বখত, জহিরুল ইসলাম জহির, জহিরুল আলম রুবেল, ভাইস চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান খান, জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, বেলাল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন।
উৎসঃ বাংলা ট্রিবিউন