ইত্যাদি এবার ফরিদপুরে

0

ettadiটেলিভিশন অনুষ্ঠানকে স্টুডিওর চার দেয়ালের বাইরে নিয়ে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, ভূতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক বৈচিত্র্য এবং পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা স্থানগুলোতে গিয়ে ইত্যাদির মূল অনুষ্ঠান ধারণ করা হচ্ছে দীর্ঘদিন থেকেই। তুলে ধরা হচ্ছে সেই সব স্থানের কৃষ্টি, সংস্কৃতিসহ গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য। উদ্দেশ্য নিজেকে জানা ও শেকড়ের অনুসন্ধান। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের ইত্যাদি ধারণ করা হয়েছে ফরিদপুরে। এবারের অনুষ্ঠানটি ফরিদপুরে ধারণ করার কারণ হচ্ছে- আমাদের পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের জন্মস্থান ফরিদপুর এবং এই জানুয়ারি মাসেই তার জন্ম হয়েছিল। তাই জানুয়ারি মাসে প্রচারিতব্য এই অনুষ্ঠানটি পল্লীকবির স্মরণে ফরিদপুরের কুমার নদীর তীরে তার পৈতৃক বাড়ির সামনে ধারণ করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিলেন। ‘ইত্যাদি’র ধারণ উপলক্ষে ফরিদপুরে ছিল উৎসবের আমেজ। আমন্ত্রিত দর্শক ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের মধ্যেও আশপাশের রাস্তায়, বিভিন্ন গাছের ওপর, নৌকার ওপর বসে, নদীর পাড়ে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে ‘ইত্যাদি’র ধারণ উপভোগ করেন। ইত্যাদির ধারণ উপলক্ষে সে দিন বর্ণিল আলো এবং পল্লীকবির বিভিন্ন অমর সৃষ্টি- ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’, ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ আর বিভিন্ন কবিতা দিয়ে সাজানো দৃষ্টিনন্দন মঞ্চে ইত্যাদির ধারণ অনুষ্ঠান চলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত। এই দীর্ঘ সময়ে দর্শকরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেছেন ইত্যাদির নান্দনিক সব পর্ব। এবারের ‘ইত্যাদি’তে মূল গান রয়েছে একটি। উল্লেখ্য ‘ইত্যাদি’তে সবসময় ভিন্ন আঙ্গিকে গান প্রচার করার চেষ্টা করা হয়। এ জন্য ‘ইত্যাদি’তে অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক, লোকসঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গানকে প্রাধান্য দেয়া হয়। আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির মূল হচ্ছে আমাদের পল্লীসঙ্গীত। পল্লীকবির নিজের রচিত এবং সংগৃহীত গানের রয়েছে এক বিশাল ভাণ্ডার। পল্লীকবি রচিত বিপুল জনপ্রিয় একটি গান গেয়েছেন এই প্রজন্মের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী পান্থ কানাই। টিভি পর্দায় সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে যার প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল ‘ইত্যাদি’র মাধ্যমেই। এ ছাড়া পল্লীকবির অত্যন্ত জনপ্রিয় তিনটি গানের অংশবিশেষের সমন্বয়ে তৈরি একটি গানের সাথে স্থানীয় প্রায় শতাধিক নৃত্যশিল্পীর অংশগ্রহণে রয়েছে একটি জমজমাট নৃত্য। নৃত্য পরিচালনা করেছেন মো: বেলায়েত হোসেন ও হাসিবুজ্জামান। দু’টো গানেরই সঙ্গীতায়োজন করেছেন মেহেদী।
দর্শক পর্বের নিয়ম অনুযায়ী যেই স্থানে ইত্যাদি ধারণ করা হয় সেই স্থানকে ঘিরে দর্শকদের বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয় এবং সঠিক উত্তরদাতাদের দিয়ে করা হয় দ্বিতীয় পর্ব। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফরিদপুর এবং পল্লীকবিকে ঘিরে করা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে উপস্থিত হাজার হাজার দর্শকের মাঝখান থেকে চারজন দর্শক নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিত দর্শকদের নিয়ে করা হয়েছে দ্বিতীয় পর্ব। এই পর্বে পল্লীকবির কয়েকটি জনপ্রিয় গান নিয়ে নির্বাচিত দর্শকদের সাথে অংশগ্রহণ করেছেন ফরিদপুরেরই সন্তান, বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীর এবং লোকসঙ্গীতের অন্যতম পুরোধা মরমি শিল্পী আব্দুল আলীমের জ্যেষ্ঠ সন্তান বিশিষ্ট পল্লীগীতি শিল্পী জহির আলীম।
নিয়মিত পর্ব হিসেবে এবারও রয়েছে যথারীতি মামা-ভাগ্নে, নানী-নাতি ও চিঠিপত্র বিভাগ। রয়েছে বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনা নিয়ে বেশ কিছু সরস অথচ তীক্ষè নাট্যাংশ। একটি সেমিনার ও কিছু প্রশ্ন, ভীনদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন ও আমাদের করণীয়, চৈত্র মাসের গল্প পৌষ মাসে, নতুন বছরের প্রতিক্রিয়া, প্রকাশের জন্য বইয়ের বিষয় নির্বাচন, ধনীর খাবার বনাম গরিবের খাবার ও বাস্তবতা, কাজের বুয়া ও গৃহকর্ত্রীর কৃতিত্বসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর রয়েছে বেশ কয়েকটি নাট্যাংশ। বরাবরের মতো এবারও ইত্যাদির শিল্প নির্দেশনা ও মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ইত্যাদির নিয়মিত শিল্প নির্দেশক মুকিমুল আনোয়ার মুকিম। সব শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রিয় অনুষ্ঠান ইত্যাদির আগামী পর্ব একযোগে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ডে প্রচারিত হবে ২৯ জানুয়ারি, শুক্রবার রাত ৮ টার বাংলা সংবাদের পর। ইত্যাদির রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত। নির্মাণ করেছে ফাগুন অডিও ভিশন। ইত্যাদি স্পন্সর করেছে যথারীতি কেয়া কসমেটিকস্ লিমিটেড।

Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More