চুক্তিতে ফাঁকফোকর
চুক্তি অনুযায়ী, যমুনা স্টারের প্রত্যেক কর্মীর মাসিক বেতন ১৭ হাজার ৬১০ টাকা। এর বাইরে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির জন্য ৫ শতাংশ সার্ভিস কমিশন, সরকার নির্ধারিত ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ আয়কর দিচ্ছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু মাল্টি ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে করা চুক্তিতে এ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সার্ভিস কমিশন, ভ্যাট ও আয়করের বিষয়টি আলাদা করে উল্লেখ নেই। এতে প্রত্যেক কর্মীর দৈনিক মজুরি ধরা হয়েছে ৬৯০ টাকা। এর মধ্যেই ভ্যাট, আয়কর ও সার্ভিস কমিশন যুক্ত আছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। ভ্যাট ও আয়কর সরকার নির্ধারিত হলেও সার্ভিস কমিশন কত শতাংশ তা চুক্তিতে উল্লেখ নেই। উত্তর সিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারাও এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি।
এই সুযোগে মাল্টি ইন্টারন্যাশনালের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা ফরিদ আহমেদ কর্মীদের কম বেতন দিচ্ছেন। বেতন নিয়ে অসন্তুষ্টি থাকায় প্রতিষ্ঠানটির মশকনিধনকর্মীরা কিছু ওয়ার্ডে সাময়িক কর্মবিরতি দিয়ে প্রতিবাদও জানিয়েছেন।
নেতার পকেটে ৪ কোটি টাকা
চুক্তি অনুযায়ী মাল্টি ইন্টারন্যাশনালের ৫৪০ কর্মীর প্রত্যেকের দৈনিক মজুরি ৬৯০ টাকা। এখান থেকে ভ্যাট (১৫ শতাংশ) ও আয়করের (২ শতাংশ) পাশাপাশি ঠিকাদারের সার্ভিস কমিশন বাবদ যদি ৫ শতাংশ কেটে রাখা হয়, একজন শ্রমিকের দিনে ৫৪৫ টাকা মজুরি পাওয়ার কথা। মাসে ৩০ দিন হিসাবে পাবেন ১৬ হাজার ৩৫০ টাকা; কিন্তু দেওয়া হচ্ছে ১০ হাজার টাকা।
অর্থাৎ ভ্যাট, আয়কর ও সার্ভিস কমিশনের বাইরেও একজন কর্মীর বেতন থেকে ঠিকাদার কেটে রাখছেন ৬ হাজার ৩৫০ টাকা। মোট ৫৪০ কর্মীর হিসেবে প্রতি মাসে এই টাকার পরিমাণ ৩৪ লাখ ২৯ হাজার টাকা, যা বছরে ৪ কোটি ১১ লাখ ৪৮ হাজার টাকা।
কে কত টাকা বেতন দিচ্ছে, তা আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। এখানে আইনগত হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকলে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করা হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মাল্টি ইন্টারন্যাশনালের একজন মশকনিধনকর্মী প্রথম আলোকে বলেন, ‘দৈনিক ৬ ঘণ্টা কাজ করি। অথচ দিনে পাই মাত্র ৩৩৪ টাকা। বড় কথা, একই সময়ে একই কাজ করে যমুনার কর্মীরা পান ৬৮৭ টাকা।’
জানতে চাইলে ফরিদ আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি ঠিক ডিটেইলস (বিস্তারিত) আপনাকে বলতে পারব না। আমার লোকজন আছে, ওরা বলতে পারবে।’
বেতন হয় না ৩ মাস
এদিকে যমুনা স্টার সেভ গার্ডের কর্মীদের বেতন আবার অনিয়মিত। কর্মীরা গত জুন, জুলাই ও আগস্টের বেতন পাননি। সর্বশেষ গত মে মাসে দুই মাসের (এপ্রিল ও মে) বেতন দেওয়া হয়েছিল।
ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৪ এর একটি ওয়ার্ডের যমুনার একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঋণ করে সংসার চলছে। কিন্তু এভাবে কত দিন আর চলা যায়?’
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. সেলিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, কর্মীদের প্রতি মাসের হাজিরার তালিকা সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়। কর্মীদের বেতন দেওয়ার ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের গাফিলতি আছে।
উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ যা বলছে
মাল্টি ইন্টারন্যাশনালের কর্মীদের বেতন থেকে এত বেশি টাকা কেটে রাখার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা উত্তর সিটির উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল গোলাম মোস্তফা সারোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর কারণ আমাকে একবার বলা হয়েছিল; আমরা সেটা মনে নেই। নতুন দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে ঠিকাদারের কমিশন কত হবে, শর্তে বিষয়টি রাখা হবে।’ যমুনা স্টারের অনিয়মিত বেতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটি কাজের বিল ঠিকমতো জমা দিতে পারে না।
সার্বিক বিষয়ে উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কে কত টাকা বেতন দিচ্ছে, তা আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। এখানে আইনগত হস্তক্ষেপের সুযোগ থাকলে অবশ্যই হস্তক্ষেপ করা হবে।’ এ ছাড়া ঠিকাদারের কাছ থেকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সুবিধা নেওয়ার সুযোগ নেই ও সেটি গ্রহণযোগ্যও নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ProthomAlo