উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল হচ্ছে

0

educationউচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিতকরণ এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বীকৃতি দিতে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠন করা হচ্ছে। পাবলিক ও প্রাইভেটসহ সব ধরনের মেডিকেল, প্রকৌশল, কৃষি, ব্যবসায়, আইনসহ সব ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান এর আওতায় আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে বাধ্যতামূলক সরকারি ‘স্বীকৃতি’ বা অ্যাক্রিডিটেশন নেয়ার বিধান রেখে এর আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, শিক্ষাবিদদের মতামত নেয়া হয়েছে। তাদের দেয়া বিভিন্ন সুপারিশ আইনে থাকবে। সরকার পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনো ধরনের পার্থক্য করতে চায় না। এজন্য সরকারি ও বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানের জন্য এই অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল কাজ করবে। মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আইনটি বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ে আছে।
দেশে বর্তমানে ৩৭টি পাবলিক ও ৯১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সিংহভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ন্যূনতম শর্ত না মেনেই সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগও রয়েছে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে। এছাড়া প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বিশ্বমানের শিক্ষা দিতে পারছে না। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় তো দূরের কথা, এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায়ও বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই।
প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী গঠিত অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল উচ্চাশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এক বছরের জন্য ‘কনফিডেন্স’ সনদ দেবে। এই সনদ নিয়ে ‘অ্যাক্রিডিটেশন’ সনদের জন্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কাউন্সিলের কাছে আবেদন করবে। অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন যাচাই-বাছাই করে পাঁচ বছরের জন্য অ্যাক্রিডিটেশন সনদ দেবে। কনফিডেন্স বা অ্যাক্রিডিটেশন সনদ ছাড়া কোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞপ্তি বা প্রসপেক্টাসে প্রতিষ্ঠানটি ‘অ্যাক্রিডিটেশনপ্রাপ্ত’ লিখতে পারবে না। অ্যাক্রিডিটেশন সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে সবার দেখার জন্য ওই সনদ অনলাইনে উন্মুক্ত রাখতে হবে। খসড়ায় বলা হয়েছে, অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত, একাডেমিক প্রোগ্রাম ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভিস্বীকৃতি এবং এই আইনের আলোকে প্রয়োজনীয় বিধি ও প্রবিধিমালা প্রস্তুত করবে। মেডিকেল, প্রকৌশল, কৃষি, ব্যবসায়, আইনসহ প্রত্যেক ডিসিপ্লিনের জন্য আলাদা অ্যাক্রিডিটেশন কমিটি গঠন করবে। এই কমিটির গঠন ও কার্যাবলি বিধি দ্বারা পরিচালিত হবে।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলে চার বছর মেয়াদে একজনকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি। আর স্বীকৃত যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদমর্যাদার তিনজন শিক্ষক এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার নিচে নয় এমন একজনকে কাউন্সিলের পূর্ণকালীন সদস্য নিয়োগ দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একজন পূর্ণকালীন সদস্য এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশন মনোনীত একজন প্রতিনিধি কাউন্সিলের অবৈতনিক সদস্য নিযুক্ত হবেন। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাসোসিয়েশন মনোনীত একজন, বাংলাদেশের বাইরের স্বীকৃত ‘কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স ও অ্যাক্রিডিটেশন সংস্থার’ একজন বিশেষজ্ঞ এবং ‘পেশাগত’ সংস্থার একজন প্রতিনিধিকেও এই কাউন্সিলের সদস্য করা হবে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান, পূর্ণকালীন ও অবৈতনিক সদস্যদের মেয়াদ হবে চার বছর। চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলের সদস্যরা দুই বারের অধিক নিয়োগ পাবেন না।
উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ফিসহ ‘কনফিডেন্স’ সনদের জন্য নির্ধারিত ফরমে কাউন্সিলে আবেদন করবে। কাউন্সিল ইস্যুকৃত কনফিডেন্স সনদ এক বছর পর্যন্ত বৈধ থাকবে। এ সময়ের মধ্যে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অ্যাক্রিডিটেশন সনদের জন্য কাউন্সিলে আবেদন করতে হবে। কাউন্সিল ‘কনফিডেন্স’ সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঁচ বছরের জন্য অ্যাক্রিডিটেশন সনদ দেবে। আইন অনুযায়ী, অ্যাক্রিডিটেশন সনদপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান অ্যাক্রিডিটেশন সনদের শর্ত লঙ্ঘন করলে এই সনদ প্রত্যাহার করতে পারবে কাউন্সিল। এছাড়া অ্যাক্রিডিটেশন সনদপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান দোষী প্রমাণিত হলে প্রস্তাবিত আইনে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সৈয়দ রাশিদুল হাসান মানবকণ্ঠকে বলেন, উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিতকরণে এই সংস্থা গঠনের উদ্যোগটি ভালো। এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More