‘ভাল সাংবাদিক হতে ভাল মানুষ হতে হবে’

0
gomejjরেডিওতে চিঠিপত্র লেখার মধ্য দিয়ে শুরু হয় লেখালেখি। এরপরে স্থানীয়ভাবে সাপ্তাহিক, জাতীয় দৈনিকে মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন। এক সময় লেখালেখিটা পরিণত হয় নেশায়। আর এই নেশাই একদিন পরিণত হয় পেশায়। পুরোপুরিভাবে জড়িয়ে পড়েন মিডিয়ায়। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন জাতীয় মিডিয়া সফলতার সাথে কাজ করে আসছেন। তিনি হলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সিনিয়র রিপোর্টার খায়রুজ্জামান কামাল। তিনি পাবনা জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি, মানবাধিকার সাংবাদিক ফোরামের মহাসচিব, অ্যাডভোক্যাসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন চিল্ড্রেনস অ্যান্ড ওম্যানস প্রজেক্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রজেক্ট ডিরেক্টর (অ্যাপিডি), এক্স-ট্রেজারার বাংলাদেশ ফেডারেল ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টস (বিএফউজে)।
[ads1]
বিবার্তা: মিডিয়ায় জড়ালেন কিভাবে?
খায়রুজ্জামান কামাল: পাবনা জেলা বেড়া উপজেলায় নগরবাড়ি ঘাট সংলগ্ন যমুনা নদীর তীরবর্তী গ্রামে আমার জন্ম। এখানেই কাটে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের সোনালি দিনগুলি। নগরবাড়ি ঘাটে নাটিবাড়ি হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকে বাংলাদেশ রেডিওতে বিভিন্ন বিভাগের অনুষ্ঠানে নিয়মিত চিঠিপত্র লেখালেখি শুরু করি। এর পরে সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকায় বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করি। বলতে গেলে মিডিয়ায় জড়ানোর শুরুটা এভাবেই। পরে ১৯৭৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা পাস করে যখন পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে ভর্তি হই তখন পাবনা সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সাথে জড়িয়ে যাই। পাবনার ‘বিবৃতি’ নামের দৈনিক পত্রিকাটি তখন ছিল সাপ্তাহিক। এটির সাথে জড়িত হই। নগরবাড়ি ‘দৈনিক গণকণ্ঠে’র মফস্বল সংবাদদাতা হিসেবে বেশ কিছু দিন দায়িত্ব পালন করি। এভাবেই লেখালেখিটা আমার নেশায় পরিণত হয়। আর এই নেশাই একদিন পরিণত হয় পেশায়। পুরোপুরিভাবে জড়িয়ে পড়ি মিডিয়ায়।
বিবার্তা: সম্প্রতি গুগলের এক রিসার্চে দেখো গেছে ৯০ শতাংশ পাঠক নিউজ দেখার জন্য ইন্টারনেটে যায়। এ ক্ষেত্রে অনলাইন মিডিয়ার ভবিষ্যৎ কেমন দেখছেন?
খায়রুজ্জামান কামাল: অনলাইন মিডিয়াকে আমরা বলি- নিউ মিডিয়া টেকনোলজি। এরই একটা অংশ হলো অনলাইন মিডিয়া।আমি দীর্ঘদিন প্যানোস সাউথ এশিয়ার সাথে জড়িত। প্যানোস বেসিক্যালি নিউ মিডিয়া টেকনোলজি নিয়ে কাজ করে। এক্ষেত্রে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলবো, বিশ্বায়নের ফলে গোটা বিশ্বটা এখন হাতের মুঠোয়। তথ্য, প্রযুক্তি ও যোগাযোগ এই তিনটা মিলে বর্তমান যুগকে বলা হয় তথ্যপ্রযুক্তির যুগ।[ads2]
মুদ্রণ মাধ্যম হিসেবে সংবাদপত্রে একটা মূল্যবোধ কাজ করে। এর সাথে ইতিহাস, ডকুমেন্ট জড়িত। পাশাপাশি ইলেকট্রনিক মিডিয়া টেলিভিশন আরেকটি অংশ। এর মূধ্যবোধও আলাদা কাজ করে। এর পাশাপাশি নতুন করে যে মিডিয়াটি ডেভলাপ করেছে সেটা হলো অনলাইন মিডিয়া। একটা সময় বংলাদেশে বা বিশ্বে নিউজ এজেন্সি ছিল। বাংলাদেশে ছিল বিএসএস, ইউএনবির মতো অনেক নিউজ এজেন্সি। পরবর্তীকালে প্রযুক্তির উন্নতির সুবাদে যখন ইমেইল, ইন্টারনেট ডেভলাপ করে, তখন ইন্টারনেটনির্ভর নিউজ এজেন্সি শুরু হয়। যখন ওয়েবসাইট আসলো তখন শুরু হয় অনলাইন মিডিয়া।যখন ওয়েবে বা অনলাইনে নিউজ আপলোড করা শুরু হয় তখন এটাকে বলা হয় অনলাইন নিউজপোর্টাল। এরপরে দেশের জাতীয় দৈনিক সংবাদপত্রগুলো দিনের নিউজ দিনে আপলোড করতে অনলাইন সংস্করণ শুরু করে। এভাবেই শুরু হয় অনলাইন নিউজপোর্টালের যাত্রা।বর্তমানে প্রতি মুহূর্তে কোথায় কি হচ্ছে তা প্রতি মুহূর্তে তা জানা যায় এই অনলাইন মিডিয়ার মাধ্যমে।
বিশ্বায়নের যুগে সারা বিশ্বে এর জনপ্রিয়তা অনেক। আর প্রযুক্তির যুগে এর সম্ভাবনা অনেক বেশি সুদূরপ্রসারী। আগামীতে আরো ব্যাপকভাবে এটার ব্যবহার করা হবে। এজন্যই আগামীতে এর পাঠক বাড়বে, গুরুত্ব বাড়বে, প্রভাব বাড়বে।
বিবার্তা: তথ্যপ্রযুক্তির যুগে ব্যস্ত মানুষ মোবাইলে ইন্টারনেটেই সব খবর দেখে নেয়। এতে দেশের সংবাদপত্রশিল্প কি হুমকিতে পড়ছে?
খায়রুজ্জামান কামাল: আমি মনে করি না যে অনলাইন মিডিয়ার জন্য প্রিন্ট মিডিয়া হুমকিতে পড়ছে। কারণ প্রিণ্ট মিডিয়ার গুরুত্ব একটা আর অনলাইন মিডিয়ার গুরুত্ব আলাদা।
সমাজের বড় একটা অংশ আছেন, যারা প্রতিদিন নিয়মিত সংবাদপত্র পড়েন। তারা সম্পাদকীয়, ফিচার, অনুসন্ধানী প্রতিবেদন, আর্টিক্যাল, বিজ্ঞাপন বিস্তারিতভাবে পড়েন। বিশেষ বিশেষ সংখ্যা পড়েন। সংবাদপত্রের কিছু নিজস্বতা আছে, যা অনলাইনে পাওয়া যায় না। যেমন সংবাদপত্র ডকমেন্ট হিসেবে থেকে যায়। হাতে নিয়ে কোন কিছু পড়ার মজাই আলাদা। এসবের জন্য পাঠকরা অতৃপ্ত থেকে যায়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে কোন নিউজ দেখার জন্য; সেই নিউজে কে কি মন্তব্য করেছে তা দেখার জন্য অনলাইনের বিকল্প নেই। মুদ্রণমাধ্যমে এর সুযোগ নেই।
তবে মুদ্রণ মাধ্যমের গুরুত্ব কমবে না। যে জিনিসটা হবে তা হলো- দেশের প্রথম সারিরজনপ্রিয় সংবাদপত্র যেগুলো সংবাদপত্র হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছে সেগুলো টিকে থাকবে। আর ছোট খাটো সংবাদপত্রগুলো টিকে থাকতে নাও পারে।
[ads1]

বিবার্তা: বংলাদেশের অনলাইন মিডিয়ার সংখ্যা অনেক। এসব মিডিয়ায় জনবলের প্রশিক্ষণ তেমন নেই। একজন সাংবাদিক হিসেবে বিষয়টাকে কিভাবে দেখছেন?
খায়রুজ্জামান কামাল: আমি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে তিনটা অনলাইন মিডিয়ায় নিউজ এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে এসেছি।তিনটা অনলাইন নিউজ মিডিয়া হাউসের অভিজ্ঞতায় আলোকে আমি বলবো, একজন অনলাইন মিডিয়ার জার্নালিস্ট হিসেবে তার যে যোগ্যাতা দরকার এ ধরনের লোকজনের সংখ্যা খুবই কম।
তবে যেহেতু বাংলাদেশের অনলাইন নিউজপোর্টালের কোনো নীতিমালা নেই, তাই দেশে ব্যাঙের ছাতার মতো অনলাইন নিউজপোর্টাল বাড়ছে। এসব নিউজ পোর্টাল হাউসগুলো দক্ষ লোকের প্রয়োজনও মনে করে না। মাত্র কয়েকটা ভাল নিউজ পোর্টাল যেমন-বিডিনিউজ, বাংলানিউজ, রাইজিংবিডি, বাংলামেইলসহ কয়েকটি হাউজে দক্ষ লোকবল রয়েছে। তাছাড়া শুধু অলাইন নিউজপোর্টালের জন্য দক্ষতা বৃদ্ধির কোন উদ্যোগ আমার চোখে পড়েনি। সরকারিভাবে এ রকম প্রশিক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেই। আর বেসরকারিভাবে আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে সরকারিভাবে অনলাইন সংবাদকর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।
বিবার্তা: অনলাইন বিকাশে সরকার নীতিমালা করেছেন। প্রিন্টমিডিয়ার সাথে অনলাইন নীতিমালার বিরোধ রয়েছে কিনা?
খায়রুজ্জামান কামাল: বর্তমানে বাংলাদেশে কোনো মিডিয়ারই সুনির্দিষ্ট নীতিমালা নেই। ১৯৭৪ সালে প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনের উপর ভিত্তি করে একটা নীতিমালা করা হয়েছিল। তখন ওই নীতিমালা অনুসারে সংবাদপত্রগুলোর ডিক্লারেশন বের করা ও মিডিয়াভুক্ত করা হতো। এরপরে ২০০৬ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার এর ভেতর শ্রমআইন ঢুকে যাওয়ার কারণে সেটা আর কার্যকর নেই। কিন্তু প্রিন্ট মিডিয়া বা অনলাইন মিডিয়ার জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। গত বছরে অনলাইনের জন্য সরকারের তথ্যমন্ত্রণালয় একটা খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে। এখনো সেটা চূড়ান্ত হয়নি। এছাড়া সম্প্রচার মিডিয়ার জন্যও একটা খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে। সেটাও চূড়ান্ত করা হয়নি। আমার মতে, প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার জন্য পৃথক কোনো নীতিমালা না করে একটা সার্বজনীন নীতিমালা তৈরি করা দরকার। যেটা অনুসরণ করবে সব মিডিয়া। তাই যেহেতু কার্যকরভাবে কোনো নীতিমালা নেই তাই বিরোধেরও কোনো বিষয় আসে না।
বিবার্তা: নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?
খায়রুজ্জামান কামাল: সাংবাদিকতায় যারা আসতে চায় তাদেরকে আমি বলবো যে সাংবাদিকতা একটা চ্যালেঞ্জিং পেশা। একজন সাংবাদিককে প্রতিদিনই সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। আর সাংবাদিকতা হলো গুরুমুখী বিদ্যা। শুধু প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ডিগ্রি নিয়ে এসে চাকরি করলেই সাংবাদিক হওয়া যায় না। সাংবাদিকতার মৌলিক বিষয়গুলো একজন ভাল গুরুর কাছে হাতে কলমে শিখতে হবে। আমার মতে, যারা নবীন হিসেবে কোন হাউসে কাজ করতে চায় তারা প্রথমে সিনিয়দের অনুসরণ করুক। তারা কিভাবে কি করে তা দেখুক। সিনিয়রদের চলাফেরা, কথাবার্তা, আচার আচরণ সবই আয়ত্ত করুক। এই পেশায় এসেই বড় সাংবাদিক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কাজ করতে হলে জানা ও শেখার কোনো বিকল্প নেই। একজন সাংবাদিক যখন কোনো অ্যাসাইনমেন্টে যান, তখন তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠানকে উপস্থাপন করেন। তার কথাবার্তা, আচার-ব্যবহার দিয়ে সবার সামনে তার প্রতিষ্ঠানকে তুলে ধরে। তাই নতুনদের বলবো যারা সাংবাদিকতায় মডেল, সিনিয়র তাদেরকে অনুসরণ করতে হবে। সব চেয়ে বড় কথা হলো- একজন ভাল সাংবাদিক হতে হলে প্রথমে তাকে একজন ভাল মানুষ হতে হবে। সাংবাদিকের মধ্যে একজন আদর্শ মানুষের গুণাবলী না থাকলে ভাল সাংবাদিক হওয়া সম্ভব না।[ads1][ads2]
সূত্রঃ বিবার্তা
Leave A Reply

Your email address will not be published.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More